ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতারণা করে ৩৭ বছর চাকরি

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ২ জানুয়ারি ২০১৫

প্রতারণা করে ৩৭ বছর  চাকরি

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জালিয়াতি করে ৩৭ বছর চাকরি করার পর ঘটনা ফাঁস হয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় এক সহকারী লোকমোটিভ মাস্টারের। তার নাম মোঃ সোলায়মান। সার্ভিস রেকর্ড অনুযায়ী তিনি ইসহাক নামে চাকরি করে অবসরে গেছেন। চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অর্থ উত্তোলনের জন্য এই সোলায়মান সেনবাগ থেকে একটি এবং অপরটি চট্টগ্রামে ইসহাক নামে পরিচয়পত্র নিয়েছেন। ৪৩ বছর পর বিষয়টি উদঘাটিত হওয়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে অবসর গ্রহণের পর দীর্ঘ ছয় বছর দুর্নীতির কারণে প্রশাসনিক জটিলতা ও মামলা থাকায় চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। অবশেষে ডিভিশনাল পার্সোনেল অফিসের দফতর থেকে অনৈতিকভাবে ফায়দা লুটে নেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হলেও শেষ পর্যন্ত তা ফাঁস হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় অর্থ উপদেষ্টা, চট্টগ্রামের দফতরে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় ৪৩ বছর পর রেলওয়েতে এ ধরনের তথ্য উদঘাটিত হওয়ায় মেকানিক্যাল বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, ভুয়া নাম ব্যবহার করে এই এএলএম দীর্ঘ প্রায় ৩৭ বছর চাকরি করেছেন পাহাড়তলীর লোকশেড দফতরসহ পূর্বাঞ্চলে। জানা গেছে, ১৯৭২ সালে রেলের পূর্বাঞ্চলে ইঞ্জিন ক্লিনার পদে লোক নিয়োগ করা হয়। আবেদন অনুযায়ী এ পদে নোয়াখালীর সেনবাগ থানাধীন উত্তর মানিকপুর এলাকার সূর্য আলীর পুত্র ইছাক মোল্লা নিয়োগ পান। কিন্তু অক্ষর জ্ঞানহীন এ ব্যক্তি নিয়োগপত্র না পাওয়া এবং রেলের সঙ্গে যোগাযোগ না করায় চাকরিতে যোগদান করতে পারেননি। উল্লেখ্য, ঐ সময়ে রেলের নিয়োগে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ছবি জমাদানের নিয়ম ছিল না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এছাক মোল্লার পার্শ্ববর্তী চাচুয়া গ্রামের মোল্লা বাড়ির আজহার মোল্লার ছেলে সোলায়মান প্রতারণার করে রেল কর্মকর্তাদের কাছে এছাক মোল্লা পরিচয় দিয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৩৭ বছর চাকরির পর প্রতারক সোলায়মান মোঃ ইসহাক নামে টিকেট নং-৮৩৫ এর আওতায় ২০০৯ সালের ৩১ জুলাই অবসরে যান। চাকরিতে যোগদানের তারিখ ছিল ১৯৭২ সালের ৩ আগস্ট। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সোলায়মানের বিরুদ্ধে রেলওয়েতে কয়েকটি প্রশাসনিক অভিযোগ থাকায় চাকরির চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর পার হলেও শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত নিষ্পত্তি আটকা পড়ে যায় বিভাগীয় অর্থ উপদেষ্টা চট্টগ্রামের দফতরে। চট্টগ্রাম আদালতের কৌঁসুলি ভুলন লাল ভৌমিক এ বিষয়ে ২০১২ সালের ১৩ মে সোলায়মান বরাবর একটি লিগ্যাল নোটিস রেজিস্টার্ড ডাকযোগে প্রেরণ করেছেন। লিগ্যাল নোটিস অনুযায়ী দেখা যায়, ১৯৭২ সালে সোলায়মান জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে রেলওয়েতে যোগদান করেন। নোয়াখালীর সেনবাগের মানিকপুর এলাকার ভোটার লিস্ট অনুযায়ী দেখা যায়, তিনি ০৯২ নম্বর ভোটার। তার আইডি নং-৭৫১৮০১৩৮৭৯৫৩৮। জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি ১৯৫৭। কিন্তু সোলায়মান চাকরিতে জালিয়াতি করার জন্য চট্টগ্রামে ইসহাক নামে আর একটি ভোটার আইডি করেছেন। যার নং-১৫৯২৮১২১৭৯৮০৫। পিতার নাম আজহার মোল্লা, মাতার নাম ছবুরা বেগম। জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ১-৮-১৯৫২। ঠিকানা- ৬৫১/ই, পাহাড়তলী পাওয়ার হাউস কলোনি, পাহাড়তলী বাজার, ডবলমুরিং, চট্টগ্রাম। শুধু তাই নয়, সোলায়মান ইসহাক নামে আদালত থেকে একটি হলফনামা নং-৫৪, তাং ২০১২ সালের ২৫ মার্চ নিয়েছেন। অথচ, সেনবাগের মানিকপুর এলাকায় জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার লিস্ট ও ভূমি খাজনা রসিদ অনুযায়ী দেখা গেছে, ১৯৯৯ সালের ২১ এপ্রিল সোলায়মান নামে ২৪৬৫ নম্বর দলিল মূলে ১৭ শতক জায়গা ৫০ হাজার টাকায় ক্রয় করেছেন। এছাড়াও সোলায়মান ১৯৭৯ সালের ১৫ মার্চ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের তারিখ অনুযায়ী এবং নিকাহ নামায়ও তার নাম সোলায়মান হিসেবেই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিভাগীয় পার্সোনেল অফিসারের দফতর সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ সময় জটিলতা থাকায় সোলায়মান ও ইছাককে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপকের দফতরে তলব করা হয়েছিল। তিন সদস্যের একটি কমিট উভয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। সেখানে ইছাক স্বাধীনতার পূর্বে ইঞ্জিন ক্লিনার পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিলেন বলে জানান। দেশ স্বাধীনের পর তিনি আর খোঁজখবর নেননি। অভিযোগ রয়েছে, এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সোলায়মানের বাবা আজহার মোল্লা সোলায়মানকে এছাক বানিয়ে চাকরির সুযোগ করে দেন। মূলত সোলায়মানের বাবাও তৎকালীন সময়ে রেলে চাকরি করতেন।
×