ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রস্তুতি থেমে নেই বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ পেছানোর সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৪ জানুয়ারি ২০১৫

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ পেছানোর সম্ভাবনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ পিছিয়ে যেতে পারে বহুল আলোচিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টের খেলা। সেটা হতে পারে ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত। কেননা এখনও পঞ্চম বিদেশী দল চূড়ান্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। তবে পেছালেও বঙ্গবন্ধু কাপ ৩১ জানুয়ারির মধ্যেই শেষ করতে বদ্ধপরিকর বাফুফে। টুর্নামেন্টের পৃষ্ঠপোষক চ্যানেল নাইন ইতোমধ্যেই চুক্তি অনুযায়ী বাফুফেকে প্রথম কিস্তির টাকা দিয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির টাকাও ২/৩ দিনের মধ্যেই বাফুফে পেয়ে যাবে বলে জানা গেছে। বঙ্গবন্ধু কাপের জন্য চারটি দল নিশ্চিত হয়েছে আগেই। দলগুলো হলোÑ সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, বাহরাইন, মালয়েশিয়া। আর বাংলাদেশ হচ্ছে স্বাগতিক দল। বাফুফের একটি সূত্রে জানা গেছে, বাহরাইন দলের অংশ নেয়ার ব্যাপারে একটু অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কেননা, ওই সময় (১৬-২৭ জানুয়ারি) রিজিওনাল অলিম্পিক সংক্রান্ত একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার কারণে তাদের জাতীয় দল ব্যস্ত থাকবে। ফলে ওই সময়ে তারা বাংলাদেশে আসতে পারবে না। এ জন্য তারা একটি ক্লাব দল পাঠাতে আগ্রহী। কিন্তু বাফুফে এতে রাজি হয়নি। তারা চাইছে বাহরাইন যেন অন্তত তাদের অলিম্পিক দল পাঠায়। এ ব্যাপারে এখনও বাহরাইন ফুটবল ফেডারেশন কোন সম্মতি দেয়নি। আগামী ৯ জানুয়ারি এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) একটি কংগ্রেস অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে। এতে অংশ নেবে এশিয়ার ৪৭ দেশের ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতিরা। থাকবেন বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনও। ওই মিটিংয়ে সালাউদ্দিন বঙ্গবন্ধু কাপে অংশ নেয়া দেশগুলোর প্রতিনিধিদের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করবেন। সেখান থেকেই মোটামুটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে টুর্নামেন্টের সূচীসহ সবকিছু। দেশে ফিরে ১২ জানুয়ারি মিডিয়াকে সবকিছু জানাবেন সালাউদ্দিন। কংগ্রেস অধিবেশনে সালাউদ্দিন সফলভাবেই তাঁর কাজ শেষ করতে পারবেন বলে আশা করছেন বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ। টুর্নামেন্ট কদিন পেছালেও আমন্ত্রিত বাকি ৪ দেশের কোন সমস্যা হবে না বলেই আশা প্রকাশ করছে বাফুফে। তবে টুর্নামেন্ট পেছালে বাংলাদেশে খেলতে আসতে আপত্তি করতে পারে সিঙ্গাপুরÑ এমন আশঙ্কাও করছে বাফুফে। কেননা, ওই সময় নিজেদের ঘরোয়া লীগ শুরু হয়ে যাবে তাদের। টেকনিক্যাল কারণে টুর্নামেন্ট পেছালেও তবে এখন পর্যন্ত আগামী ১৬ জানুয়ারিই টুর্নামেন্ট হবেÑ এটা টার্গেট করেই এগুচ্ছে দেশীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা বাফুফে। এই ছয় নম্বর দলটির জন্য ইতোমধ্যেই আসিয়ান অঞ্চলের ২টি, সাফ অঞ্চলের ২টি এবং মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের ১টি দেশকে বাফুফে ইতোমধ্যেই আমন্ত্রণ জানিয়েছে বলে জানান সোহাগ। বঙ্গবন্ধু কাপের জন্য এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয় ঢাকা ও সিলেটের ভেন্যু। