ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আবার মানুষ পোড়ানো

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪

আবার মানুষ পোড়ানো

লাশের নেশায় যেন মত্ত হয়ে উঠেছে আবার রক্তপিপাসুর দল। সহিংসতার বিষবাষ্প ছড়াতে নেমেছে মাঠে। সরকার উৎখাত ও ক্ষমতা দখলের লক্ষ্য নিয়ে অবলম্বন করা হচ্ছে নাশকতার। অতীতের মতোই বেছে নেয়া হয়েছে যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ, অটোরিক্সা, ভ্যানগাড়িতে বোমা নিক্ষেপ। এ কাজে সফলতা এসেছে হরতালপূর্ব রাত থেকেই। যে লাশের জন্য এই আয়োজন, সেই লাশ পেয়েও গেছে। যেন লাশই এখনও ধ্যানজ্ঞান, লাশেই জাগে ক্ষমতাপ্রীতি। দেশজুড়ে অস্থিরতা তৈরিতে নাশকতার পথ ধরেছে অতীতের মতোই। লাশ না পেলে বুঝি কারও কারও ঘুম হারাম। অবস্থা এমন দাঁড়াচ্ছে রাজনীতিতে লাশনীতি চর্চার ধারাটি যেন বিলুপ্ত হচ্ছে না। বরং দিন দিন এর মাত্রা বাড়ছে। ২০১৩ সাল জুড়ে নাশকতাসহ সহিংসতা চালিয়ে মানুষ হত্যার মোচ্ছবে মেতেছিল তারা। কিন্তু গণরোষে তারা দমে যেতে বাধ্য হয়। ২০১৪ সালে রণেভঙ্গ দেয়া বিএনপি-জামায়াত জোট আবার সহিংস হয়ে হিংস্রতার আশ্রয় নিয়েছে। সরকারের পতন ঘটাতে আন্দোলনের আড়ালে সহিংসতা, নাশকতা, নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রক্রিয়াতে মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হয় জনগণ। ধ্বংস হয় জাতীয় সম্পদ, গৃহহারা হয় দরিদ্র মানুষ, সংখ্যালঘুরাও নিপীড়নের হয় শিকার। তাদের জানমালের নিরাপত্তাদানের দায়িত্ব যাদের সেই সরকারও যেন সব সয়ে সয়ে যাওয়ার অভ্যাস তৈরি করেছে। কঠোর হাতে দমন করা হয় না মানুষ নিধনকারীদের, বরং নৃশংসতার সঙ্গে জড়িতরা পার পেয়ে যায় অনায়াসে। আর বহাল-তবিয়তে নেমে পড়ে আবার সহিংসতায়। চলতি বছরের পুরোটা সময় ঘরে শুয়ে-বসে সরকার উৎখাতের হুঙ্কার তুলে অরাজকতার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাইলেও তা পারেনি। তাই রাজপথ, জনপদও পারেনি কাঁপিয়ে তুলতে। ব্যর্থতার ক্ষোভ থেকে আবার বেছে নিয়েছে সহিংসতার পথ। চায় এমন নৈরাজ্য তৈরি করতে, যাতে পুরো দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করে। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনকারীরা আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির আড়ালে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার লক্ষ্যকে সামনে রেখে যে হরতাল পালন করছে, তা মূলত সরকারের গদি সামান্য টলটলায়মান করতে না পারলেও জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তোলায় ভূমিকা পালন করছে। দলীয় নেতা গ্রেফতারের প্রতিবাদে ডাকা হরতাল শান্তিপূর্ণ নয়, সহিংসতায় ভরপুর। অশান্তির উপকরণ সর্বত্র ছড়ানো। তাদের নৈরাজ্যের মাসুল দিতে প্রাণ হারিয়েছেন নোয়াখালীতে দুই সন্তানের জননী এক শিক্ষিকা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আরও কয়েকজন। হরতালকারীরা যে লাশ চেয়েছিল তা পেয়েছে বটে, কিন্তু এই লাশ তাদের ক্ষমতায় বসানো দূরে থাক বরং রাজনীতির অতল অন্ধকার গহ্বরে নিয়ে যাবে। কারণ রাজনীতি মানুষ তথা দেশবাসীর জন্য। কিন্তু সেই মানুষকে হত্যা করে, নাশকতা চালিয়ে সরকার উৎখাত বা ক্ষমতা দখল দিবাস্বপ্ন বা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। সরকারের উচিত নাশকতায় জড়িতদের কঠোরভাবে দমন করে জনজীবনের শান্তি ও স্বস্তি বহাল রাখায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
×