ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

* দাবি নতুন জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্তি ;###;* বিভিন্ন সংগঠনের পৃথক কর্মসূচী

বেসরকারী শিক্ষক কর্মচারীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন আন্দোলনের

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৪ জানুয়ারি ২০১৫

বেসরকারী শিক্ষক কর্মচারীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন আন্দোলনের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে নতুন জাতীয় বেতন স্কেলে শর্তহীন অন্তর্ভুক্তির দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা। বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন দাবি আদায়ে কর্মসূচীর ডাক দিয়েছে। শিক্ষক নেতারা দাবি বাস্তবায়নের কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়ে বলেছেন নতুন জাতীয় বেতন স্কেল নিয়ে বেতন ও চাকরি কমিশনের সুপারিশে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন ছয় মাস পর থেকে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান যে দিন থেকে সরকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা নতুন জাতীয় স্কেলে বেতন পাবেন সে দিন থেকেই বেসরকারী শিক্ষক-কর্মকর্তাদেরও তা দিতে হবে। শিক্ষক সমাজ রাজপথে নামতে চান না। শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইফনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আগের মতো বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে একযোগে পে-স্কেলে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক, সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার, বেসরকারী কারিগরি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান আলম সাজু, মোঃ আবুল কাশেম, অধ্যক্ষ মোখছেদুর রহমান, অধ্যাপক আজিজুর রহমান, অধ্যক্ষ সলিমউল্লাহ, কাওসার আহমেদ, মিজানুর রহমান, মনি হাওলাদার প্রমুখ। শিক্ষক নেতারা বলেন, বর্তমান শিক্ষাবান্ধব শেখ হাসিনা সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণœ করার জন্য বেসরকারী শিক্ষকদের পে-স্কেল প্রদান ছয় মাস পর থেকে কার্যকর করার সুপারিশ করা হয়। এ প্রস্তাব দেশের এমপিওভুক্তি পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীকে ব্যথিত করে। শেখ হাসিনা সরকারই ৯৭ সালে বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্তি করেছিল। শিক্ষক নেতারা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে দাবি আদায়ে কর্মসূচীর ডাক দেয়া হয়েছে। আগামী ১৯ জানুয়ারি সারাদেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এবং ২২ জানুয়ারি সারাদেশে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করবে সংগঠনটি। এদিকে একই সঙ্গে বেসরকারী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নতুন জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকরসহ ২১ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন কর্মসূচীর ডাক দিয়েছে বেসরকারী স্কুল, কলেজ ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের ১১টি সংগঠনের জোট শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট। জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা এসব দাবি তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক কাজী ফারুক আহমেদ, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও অবসর সুবিধা বোর্ডের সচিব অধ্যক্ষ আসাদুল হক প্রমুখ। কাজী ফারুক আহমেদ বলেছেন, সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান যেদিন থেকে সরকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা নতুন জাতীয় বেতন স্কেলে বেতন পাবেন সেদিন থেকেই বেসরকারী শিক্ষক-কর্মকর্তাদেরও তা দিতে হবে। নতুন জাতীয় বেতন স্কেল নিয়ে বেতন ও চাকরি কমিশনের সুপারিশে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন ছয় মাস পর থেকে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র অধিদফতর প্রতিষ্ঠা, স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের চাকরিবিধি হালনাগাদকরণ, প্রাথমিক স্তর অষ্টম শ্রেণীতে আর মাধ্যমিক স্তর দ্বাদশ শ্রেণীতে সম্প্রসারণ করতে বিশেষ অন্তর্বর্তী কর্মসূচী নেয়াসহ ২১ দফা দাবি তুলে ধরেন কাজী ফারুক আহমেদ। এসব দাবি আদায়ে আগামী ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান এবং ৮ জানুয়ারি প্রতি জেলা সদরে সংবাদ সম্মেলন করবে সংগঠনটি। এছাড়া ১৫ জানুয়ারি ফ্রন্টের জেলা কমিটিগুলো জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচিও রয়েছে। নিঃশর্তভাবে বেসরকারী স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের নতুন জাতীয় পে-স্কেলে অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট বরিশাল আঞ্চলিক শাখা। শনিবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর ফজলুল হক এভিনিউ সংগঠনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন ফ্রন্টের বিভাগীয় আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মহসিন-উল ইসলাম হাবুল। এ সময় তিনি গত ২৮ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত দুই মাসব্যাপী ঘোষিত কর্মসূচীর প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেন এবং বরিশালে মাসব্যাপী কর্মসূচী ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মোঃ রিয়াজ উদ্দিন এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, বে-সরকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা বিগত দিনে ঘোষিত সবক’টি জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জাতীয় বেতন স্কেল থেকে বঞ্চিত করা হলে বর্তমান সরকারের জন্য তা মারাত্মক আত্মঘাতী ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে। এদিকে পে-স্কেলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে লাগাতার শিক্ষক ধর্মঘটেরও হুমকি দিয়েছে বিএনপিপন্থী শিক্ষক সংগঠন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটও। সংগঠনের নেতারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাবি আদায়ে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ মোঃ সেলিম ভূইয়া ও মুগীছ উদ্দিন মাহমুদসহ শীর্ষ নেতারা। তারা বলেছেন, পে-স্কেলে অন্তর্ভুক্ত না করলে কঠোর আন্দোলন করা হবে। পে-স্কেল নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কানামাছি খেলছে। বাস্তবে পে-কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন ও অর্থায়ন করবে অর্থ মন্ত্রণালয়।
×