ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমরা আফগানিস্তানে থাকব

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১ জানুয়ারি ২০১৫

আমরা আফগানিস্তানে থাকব

যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সঙ্কল্পবদ্ধ। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর একথা জানায়। এদিকে, ইংরেজী বছরের শেষ উপলক্ষে তালেবানের সম্ভাব্য হামলা রোধ করতে বুধবার আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়। এখন ন্যাটো এর কম্ব্যাট মিশনের অবসান ঘটিয়ে এক নতুন ‘প্রশিক্ষণ ও সমর্থন’ মিশন শুরু করতে যাচ্ছে। খবর ডন ও এএফপির। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জেফ র‌্যাথকে ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এক সার্বভৌম, স্থিতিশীল, ঐক্যবদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আফগানিস্তানের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। শনিবার যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহায়তা বাহিনী (ইসাফ) আফগানিস্তানে তাদের কম্ব্যাট মিশন শেষ করে এবং জঙ্গীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফগান সরকারী বাহিনীকে সহায়তা করার নতুন মিশন শুরু করে। ঐ পরিবর্তন ব্যাখ্যা করে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল বলেন, আমাদের আফগান অংশীদাররা তাদের দেশের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করছে। আর যুক্তরাষ্ট্র অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডমের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটাচ্ছে। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে আমরা গত ১৩ বছরের কষ্টার্জিত সাফল্যকে সুরক্ষা করতে ও কাজে লাগাতে আমাদের পরবর্তী মিশন অপারেশন ফ্রিডমস সেন্টিনেল শুরু করছি। তবে তালেবান ঐ পরিবর্তনকে জঙ্গীদের জন্য বিজয় হিসেবে দেখিয়েছে। তারা ২০০১-এর অক্টোবর থেকে মার্কিন বাহিনী, তাদের মিত্র ও আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছে। তালেবান মুখপাত্র জাবি উল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ইসাফ উল্লেখযোগ্য বা দৃম্যমান কোন কিছু অর্জন না করেই ব্যর্থতা ও হতাশার পরিবেশে তাদের পতাকা গুটিয়ে ফেলেছে। কিন্তু পররাষ্ট্র দফতরের ঐ মুখপাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাচ্ছে, এমন অভিমত প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অঙ্গীকারের অংশীদার। যুক্তরাষ্ট্র আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা উভয়েই দিয়ে যেতে চায়। র‌্যাথকে বলেন, এ অঙ্গীকার আফগানিস্তানের সঙ্গে বৃহত্তর সমঝোতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আফগানিস্তানজুড়ে তালেবানের বিরুদ্ধে এখনও লড়াই চলছে। প্রায় ১৭ হাজার বিদেশী সৈন্য স্থানীয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে সহায়তা করতে আফগানিস্তানে থেকে যাবে। আন্তর্জাতিক সামরিক উপস্থিতি হ্রাস পাওয়ায় স্থানীয় বাহিনীগুলো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিদেশী বাহিনী ১২৫০০ সদস্যের ন্যাটো সৈন্যকে নিয়ে গঠিত হবে। তাদের বেশিরভাগই হবে মার্কিন সৈন্য। বিদেশী বাহিনীতে ন্যাটোর নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত এক মার্কিন সন্ত্রাসবিরোধী দলও থাকবে। তবে এ দলের সদস্য সংখ্যা শেষ পর্যন্ত কত হবে, তা স্পষ্ট নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাদিক সিদ্দিকি বলেন, সন্ত্রাসীরা যাতে নাশকতা চালানোর সুযোগ না পায়, সে লক্ষ্যে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, দেশের কোন কোন অংশে আগাম অভিযান চালানো হবে এবং অন্যত্র বিশেষত কাবুলে আরও নিরাপত্তা টহল দেয়া হবে। আফগান নিরাপত্তা বাহিনী ন্যাটোর কাছ থেকে নিরাপত্তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব হস্তান্তর উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। তালেবান ঐ কম্ব্যাট মিশনের শেষ সপ্তাহগুলোতে রাজধানীতে কয়েকটি বড় ধরনের হামলা চালায়। তখন বিদেশী অতিথিশালা, কূটনৈতিক যানবাহন, ফরাসি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও আফগান সেনাবাহিনীর বাসকে টার্গেট করা হয়। ইসলামী জঙ্গীরা রবিবার ন্যাটোর অনুষ্ঠানের পর এক আনন্দসূচক বার্তা প্রচার করে। এতে বলা হয়, আমরা এ পদক্ষেপকে তাদের পরাজয়ের এক স্পষ্ট আভাস বলে গণ্য করি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ন্যাটোর কম্ব্যাট মিশনের অবসান আমেরিকান ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধকে এক দায়িত্বশীল পরিণতিতে নিয়ে গেছে। কিন্তু আফগানিস্তানে বিদ্রোহীদের সহিংস তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৪ সালে বেসামরিক ও সামরিক লোকজন হতাহত হওয়ার ঘটনা নতুন করে বেড়ে যায়। দেশটিতে আবার গৃহযুদ্ধ দেখা দিতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা। আফগান কর্মকর্তা ও উর্ধতন মার্কিন কর্মকর্তারা আফগানিস্তানে মার্কিন উপস্থিতি বাড়াতে ওবামার ওপর চাপ দিচ্ছেন। দেশটিতে কয়েক দশক ধরে সংঘাত চলার পর প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি শান্তি ফিরিয়ে আনার আশা করছেন। তিনি বলেন যে, তিনি যে কোন বিদ্রোহী দলের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত।
×