ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ কারবারিরা আগ্নেয়াস্ত্র মজুদে তৎপর

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৩ জানুয়ারি ২০১৫

অবৈধ কারবারিরা আগ্নেয়াস্ত্র  মজুদে তৎপর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজনৈতিক অস্থিরতায় লাশ ফেলতে ঢাকায় অস্ত্র গোলাবারুদের মজুদ চলছে। এ জন্য ব্যাপক তৎপর অবৈধ অস্ত্র কারবারিরা। প্রায় দিনই ঢাকায় অস্ত্রের চালান আসছে। তবে অধিকাংশই জব্দ হয় না। অনেকটা সহজলভ্য হওয়ায় ছিনতাই, অপহরণ, দস্যুতা ও খুনের মতো অপরাধে হরহামেশাই অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আকারে ছোট আর সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় সন্ত্রাসীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে পিস্তল আর রিভলভার। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের অধিকাংশই আসছে স্থল সীমান্ত দিয়ে। পাঁচ ধাপে কাটআউট পদ্ধতিতে ক্রেতার হাতে পৌঁছে আগ্নেয়াস্ত্র। সম্প্রতি কয়েকটি অস্ত্রের চালান ধরা পড়েছে। গ্রেফতার হয়েছে অন্তত ৩০ অবৈধ অস্ত্রকারবারি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে এমন তথ্য। গত বছরের ১৮ অক্টোবর ঢাকা থেকে ২টি অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় বিদেশী পিস্তল, ৪টি ম্যাগাজিন ও ৭ রাউন্ড তাজা বুলেটসহ গ্রেফতার হয় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ী জুলহাস আকন ওরফে জুলহাস (৪৮), আব্দুস সাত্তার (৪৫), আব্দুস সাত্তার ঢালী ওরফে রকি হোসেন ওরফে সাত্তার (৩২) ও এমদাদ হোসেন ওরফে ইমদাদ (৩০)। পরদিন ৫টি অত্যাধুনিক বিদেশী পিস্তল, ৮টি ম্যাগাজিন ও ২৪টি বুলেটসহ রাজধানীর দারুস সালাম থানাধীন কল্যাণপুর থেকে গ্রেফতার হয় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান ওরফে শিমুল (৩৯), কামাল হোসেন (৩৬) ও রুহুল আমিন (৩০)। গত বছরের ১৫ নবেম্বর র‌্যাব পাঁচ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে ৩টি পিস্তল, ৩টি ম্যাগাজিন ও ৮৩ রাউন্ড বুলেটসহ গ্রেফতার করে। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর রাজধানীর খিলগাঁও আল ইসলামিয়া সুইটস্ এ্যান্ড বেকারি সামনে থেকে মোঃ জসিম ও মোঃ আল আমিন ১টি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন ও ২টি বুলেটসহ গ্রেফতার হয়। সর্বশেষ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর রাত সাড়ে তিনটায় রাজধানীর সবুজবাগ থানাধীন কদমতলী ব্রীজসংলগ্ন ১/১১ নম্বর পূর্ব বাসাবো মোবাইল সার্ভিসিং ইঞ্জিনিয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের অফিস থেকে ডিবি পুলিশ এক হাজার রাউন্ড বিভিন্ন বোরের তাজা বুলেট, স্বয়ংক্রিয় অত্যাধুনিক বিদেশী ২টি রিভলবার ও ১টি পিস্তলসহ পেশাদার খুনী ও অবৈধ অস্ত্র চোরাকারবারি সাইফুল্লাহ খানকে (৪০) গ্রেফতার করে। তাকে ৪ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ডিবি পুলিশ জানায়, ঢাকায় এত পরিমাণ গুলি ইতোপূর্বে আর জব্দ হয়নি। জব্দকৃত অস্ত্র গোলাবারুদগুলো রাজনৈতিক নেতা হত্যা, নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ঢাকায় মজুদ করা হয়েছিল। উদ্ধারকৃত অস্ত্র তিনটি ব্রাজিল ও যুগোসøাভিয়ায় তৈরি। যা খুবই অত্যাধুনিক ও স্বয়ংক্রিয়। এ ধরনের অস্ত্রের চালান বাংলাদেশে প্রবেশ করার ঘটনা বড় মাপের অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীর সঙ্গে গ্রেফতারকৃত সাইফুল্লাহর যোগাযোগ থাকার বিষয়টি প্রমাণ করে। আগামী ৫ জানুয়ারি ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতা চালানোর লক্ষ্যে এবং কোন বড় মাপের রাজনৈতিক নেতাকে হত্যা করে পরিকল্পিত অস্থিরতা সৃষ্টির জন্যই জব্দকৃত অস্ত্রগুলো ঢাকায় আনা হয়েছিল। মোট ৫টি আগ্নেয়াস্ত্র এসেছে। এর মধ্যে একটি আগ্নেয়াস্ত্র যুবলীগের একজন শীর্ষ নেতাকে হত্যার জন্য এক পেশাদার খুনীকে দেয়া হয়েছে। আরেকটি ৮ রাউন্ড বুলেটসহ ২ লাখ টাকায় এক ছাত্রদল নেতা কিনেছেন। