ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফিরে দেখা ২০১৪ ॥ পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল প্রকল্পে অগ্রগতি

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪

ফিরে দেখা ২০১৪ ॥ পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল প্রকল্পে অগ্রগতি

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর মধ্যে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে পদ্মা সেতু মেট্রোরেল প্রকল্পে। বাকিগুলোর কাজও এগিয়ে চলছে। বর্তমানে সরকারের সবচেয়ে আলোচিত এ প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ এগিয়ে চলছে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নেই হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ অবকাঠামো স্বপ্নের এ সেতু। বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতায় আলোচিত ও বড় ৭ প্রকল্প হচ্ছে পদ্মা সেতু, গভীর সমুদ্রবন্দর, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প, মেট্রোরেল এবং মাতার বাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্প। পদ্মা সেতু বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে যেভাবে কাজ এগিয়ে চলছে এতে করে আমরা আশাবাদী ২০১৮ সালের মধ্যেই এ সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের পরিকল্পনা ও লক্ষ্য অনুযায়ীই কাজ এগিয়ে চলছে। এ অগ্রগতিতে আমরা সন্তুষ্ট। বৃহৎ প্রকল্পগুলোর বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব, ফাস্টট্র্যাক মনিটরিং কমিটির সদস্য এবং ফাস্টট্র্যাক ডিপিপি টিপিপি কমিটির সভাপতি ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, প্রকল্পগুলোকে ফাস্টট্র্যাকের আওতায় নিয়ে আসাটাই সরকারের একটি কমিটমেন্টের বহিঃপ্রকাশ। এসব প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী নিজেই মনিটরিং করছেন। সুতরাং এর একটি বিশেষ গুরুত্ব আছে। যখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে জবাবদিহিতার বিষয়টি চলে আসে তখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও প্রকল্পের পরিচালকরা অবশ্যই যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। এটিই স্বাভাবিক। সূত্র জানায়, মূল পদ্মা সেতুর জন্য নদীর বিভিন্ন স্থানে মাটি পরীক্ষার কাজ চলছে। সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই পার মিলে একটি সেনানিবাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাছাড়া নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ দ্রুতই এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যেই প্রকল্পের জাজিরা সংযোগ সড়কের কাজের অগ্রগতি গত অক্টোবর পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫ শতাংশ, অবকাঠামো নির্মাণ কাজের অগ্রগতি হয়েছে ১০ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং মাওয়া সংযোগ সড়কের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এর আগে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদীশাসনের কাজের জন্য চীনা কোম্পানি সিনোহাইড্রোর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার। চুক্তি অনুযায়ী ৮ হাজার ৭০৭ কোটি টাকায় চীনা কোম্পানি সিনোহাইড্রো এ কাজ করবে। এর মধ্য দিয়ে প্রথম পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক ধাপগুলো শেষ হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চীনা কোম্পানি সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন নদীশাসনের কাজ পেয়েছে। নদীশাসন কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। ৮ হাজার ৭০৭ কোটি টাকায় নদীশাসন কাজের দর প্রস্তাব করেছিল সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন। প্রথম দফায় প্রাক্কলন অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান করতে না পারায় নদীশাসনে ব্যয় বাড়ছে ৩ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। সম্প্রতি মূল পদ্মা সেতু ও নদীশাসন কাজ তদারকির জন্য কোরিয়ান কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এর মধ্য দিয়ে কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন পরামর্শক হিসেবে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশনের কাজ শুরু করতে আর কোন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত দূর হওয়া। ফলে মূল সেতু নির্মাণ ও নদীশাসন চলাকালীন ও নির্মাণ-পরবর্তী এক বছর তদারকির দায়িত্ব পালন করবে প্রতিষ্ঠানটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৩৮৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর আগে গত ১৩ অক্টোবর সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে কোরিয়ান এ কোম্পানিকে পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। আগামী ২০১৭ সালের ডিসেম্বর বা ২০১৮ সালের প্রথম