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে এবং বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট থাকলেও পর্যাপ্ত আলোর অভাব। এ বিষয়ে অবশ্য দ্রুত কাজ করে যাচ্ছে বাফুফে। মাঠের সংস্কার কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে বাফুফের একটি প্রতিনিধি দল স্টেডিয়ামগুলোতে পরিদর্শ করেছে। জানা গেছে, ভেন্যুর সংস্কারের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। সিলেট স্টেডিয়ামের ক্রিকেট পিচ ইতোমধ্যেই তুলে ফেলা হয়েছে। আবু নাইম সোহাগ বলেন, মাঠগুলো যেহেতু এনএসসির, সেহেতু মাঠ ঠিক করার ব্যাপারে তাদেরও কিছু দায়িত্ব পালন করা উচিত।’ উল্লেখ্য, দুই স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটের কম আলো বিষয়ক সমস্যা সমাধানের জন্য এনএসসি প্রয়োজনীয় অর্থ চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। সেই টাকা এখনও দেয়নি মন্ত্রণালয়। তবে আশ্বাস দিয়েছে পুরোমাত্রায়। তারা বলেছে, যথাসময়ে ফ্লাডলাইট মেরামত হয়ে যাবে। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের কাজও এগিয়েছে অনেকদূর। এ প্রসঙ্গে ঢাকায় অবস্থানরত সিলেট জেলা ফুটবল এ্যাসোশিয়েশনের (ডিএফএ) সভাপতি মাহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম বলেন, ‘মাঠের কাজ চলছে। পিচ তুলে সেখানে নতুন ঘাস লাগিয়েছি। পুরো মাঠে প্রায় ৬ ইঞ্চি করে পলিমাটি দিয়ে তার ওপর ঘাস লাগানো হয়েছে। খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুম নিয়েও কোন সমস্যা নেই। আমাদের ড্রেসিংরুম মানসম্পন্ন। ক্রিকেট বোর্ড এটি করে দিয়েছিল। ভিআইপি গ্যালারি সংস্কার করা হচ্ছে। ভিআইপি গ্যালারি হবে ৫০ আসনের। সেখানে আমাদের ২৫ জন এবং ফিফার জন্য ২৫ জন বসবে। এখন শুধু বাকি ফ্লাডলাইটের কাজ। আমাদের যে ফ্লাডলাইটের আলো আছে সেটি ৬০০ লাক্স, কিন্তু ফুটবল ম্যাচ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে প্রয়োজন ১২০০ লাক্স সেটি নিয়েই কাজ চলছে।’ প্রথমে ফ্লাডলাইট এবং স্টেডিয়াম সংস্কার খাতে প্রায় দুই কোটি টাকার মতো বাজেট ধরা হলেও এখন সেটি কমিয়ে প্রায় ১ কোটির মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে বলে একটি সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাংলাদেশ-নেপালের প্রীতি ম্যাচে স্টেডিয়ামের গেট ভেঙ্গে দর্শক ভেতরে ঢুকে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে যাতে দর্শকরা সে রকম কিছু করতে না পারে তার জন্য কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে? সেলিম বলেন, ‘সিলেট জেলা স্টেডিয়াম প্রায় ২০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন। আমরা ঠিক ২০ হাজার টিকেটই ছাড়ব প্রতি ম্যাচের জন্য। এছাড়া খেলা শুরুর আগে স্টেডিয়ামের আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। সে জন্য আমরা র‌্যাব-পুলিশের সহায়তা নেব। প্রয়োজনে স্টেডিয়ামের আশপাশের বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হবে খেলার আগে।’ টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে একমাত্র বাহরাইন বাদে বাকি সব দেশই তাদের জাতীয় দল পাঠাবে। দুই ভেন্যুতে মোট ম্যাচ হবে ৯টি (ঢাকায় ৫ ও সিলেটে ৪)। আমন্ত্রিত দলগুলো ঢাকা এসে পড়বে ১৪ জানুয়ারির মধ্যেই। তাদের কাছে ইতোমধ্যেই বাফুফে বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছে- তাদের দলবহর হবে ৩০ জনের (২৩ খেলোয়াড় এবং ৭ অফিসিয়াল)। চাহিদা অনুযায়ী ইতোমধ্যেই বাহরাইন ও সিঙ্গাপুরের কাছে টুর্নামেন্টের বাইলজের খসড়া পাঠিয়ে দিয়েছে বাফুফে। এছাড়া ঢাকায় দলগুলোর অনুশীলনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে চারটি মাঠ চেয়েছে বাফুফে। এর মধ্যে ২টিতে অনুশীলন হবে এবং একটি প্রস্তুত বা বিকল্প প্র্যাকটিস ভেন্যু হিসেবে থাকবে। এগুলো হলো- বনানী আর্মি স্টেডিয়াম, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় মাঠ এবং শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেডের নিজস্ব মাঠ। পক্ষান্তরে সিলেট ভেন্যুতে সিলেট ফুটবল একাডেমিসহ মোট ৩টি অনুশীলন মাঠ নেয়ার পরিকল্পনা করছে বাফুফে।
×