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, সাইফুল্লাহ খান ১৯৯৭ সাল থেকে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনীতি করতে গিয়েই অপরাধ কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েন। দীর্ঘ সময় সৌদি আরবে পলাতক ছিলেন। সম্প্রতি দেশে ফেরেন। যোগাযোগ হয় পুরনো সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক বড় ভাইদের সঙ্গে। বড় ভাইদের পরামর্শেই রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ঢাকায় অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদ মজুদ শুরু করে। সাইফুল্লাহ মূলত অবৈধ অস্ত্র চোরাকারবারি ও কন্ট্রাক্ট কিলিংয়ের চুক্তি নিয়ে থাকে আবার পেশাদার খুনীদের কাছে অস্ত্র ভাড়াও দেয়। তার ভাড়া দেয়া অস্ত্র দিয়ে অনেক খুনের ঘটনা ঘটেছে। বহুল আলোচিত মিল্কি হত্যাকা-ের ঘটনায় তার যোগসূত্র থাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, জব্দকৃত অস্ত্র গোলাবারুদগুলোর অধিকাংশেরই ক্রেতা ছিলেন কতিপয় অসাধু রাজনীতিবিদ। তাদের অনেকেই আগামী ৫ জানুয়ারি রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছেন। পাশাপাশি পরিকল্পিত নাশকতা চালাতেও তারা তৎপরতা চালাচ্ছেন। আগামী ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট যে কোন মূল্যে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার আগাম ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ওইদিন সরকারের বিদায় ঘণ্টা বাজানোর আগাম ঘোষণার কথাও জানিয়েছেন। সরকারের অনুমতি না দিলেও ঢাকায় মহাসমাবেশ করার আগাম ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। সূত্রটি বলছে, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হবে, প্রয়োজনে লাশ ফেলে দিয়ে হলেও রাজনৈতিক মাঠ গরম রাখার চেষ্টা হবে, এমন আগাম ভাবনা থেকেই রাজনৈতিক বড় ভাইরা শুধু সাইফুল্লাহ নয়, অনেক অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে অস্ত্র গোলাবারুদ মজুদ করতে বলে। সে মোতাবেক শুধু সাইফুল্লাহ নয়, বহু অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ী ঢাকায় অস্ত্র গোলাবারুদ মজুদ করছে। প্রায় দিনই ঢাকায় অস্ত্রের চালান আসছে। তবে অধিকাংশই জব্দ হচ্ছে না। কাটআউট পদ্ধতিতে ৫ ধাপে অবৈধ অস্ত্র পৌঁছে ক্রেতার কাছে। ফলে অস্ত্র চালানের যোগানদাতারা বরাবরই পর্দার আড়ালে থেকে যায়। অস্ত্র চোরাকারবারিরা নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমেও আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করে। প্রতিটি সিন্ডিকেটে ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য থাকে। সীমান্তের ওপারে, সীমান্তে, সীমান্ত থেকে পরিবহন, পরিবহন থেকে ঢাকায় এই চার ধাপে ঢাকায় অস্ত্র মজুদ হয়। আর ক্রেতার কাছে পৌঁছে পঞ্চম ধাপে। আমেরিকা, ইটালি, রাশিয়া, জার্মানি, ব্রাজিল, যুগোসøাভিয়া, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের তৈরি বলে অস্ত্রের গায়ে লেখা থাকে। আসলে জব্দকৃত অধিকাংশ অস্ত্র ভারতে তৈরি। সবজি আর ফলের ট্রাকে আসে অস্ত্র। যে কারণে সব ফল ও সবজি নামিয়ে ট্রাকে তল্লাশি চালানো সম্ভব হয় না। এমন কৌশলে প্রায় দিনই ঢাকায় অস্ত্রের চালান ঢুকছে।
×