দিকে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া গত ১৭ জুন পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকায় চীনা কোম্পানি চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত দিতে কালক্ষেপণের কারণে এবং পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন দ্রুত করতে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন চায়না বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংককে সাফ জানিয়ে দেয় সরকার। পদ্মা সেতু প্রকল্পে সংস্থাটির ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব প্রত্যাহার করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক ই-মেইল বার্তায় বিশ্বব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়। অন্যদিকে জাতীয় সংসদের ২০১৫ সালের প্রথম অধিবেশনেই পাস হচ্ছে বহুল আলোচিত মেট্রোরেল বিল-২০১৪। চলতি বছর সংসদের শেষ অধিবেশনে বিলটি সংসদে উত্থাপন করলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। সম্প্রতি কমিটির ষষ্ঠ বৈঠকে বিলটির ওপর আলোচনা শেষে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। কমিটি সূত্রে জানা যায়, আগামী অধিবেশনে পাস হওয়ার জন্য বিলটি প্রস্তুত করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ‘সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি’র বৈঠকে এসব সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মোঃ একাব্বর হোসেন। বৈঠক শেষে মোঃ একাব্বর হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, মেট্রোরেল বিল-২০১৪ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা মনে করে বিলটি পাস হলে প্রকল্পের কাজে জবাবদিহিতা বাড়বে। এ ছাড়া যেসব অসঙ্গতি থাকবে সেগুলোও বেরিয়ে আসবে। তাই ছোটখাটো ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন করে বিলটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, জানুয়ারি মাসে যে অধিবেশন শুরু হবে তাতে বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করা হবে। এ জন্য কমিটির সব সদস্য একমত হয়েছেন। অন্যদিকে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ এগিয়ে চলছে। স্বল্পব্যয়ে দ্রুত ও উন্নত গণপরিবহন সেবা চালুর লক্ষ্যে বাংলাদেশে এই প্রথম মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এর আগে জাতীয় সংসদে ‘মেট্রোরেল আইন-২০১৪’ বিল উত্থাপন করা হয়েছে। দশম জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশনের শেষ কার্যদিবসে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। এর আগে ১০ নবেম্বর মন্ত্রিসভা বিলটি অনুমোদন দিয়েছিল। তার আগে গত ২৮ এপ্রিল এ আইনের খসড়া মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দেয়। পরিবর্তিত রুট অনুযায়ী, মেট্রোরেল উত্তরা থেকে পল্লবী, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, প্রেসক্লাব ও মতিঝিল (বাংলাদেশ ব্যাংক) পর্যন্ত যাবে। পথে স্টেশন থাকবে মোট ১৬টি। মেট্রোরেল ঘণ্টায় গড়ে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। তিনটি পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ২০১৯ সালের মধ্যে পল্লবী থেকে সোনারগাঁও ১১ কিলোমিটার চালু করা হবে। এর পরের বছরে হোটেল সোনারগাঁও থেকে মতিঝিল এবং ২০২১ সাল নাগাদ উত্তরা হতে পল্লবী অংশে ট্রেন চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। রামপাল বিদ্যুত প্রকল্প : রামপাল-১৩২০ মেগাওয়াট প্রকল্পের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে ২০১৮ এর ডিসেম্বরের মধ্যে। এ লক্ষ্যে কাজ করছে ভারত ও বাংলাদেশ। রামপাল প্রকল্পের দ্রুত শেষ করতে প্রকল্পটিকে ফাস্টট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভারত এবং বাংলাদেশ প্রকল্পটিতে ৩০ ভাগ অর্থ বিনিয়োগ করবে। বাকি ৭০ ভাগ অর্থ ঋণ নেয়া হবে। ভারত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে। সম্প্রতি কোম্পানির বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলাম বলেন, আমার আগামী ছয় মাসের মধ্যে কয়লা পরামর্শক নিয়োগ দেব। এরপর কোন দেশ থেকে কয়লা পাওয়া যাবে তা নির্ধারণ করা হবে। তবে পৃথিবীর তিনটি দেশ থেকে বেশিরভাগ দেশ কয়লা নিয়ে থাকে। সম্প্রতি ভারতের বিদ্যুত সচিব পিকে সিনহা রামপাল প্রকল্পের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হবে। ভারত এই প্রযুক্তিতে বিদ্যুত কেন্দ্র পরিচালনা করে অভ্যস্ত। সর্বাধুনিক এই প্রযুক্তি দক্ষ এবং কম পরিবেশ দূষণকারী। অনেক দেশেরই সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আর্থিক প্রস্তাব তৈরির পরই বোঝা যাবে বিদ্যুতের দাম কেমন পড়বে। তবে ভারতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনে প্রতি ইউনিট এর গড় ব্যয় পাঁচ রুপী। সেই হিসেবে বাংলাদেশে প্রতি ইউনিটের ব্যয় দাঁড়াবে সর্বোচ্চ সাড়ে ছয় থেকে সাত টাকা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য সুখের বিষয়টি হচ্ছে ভারত ১৫ শতাংশ বিনিয়োগ করলেও কোন বিদ্যুত নেবে না। রামপাল থেকে পুরো বিদ্যুতই পাবে বাংলাদেশ। এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্প ॥ সরকারের বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম মহেশখালিতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির জন্যই এ টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানির জন্য টার্মিনালটি নির্মাণ করা হচ্ছে। টার্মিনালটি চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৬ এর জুলাই মাসে। কিন্তু এ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে ধীরগতিতে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রে ॥ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে অর্থছাড়ের তাগিদ দেয়া হয়েছিল চলতি বছরের শুরুতেই। এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছিল পরিকল্পনা কমিশনে। বলা হয়েছিল চলতি অর্থবছরের (২০১৩-১৪) অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বরাদ্দকৃত অর্থ হতে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রথম ও চতুর্থ কিস্তির অর্থ অবমুক্ত করা জরুরী প্রয়োজন। এজন্য কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সম্মতি চাওয়া হয়েছিল। চিঠি দেয়ার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পরিকল্পনা কমিশন। এ প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি এখনও হয়নি বলে জানা গেছে। সূত্র জনায়, নানা জটিলতায় প্রকল্পটি ফাইলবন্দী হয়ে পড়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর নতুন করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ নেয় এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের সার্বিক দিকনির্দেশনা প্রদান ও বাস্তবায়ন কার্যাবলী মনিটরিংয়ের জন্য ২০১০ সালের ৯ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন বিষয়ক একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। গভীর সমুদ্রবন্দর ॥ কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে কোন দেশ থেকে টাকা নেয়া হবে সেবিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পরছে না সরকার। তরে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে ডেনমার্ক। গত ২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাবের সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করে দেশটির এপিএম টার্মিনাল নামক সংস্থা। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, গত বছরের শেষ দিকে সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ডেনমার্কের কাছে অর্থায়নের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চায়। এ প্রেক্ষিতে ডেনমার্ক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে তারা আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে। যে কোন সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমন্ত্রণ জানানো হলেই তাদের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবে এবং প্রস্তাবের বিষয়ে বিস্তারিত উপস্থাপন করবে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিষয়টি পিছিয়ে গেলেও পরবর্তীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রস্তাব উপস্থাপনের আমন্ত্রণ জানায়। এ প্রেক্ষিতে প্রস্তাবটি তুলে ধরা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ডেনমার্ক ছাড়া যেসব দেশ কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে বড় ধরনের বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে এগুলো হলোÑ যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানি। মাতারবাড়ী বিদ্যুত কেন্দ্র ॥ কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিলের ৪ হাজার ৯২৬ কোটি ৬৬ লাখ, জাইকার অর্থায়ন ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি ৩ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ২ হাজার ১১৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের প্রধান উপাদান ২টি ইউনিটে ৬শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি স্টিম টারবাইন, সার্কুলেটিং কুলিং ওয়াটার স্টেশন স্থাপন, ২৭৫ মিটার উচ্চতার ২টি স্টেক, আবাসিক এবং সামাজিক এলাকা গঠন, পানি শোধন ব্যবস্থা, সাব-স্টেশন, গভীর সমুদ্রে জেটি (বন্দর) কয়লা সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা, এ্যাশ ডিসপোজাল এরিয়া এবং বাফার জোন নির্মাণ করা হবে। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুত বিভাগের উদ্যোগে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএস) কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নে জুলাই ২০১৪ হতে জুন ২০২৩ মেয়াদে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মূল্যমানের এ উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
×