ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জিহাদের মৃত্যু নিয়ে সরকারবিরোধী অপপ্রচার চলছে

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৪ জানুয়ারি ২০১৫

জিহাদের মৃত্যু নিয়ে সরকারবিরোধী অপপ্রচার চলছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ওয়াসার পরিত্যক্ত কূপের পাইপে পড়ে শিশু জিহাদের মৃত্যুর আলোচিত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার দুই আসামি আজও গ্রেফতার হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও জিহাদের পরিবার। জিহাদের বাবাকে পুলিশের নির্যাতন আর আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় মানুষের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ কাজে লাগাতে চলছে নানামুখী অপতৎপরতা। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীকে সরকার ও পুলিশের বিরুদ্ধে মাঠে নামানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকারবিরোধী একটি চক্র জিহাদের লাশ উদ্ধারের পর খানিক ক্ষণ শাহজাহানপুর বালুরমাঠে রাখার পরামর্শ দিয়েছিল জিহাদের পরিবার ও স্বজনদের। ময়নাতদন্ত শেষে জিহাদের লাশ শাহজাহানপুরে নিয়ে জনরোষ সৃষ্টিরও দ্বিতীয় দফা চেষ্টা করেছিল চক্রটি। কিন্তু জিহাদের পরিবার রাজি না হওয়ায় সরকারবিরোধীদের সে পরিকল্পনাও সফল হয়নি। গত ২৬ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির বালুরমাঠে খেলতে গিয়ে ওয়াসার পরিত্যক্ত পাম্পে পড়ে যায় চার বছরের ছোট্ট জিহাদ। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। কিন্তু রবিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত সকল চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। ঘটনার পরদিন শনিবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খানের তরফ থেকে পাইপের ভেতরে কোন মানবদেহের অস্তিত্ব নেই বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এ ঘোষণার পর নানা গুজব ডালপালা মেলতে থাকে। জিহাদের প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে এমন ঘোষণার পর পরই পুলিশ জিহাদের বাবাকে শাহজাহানপুর থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিহাদের পিতাকে পুলিশী নির্যাতনের অভিযোগও ওঠে। যদিও জিহাদের বাবা পরে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে সারাদেশে ঘটনায় তোলপাড় চলতে থাকে। এদিকে টানা ২৩ ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে। তবে ফায়ার সার্ভিস স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্ধার তৎপরতায় সহযোগিতা করে। এরপরই ঘটে যায় বহুল আলোচিত সেই ঘটনা। সিদ্দিকুর রহমান বাবলুর প্রযুক্তি আর আইকন পাইলিং কোম্পানির সহায়তায় তৈরি বিশেষ ক্যাচার বক্সের মাধ্যমে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় উদ্ধার হয় শিশু জিহাদের লাশ। সারাদেশে হইচই পড়ে যায়। শুরু হয় নানামুখী সমালোচনা। জিহাদের লাশ তোলার পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে শাহজাহানপুর এলাকায় বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। কিন্তু তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। জিহাদের লাশ দ্রুত ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হলে ক্ষোভের তীব্রতা কমে যায়। স্থানীয় ও জিহাদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, জিহাদের লাশ উদ্ধারের পর পরই সরকারবিরোধী স্থানীয় কিছু নেতা জিহাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। তারা খানিকটা সময় জিহাদের লাশ শাহজাহানপুর বালুর মাঠে রাখার পরামর্শ দেন। অজুহাত হিসেবে তারা জিহাদকে শেষবারের মতো দেখার কথা বলে। কিন্তু তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল সরকার আর ফায়ার সার্ভিসের ব্যর্থতা পুঁজি করে মানুষের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভকে সহিংসতায় পরিণত করা। পরামর্শদাতাদের অসৎ উদ্দেশ্য খানিকটা আঁচ করতে পেরে জিহাদের লাশ উদ্ধারের পর পরই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালে নিতে কোন প্রকার বাধা দেয়নি জিহাদের পরিবার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, তারই ধারাবাহিকতায় জিহাদের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে পৌঁছলে সরকারবিরোধীরা এলাকাবাসীর নিয়ে বিক্ষোভ করে। এরপর ময়নাতদন্ত শেষেও জিহাদের লাশ শেষবারের মতো শাহজাহানপুরে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিল সরকারবিরোধী মহলটি। আলোচিত শিশু জিহাদকে শেষবারের মতো দেখতে এলাকাবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বলেও সরকারবিরোধী ওসব নেতার তরফ থেকে জিহাদের পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু এলাকায় আরও তীব্র অসন্তোষ ও ভাঙচুরের আশঙ্কায় জিহাদের লাশ শাহজাহানপুরে না নিয়ে কড়া পুলিশ পাহারায় সোজা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয় সূত্র বলছে, সরকারবিরোধীদের মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধীরা জিহাদের ইস্যু সামনে রেখে গোপনে তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা নানাভাবে ইস্যুটিকে জিইয়ে রাখার চেষ্টা করছে। জিহাদের পিতাকে পুলিশের নির্যাতন এবং জিহাদ মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ার ইস্যু সামনে রেখে ব্যাপক গোপন গণসংযোগ চলছে। এজন্য টাকাও ঢালা হচ্ছে। এদিকে শাহজাহানপুর থানায় জিহাদের পিতা নাসির ফকিরের দায়ের করা মামলার দুই আসামি ওয়াসার সেই পরিত্যক্ত পাম্প ও নতুন পাম্প নির্মাণের দায়িত্ব পাওয়া এসআর হাউসের স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুস সালাম ও রেলওয়ের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া জ্যেষ্ঠ উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম শনিবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিদের গাফিলতি এবং দায়িত্বে অবহেলার কারণেই তাঁর ছেলে পাইপের ভেতরে পড়ে মারা গেছে। পাইপের মুখে ঢাকনা লাগানো থাকলে এ দুর্ঘটনা ঘটত না। তাঁর ছেলের মৃত্যু হতো না। ঘটনার পর থেকেই জিহাদের বাবার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটি বন্ধ। সেটি কৌশলগত কারণে সংশ্লিষ্টরা বন্ধ করে রেখেছে বলে জানা গেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহানপুর থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ আবু জাফর জনকণ্ঠকে জানান, অভিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসআর হাউসের মালিকের উত্তর মুগদার ৩৮/৩ নম্বর বাড়িতে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু আসামিকে গ্রেফতার করা যায়নি। আসামিদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত আছে। এদিকে জিহাদের মামা শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির মনির টি স্টলের মালিক মনির হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, জিহাদের জন্য প্রায় প্রতিদিনই শাহজাহানপুরসহ আশপাশে কোন না কোন অনুষ্ঠান হচ্ছে। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী চলছে। সবাই শুধু সান্ত¡না দিচ্ছে। কিন্তু আসলে জিহাদের পরিবারের জন্য কেউ তেমনভাবে এগিয়ে আসছে না। না রেল বিভাগ, না সরকার, না পুলিশ, না ওয়াসা। এমনকি জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার দুই আসামিও গ্রেফতার হচ্ছে না। আসামিদের গ্রেফতার না হওয়ার বিষয়টিও রীতিমতো রহস্যের জন্ম দিয়েছে। আসামিরা সত্যিই গ্রেফতার হচ্ছে না, নাকি পুলিশ ইচ্ছে করে গ্রেফতার করছে না, সে প্রশ্নও তুলছেন অনেকেই। জিহাদ বিষয় নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে তারা পুরোপুরি অন্ধকারে। আর জিহাদের মৃত্যু ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে স্বার্থান্বেষীরা সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করার চেষ্টা করছেন।
×