ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানে সংবিধান সংশোধন হচ্ছে

সামরিক আদালত গঠনে মতৈক্য

প্রকাশিত: ০২:৫২, ৪ জানুয়ারি ২০১৫

সামরিক আদালত গঠনে মতৈক্য

পাকিস্তানের রাজনীতিকরা সামরিক আদালত গঠনের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন। শুক্রবার সর্বদলীয় সম্মেলনে (এপিসি) সামরিক আদালতে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের বিচারের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দু’বছরের জন্য এসব আদালত গঠন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ রাজধানী ইসলামাবাদে সম্মেলন আহ্বান করেন। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল রাহিল শরিফ বলেন, সামরিক আদালত প্রতিষ্ঠা সেনাবাহিনীর ইচ্ছা নয়, বরং অস্বাভাবিক সময়ের দাবি। খবর ডন ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউন অনলাইনের। সম্মেলনের পর এক যুক্ত ঘোষণায় বলা হয়, এপিসি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়ে আইন তৈরির প্রস্তাবগুলো অনুমোদন করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে সুনির্দিষ্ট আইনের আওতায় মামলাগুলোর দ্রুত বিচারের জন্য পাকিস্তান আর্মি এ্যাক্টের এখতিয়ার বাড়াতে এটি সংশোধন করা এবং এ কাজকে সাংবিধানিক বৈধতা প্রদান করা। এপিসি অনুমোদিত সংবিধানের ২২তম সংশোধনের খসড়া শনিবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে। পেশ করা হবে বলে জানা যায়। পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলো এবং সামরিক নেতৃত্ব সম্মেলনে যোগ দেয়। ২৪ ডিসেম্বর অনুরূপ এক সম্মেলনে সন্ত্রাস দমনের জন্য ২০ দফা জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গৃহীত হয়। এতে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের দ্রুত বিচারের জন্য সেনা অফিসারদের নেতৃত্বে আদালত গঠনের সুপারিশও করা হয়। কিন্তু কয়েক দিন পর সামরিক আদালত গঠনের স্বার্থে সংবিধান সংশোধনের ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য প্রকাশ পায়।সংবিধানের অনুমোদন ছাড়া সামরিক আদালত গঠনের যে কোন উদ্যোগ আইনগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এমন কথা ভেবে সরকার সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে এ সম্মেলন আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেয়। সম্মেলন উদ্বোধন করে নওয়াজ শরীফ সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানান। সন্ত্রাসীদের ওপর কঠোর আঘাত আবার চূড়ান্ত মুহূর্ত উপস্থিত বলে তিনি রাজনৈতিক নেতৃত্বকে স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, আমরা এ মুহূর্তকে বৃথা যেতে দেব না। সামরিক আদালত সেনাবাহিনীর মস্তিষ্কপ্রসূত পরিকল্পনা বলে যারা এরূপ আদালতের সমালোচনা করেন, তাদের উদ্দেশে জবার দিতে সেনাপ্রধান রাহিল এ সুযোগকে কাজে লাগান। তিনি বলেন, বিশেষ আদালত গঠন সেনাবাহিনীর ইচ্ছা নয় বরং অস্বাভাবিক সময়ের দাবি। পূর্ববর্তী এপিসিতে অর্জিত ঐকমত্য অটুট থাকবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। তিনি অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের আজকের সিদ্ধান্ত আমাদের জাতির জন্য নির্ধারণ করবে। পাকিস্তান পিপলস পার্টির কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি সামরিক আদালত গঠনের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার লড়াই ‘এক জাতীয় মিশনে’ পরিণত হয়েছে। তার দলের পার্লামেন্ট সদস্যরাই গত কয়েক দিন ধরে বিতর্ককালে সামরিক আদালতকে সাংবিধানিক বৈধতা দানের বিরোধিতা করতে সামনের কাতারে ছিলেন। পাকিস্তান মুসলিম লীগের (কিউ) প্রেসিডেন্ট চৌধুরী সুজাত হুসেইন বলেন, রাজনৈতিক দিক দিয়ে অজনপ্রিয় হলেও সাহসী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। পাকিস্তান তেহরিকই ইনসাফ দলের চেয়ারম্যান ইমরান খান বলেন, জনাব প্রধানমন্ত্রী, আমরা এ মিশনে আপনাদেরকে পুরোপুরি সমর্থন জানাই। ওই সংবিধান সংশোধনের বিল অনুযায়ী, ধর্ম বা সম্প্রদায়ের নামে সন্ত্রাসী তৎপরতায় লিপ্ত এমন ব্যক্তিদের বিচার করবে সামরিক আদালত। এরূপ আদালত বেসরকারী বাহিনী, সশস্ত্র দল, শাখা ও মিলিশিয়াদেরও বিচার করতে পারবে। এ সংশোধনী আগামী সপ্তাহে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে পাস হয়ে প্রেসিডেন্ট মামুনুন হোসেনের স্বাক্ষর পেয়ে আইনে পরিণত হওয়ার পর পরই কার্যকর হবে। সম্মেলনের পর এমকিউএম নেতা ফারুক সাত্তার বলেন, ধর্মীয় চরমপন্থীরা দেশের অস্তিত্বের প্রতিই হুমকির সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, দেশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে। তাই শত্রুদের মৌলিক অধিকার নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। পিটিআই ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মাহমুদ কোরেশি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অর্জিত জাতীয় ঐকমত্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, তার দল সংবিধানের আওতার মধ্যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ সমর্থন করে। জেইউই (ফ) প্রধান মওলানা ফজলুর বলেন, তিনি এ ইস্যুতে তার আইন উপদেষ্টাদের সঙ্গে পরামর্শ করবেন এবং দল এর বক্তব্য পার্লামেন্টেই জানাবে। তথ্যমন্ত্রী পারভেজ রশিদ বলেন, সামরিক আদালতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঐকমত্যের ভিত্তিতেই নেয়া হয়েছে এবং কারও আর কোন ভিন্নমত নেই।
×