ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পকলায় কালিদাস কর্মকারের ‘পাললিক প্রত্যাবর্তন’ প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৪ জানুয়ারি ২০১৫

শিল্পকলায় কালিদাস কর্মকারের ‘পাললিক প্রত্যাবর্তন’ প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্র্টার ॥ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী কালিদাস কর্মকার। সৃজনের বিচিত্র ভুবনে প্রতিনিয়ত ধারণ করে চলেছেন নিজ জন্মভূমিকে। পাশাপাশি এই চিত্রকরের ছবিতে বর্তমান সময়ের সঙ্গে মূর্ত হয়ে ওঠে মানবীয় অভিজ্ঞতার আন্তঃসম্পর্ক। এ ভূখণ্ডের যাপিত জীবন, নানা ধর্মের সমন্বয়, লোকশিল্পের নানা প্রতীক উপাদন হিসেবে এসেছে তাঁর চিত্রকলায়। কাগজের মণ্ডের পটভূমিতে কখনও চকিতে ধরা পড়েছে মৃত্যুমুখ আবার কখনও মুক্তিযোদ্ধার যন্ত্রণাকাতর হাতের ইঙ্গিত। শিল্পের আশ্রয়ে ধরা দেয় আবহমান বাঙালীর নিঃশ্বাস। শিল্পীর উচ্ছাস, অভিব্যক্তি, শুদ্ধতা, বেদনা, স্মৃতি আর একাকিত্ব এ সবই যেন এক পাললিক শিল্পীর প্রত্যাবর্তন। আজ রবিবার থেকে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় শুরু হচ্ছে এই শিল্পীর শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। ৭০তম এ একক প্রদর্শনীর শিরোনাম পাললিক প্রত্যাবর্তন। আগামী ১০ জানুয়ারি তাঁর ৭০তম জন্মদিনকে ঘিরে এ প্রদর্শনীতে দেখা মিলবে বৃহৎ শিল্পযজ্ঞের। চিত্রকর্ম ও স্থাপনাশিল্প মিলিয়ে উপস্থাপিত হবে ২৩৮টি শিল্পকর্ম। এখন পর্যন্ত দেশের ইতিহাসে কোন শিল্পীর একক প্রদর্শনীতে এই বিপুলসংখ্যক শিল্পের সমাহার ঘটেনি। সব মিলিয়ে খুব ঘটনাবহুল এক প্রদর্শনী। প্রদর্শনী উপলক্ষে শনিবার বিকেলে একাডেমির চিত্রশালায় মিট দ্য প্রেস ও প্রেস প্রিভিউয়ের আয়োজন করেন শিল্পী। এতে প্রদর্শনীর বিভিন্ন শিল্পকর্মের পটভূমিসহ ব্যাখ্যা তুলে ধরেন তিনি। এ সময় কালিদাস কর্মকার জানান, এ বছর এই প্রদর্শনীসহ বিশ্বের ১৬টি বড় শহরে একক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করবেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রাজিল, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরে এসব প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। প্রদর্শনী সম্পর্কে শিল্পী বলেন, পলি জমে জমে বাংলাদেশ নামের এই ভূখ- সৃষ্টি হয়েছে। এই অঞ্চলে মানুষের মনও তাই পলির মতোই নরম। এই সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষমতার লড়াই, বঞ্চনার শিকার এই মানুষের মন মরে যাচ্ছে। কিন্তু এত অস্থিরতার পরও শেষ পর্যন্ত সেই মানুষ জেগে উঠছে আদি চরিত্রে নিজস্ব স্বকীয়তায়। জীবনের সেসব কথাই তুলে ধরতে চেয়ে আমার এতদিনের প্রদর্শনীগুলোতে। পাললিক প্রত্যাবর্তন শিরোনামের এবারের প্রদর্শনীটি সেই দীর্ঘ যাত্রাকেই ফিরে দেখার প্রয়াস। এ প্রদর্শনীতে শিল্পীর সারা জীবনের যত নিরীক্ষাধর্মী কাজ রয়েছে তা এক ছাদের নিচে দেখার সুযোগ মিলবে। ১৯৭০ সাল থেকে শুরু ২০১৪ সাল পর্যন্ত শিল্পীর সৃজিত শিল্পকর্ম দেখার সুযোগ পাবেন শিল্পানুরাগীরা। থাকবে এ্যাক্রেলিক, মিশ্র মাধ্যম, গোয়াশ, কোলাজ, মেটাল কোলাজ, ড্রইং, ডিজিটাল লিথোগ্রাফে চিত্রকর্ম ও মিশ্র মাধ্যমের স্থাপনাশিল্প। এছাড়া নানা উপকরণ দেখা যায় তার ক্যানভাসে। তিনি ব্যবহার করেন নানা ধরনের পাথর, কড়ি, প্রবাল, লাভা খ-, পোড়া কাগজ, মুক্তা, বিভিন্ন ধরনের কোরাল, কাচ প্রভৃতি। এ প্রসঙ্গে শিল্পী বলেন, আমার বাবা হীরালাল কর্মকার। ছবি আঁকা বিষয়ে তিনি পড়াশোনা করেননি। কিন্তু তার আগ্রহ ছিল শিল্প নিয়ে। ছবিও আঁকতেন। কিন্তু আমাদের পৈতৃক ব্যবসা ছিল সোনার গয়না গড়ানোর। সেই প্রভাবটা আমার মধ্যে রয়েছে। সেজন্য ক্যানভাসে নানা ধরনের উপকরণ ব্যবহার করি। ভাল লাগে। আজ বিকেল পাঁচটায় প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী। বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ফারুক সোবহান। সভাপতিত্ব করবেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোঃ আনোয়ার হোসেন। ১৩ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী শেষ হবে ১৬ জানুয়ারি। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এছাড়া শুক্রবার দুপুর ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে এ প্রদর্শনী। উদীচীর হাফ আখড়াই নাটকের প্রদর্শনী ॥ আজ রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল হলে মঞ্চস্থ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দর্শকনন্দিত নাটক ‘হাফ আখড়াই’। উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকীর রচনা ও আজাদ আবুল কালামের নির্দেশনায় নাটকটিতে অভিনয় করেছেন উদীচী কেন্দ্রীয় নাটক বিভাগের শিল্পীরা। ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকে বাংলা টপ্পা গানের একটি দলকে ঘিরে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, নারীর প্রতি সেই সময়ের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, ধনী-গরিব বৈষম্য প্রভৃতি বিষয়ই এ নাটকটির মূল প্রতিপাদ্য। নাট্যকার রতন সিদ্দিকী জানান, ১৮০৪ সালে বাংলা টপ্পা গানের জনক রামনিধি গুপ্ত কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন আখড়াই। নিজস্ব পদ্ধতিতে সঙ্গীত শিক্ষা প্রচলনের মাধ্যমে দ্রুতই কলকাতার অভিজাত শ্রেণীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
×