ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উত্তর আমেরিকান বঙ্গ সম্মেলনের ঢাকা প্রাক-উৎসব বাংলা একাডেমিতে

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪

উত্তর আমেরিকান বঙ্গ সম্মেলনের ঢাকা প্রাক-উৎসব বাংলা একাডেমিতে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী বছরের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের হিউজটনে অনুষ্ঠিত হবে ৩৫তম উত্তর আমেরিকান বঙ্গ সম্মেলন। সেই সম্মেলনের সূচনা হলো বাংলাদেশে। মঙ্গলবার শীতের বিকেল ও সন্ধ্যাজুড়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হলো সম্মেলনের ঢাকা প্রাক-উৎসব। বাংলার ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প প্রদর্শনীর সঙ্গে নৃত্য-গীত ও আবৃত্তির বর্ণিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা দিয়ে সাজানো হয় উৎসব। সঙ্গে ছিল উচ্ছ্বাসমুখর আড্ডা, পিঠা ও চা চক্র এবং বাংলা ভাষার অনুরাগীদের বাংলা অভিধানের প্রদর্শনী। এ উৎসবের আয়োজন করে উত্তর আমেরিকান বঙ্গ সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি বাংলাদেশ। দুই পর্বে সাজানো হয় উৎসব। বিকেলের পর্বে একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে বসে উৎসবের উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। এ পর্বে ছিল আলোচনা ও লোকসঙ্গীতের পরিবেশনা। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, ভারতের প্রস্তুতি কমিটির সমন্বয়ক সত্যম রায় চৌধুরী ও উত্তর আমেরিকান বঙ্গ সম্মেলনের সভাপতি শঙ্কু বোস। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রস্তুতি কমিটির সমন্বয়ক এ এস এম সামছুল আরেফিন। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রস্তুতির কমিটির সদস্য সচিব বাচিকশিল্পী হাসান আরিফ। আনিসুজ্জামান বলেন, উত্তর আমেরিকান বঙ্গ সম্মেলন একটি বড় উৎসব। পৃৃথিবীর নানা দেশের বাংলাভাষী মানুষেরা এই উৎসবে উপস্থিত হন। বর্তমানে এটি সংস্কৃতির মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। শামসুজ্জামান খান বলেন, বাঙালী উৎসবপ্রিয় জাতি। তাই পৃথিবীর যেখানেই বাঙালী থাকে সেখানেই অনুষ্ঠিত হয় উৎসব। এসব উৎসবের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয় বাঙালীর যাপিত জীবনের সৌন্দর্য। এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় সম্প্রীতির পরিবেশ। প্রকাশিত হয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা। এরপর তিনি মজা করে বলেন, বাঙালীর কাছে উৎসবটা এতই প্রিয় যে মনে হয় তারা স্বর্গে গেলেও উৎসব করার চেষ্টা করবে। এ পর্বের আলোচনা শেষে খোলা আঙিনায় ভেসে বেড়ায় মাটির গানের সুর। শুরু হয় লোকসঙ্গীতের পরিবেশনা। মেঠো সুরে নানা আঙ্গিকের লোকজ গান শোনান শ্যামল পাল ও দিল বাহার। তাঁদের পরিবেশিত কয়েকটি গানের শিরোনাম ছিলÑ ‘ভাটির গাঙ্গের নাইয়া’, ‘দীনবন্ধুরে আমায় দিন কি এমনি যাবে বইয়া’, ‘তুমি জানো নারে প্রিয় তুমি মোর জীবনের সাধনা’, ‘সুজন বন্ধু কোন বা দেশে থাক’, ‘আমি চাহিয়া দেখি নাই’। সান্ধ্যকালীন দ্বিতীয় পর্বের আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে। এ পর্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সম্মেলন প্রস্তুতি বাংলাদেশ কমিটির পক্ষে আবেদ খান, সম্মেলনের মূল আয়োজক হিউস্টন টেগোর সোসাইটির সভাপতি রুমা আচার্য দে সরকার, কলকাতা পৌরসভার প্যানেল মেয়র দেবাশীষ কুমার প্রমুখ। দেবাশীষ কুমার বলেন, প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি ছাড়া বঙ্গ সম্মেলন হয় না। এতকাল বাংলাভাষীদের এ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হলেও তাতেও বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা ছিল না। উদ্যোক্তারা ৩৫তম সম্মেলনে এসে বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন। এটি হবে এবারের সম্মেলনের স্বার্থকতা। কারণ, এই দেশ হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও জীবনানন্দের বাংলাদেশ। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, এদেশে এসে মনে হচ্ছে বিদেশে এসেছি। মনে হচ্ছে প্রতিবেশীর বাড়িতে এসেছি। আলোচনা শেষে শুরু হয় নাচ-গান কবিতা ও নাট্যগীতিতে সাজানো দ্বিতীয় পর্বের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন বাকশিল্পী হাসান আরিফ। বুলবুল ইসলাম পরিবেশন করেন ‘এ মনিহার আমায় নাহি সাজে’, ‘ডাকব না ডাকব না এমন করে’ ও ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি’। শারমীন সাথী ইসলাম ময়নার কণ্ঠে গীত হয় ‘আমায় আপনার চেয়ে আপন যে জন’, ‘চেয়ো না সুনয়না’ ও ‘সখী আমি না হয় মান করেছি’। লালনের গান শোনান শফি ম-ল। তিনি একে একে পরিবেশন করেন ‘হেলায় হেলায় দিন বয়ে যায়’, ‘চাতক বাঁচে কেমনে’ ও ‘রাত পোহালে পাখি চলে দে রে খাই’। এছাড়া সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইলোরা আহমেদ শুক্লা ও অদিতি মহসিন। নাট্যগীতি ও সংলাপে সজ্জিত কোলাজ পরিবেশনা উপস্থাপন করেন মঞ্চকুসুম শিমুল ইউসুফ। বিনোদিনী, যৈবতী কন্যার মন, হাতহদাই ও চাকাÑএই চারটি মঞ্চনাটকের নাট্যগীত ও সংলাপ পরিবেশন করেন তিনি। নৃত্য পরিবেশন করেন পশ্চিমবঙ্গের নৃত্যশিল্পী দেবলীনা কুমার। রমনায় তিন দিনের পৌষমেলা ॥ শান্তির পায়রা উড়ুক পৌষের আকাশে সেøাগানে শুক্রবার থেকে রমনা বটমূলে শুরু হচ্ছে পৌষমেলা। এই নিয়ে ১৭তম এ মেলার আয়োজন করছে পৌষমেলা উদ্্যাপন পরিষদ। সহযোগিতায় রয়েছে হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ ওয়াকফো বাংলাদেশ।
×