ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হরতালে বিএনপির অর্জন শূন্য, নেতাকর্মীরা হতাশ

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪

হরতালে বিএনপির অর্জন শূন্য, নেতাকর্মীরা হতাশ

শরীফুল ইসলাম ॥ এ যাত্রায়ও হরতাল ডেকে রাজনৈতিকভাবে ফায়দা হাসিল করতে পারল না বিএনপি। বহু জল্পনা-কল্পনার পর হাঁকডাক দিয়ে হরতাল ডাকলেও তা সফল করতে বিএনপি জোটের নেতাকর্মীরা মাঠে নামেননি। এ কারণে এ যাবতকালে বিএনপি যত হরতাল পালন করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে ফ্লপ হয়েছে সোমবারের হরতাল। অভিজ্ঞ মহলের মতে এ হরতালে বিএনপির অর্জন শূন্য। এদিকে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে হরতাল ডেকে উল্টো বিএনপিই রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় পড়ে যাওয়ায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়েছে। সূত্র মতে, বিএনপি হাইকমান্ড মনে করেছিল যে কোনভাবে এবারের হরতাল কর্মসূচীটি সফল করতে পারলে পর পরও আর ক’টি হরতাল পালন করে সরকারকে বড় ধরনের চাপে ফেলবে তারা। এর পাশাপাশি সুশীল সমাজ ও বিদেশী কূটনীতিকদের মাধ্যমে চারদিক থেকে সরকারকে চাপে ফেলে দ্রুত আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করবে। এর মাধ্যমে একদিকে বর্তমান সরকারের অবস্থান দুর্বল করে দেয়া এবং অপরদিকে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে চাঙ্গা করার কৌশল নিলেও শেষ পর্যন্ত সাফল্যের মুখ দেখতে পারেনি তারা। এতে বিএনপির পরবর্তী আন্দোলনের সব কৌশলই ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। জানা যায়, বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে না নামায় জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতাকর্মীরাও এবারের হরতালে আগের মতো মাঠে নামেনি। সকালের দিকে কোন কোন এলাকায় জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা রাজপথে নেমে হরতালের পক্ষে ঝটিকা মিছিল করলেও পরে খোঁজখবর নিয়ে যখন জানতে পারে বিএনপি নেতারা মাঠে নামেনি তখন তারাও রাজপথ ছেড়ে চলে যায়। হরতাল সহিংসতা যে জনগণ আর পছন্দ করছে না তা এবারের হরতাল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায়। এক সময় হরতাল মানে ছিল আতঙ্ক। তাই মানুষ হরতালে ঘর থেকে বের হতো না। কিন্তু হরতাল ডেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা ঘরে বসে জনগণের সঙ্গে তামাশা করায় এ ধরনের হরতাল এখন মানুষের কাছে খেলো হয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে হরতাল ডেকে যারা মাঠে নামে না তারা কেন বার বার হরতালের নামে মানুষকে কষ্ট দেয়। এতে কি হরতালকারীরা লজ্জা পায় না? বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে সোমবার সারাদেশে বিএনপি জোটের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল প্রত্যাখ্যান করে কর্মব্যস্ত মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে আসায় যানবাহন চলাচলসহ সব কিছুই ছিল স্বাভাবিক। তবুও হরতালের নামে বোমাবাজি, গাড়ি ভাংচুর ও রাস্তায় পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বেলে আতঙ্ক সৃষ্টির ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে বিএনপি জোট। সোমবার হরতালের নামে নাশকতার মাধ্যমে এক স্কুল শিক্ষিকা হত্যা, বেশ ক’জনকে অগ্নিদ্বগ্ধ করাসহ অসংখ্য যানবাহন ভাংচুর ও জ্বালাও পোড়াও করে বিএনপি জোট জনমনে ঘৃণার সৃষ্টি করেছে। মানুষ এখন এমনও বলছে হরতাল ডেকে যারা মাঠে নামে না তাদের হরতাল কার বিরুদ্ধে, জনগণের বিরুদ্ধে? আর প্রতিটি হরতাল ডাকার পরই বিএনপি নেতারা বলেন, জনগণ স্বতঃস্ফুর্তভাবে হরতাল পালন করবে। কিন্তু এর জবাবে কেউ কেউ বলে থাকেন হরতাল আহ্বানকারীরাই যেখানে ঘরে বসে থাকে সেখানে জনগণের কি ঠেকা লেগেছে যে তারা বিএনপি জোটের হরতাল সফল করবে? উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ মাঠে জনসভা করতে না দেয়ার সরকারী সিদ্ধান্তের পর থেকেই খালেদা জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতারা ধারাবাহিকভাবে বলতে থাকেন এ সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যায় না। তারা এ সরকারের পতন ঘটাতে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান। খালেদা জিয়া নিজেও রাস্তায় নামবেন বলে ঘোষণা দেন। এ পরিস্থিতিতে সবাই ধরে নিয়েছিল এবার হয়ত সরকার বেকায়দায় পড়ে যাবে। কিন্তু সরকারও বিএনপির আন্দোলনের বিষয়টিকে মাথায় রেখে তা মোকাবেলায় নানামুখী কৌশল গ্রহণ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদেরও তৎপর রাখা হয়। আর এ কারণেই বিএনপি জোটের নেতাকর্মীরা রাজপথে নামার সাহস দেখায়নি বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে। সম্প্রতি লন্ডন প্রবাসী বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজাকার’ বলে সারাদেশে নিন্দার ঝড় তোলেন। ছাত্রলীগ ঘোষণা দেয় তারেক রহমান তার এ বক্তব্য প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা না চাইলে খালেদা জিয়াকে গাজীপুরে জনসভা করতে দেয়া হবে না। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও খালেদা জিয়াকে তারেক রহমানের জিভ সামলাতে বলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ করার বিষয়ে ক্ষমা না চেয়ে যে কোন মূল্যে গাজীপুরে জনসভা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এ পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগও একই স্থানে একই দিনে সমাবেশ করার ঘোষণা দিলে ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এর ফলে সেখানে আর জনসভা করতে পারেননি খালেদা জিয়া। গাজীপুরে খালেদা জিয়াকে জনসভা করতে না দেয়ায় ২৭ ডিসেম্বর ওই জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে বিএনপি জোট। কিন্তু এই হরতালের দিনে সবকিছুই ছিল স্বাভাবিক। বিএনপি জোটের হরতালের নামে নাশকতা প্রসঙ্গে মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা হরতাল ডেকে নিজেরাই ঘরে বসে থাকে। আর নাশকতা চালিয়ে মানুষ মারে। সোমবার হরতালের নামে ব্যাপক নাশকতা চালিয়ে এক স্কুল শিক্ষিকাকে মারল, যানবাহন ভাংচুর করল। এর মাধ্যমে তারা কি পেল। এ হরতালে তাদের অর্জনই বা কি-কেন এবং কার বিরুদ্ধে তারা হরতাল পালন করল। এভাবে হরতালের নামে মানুষ মারাকে আর বরদাশ্ত করা হবে না। অবশ্য মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার পতনের আন্দোলন তীব্র করতে বিএনপি বৃহত্তর স্বার্থে কৌশলে এগোচ্ছে। বিএনপি কারও দয়ায় নয়, নিজ শক্তি ও জনগণের ভালবাসা নিয়ে রাজনীতি করে। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তাই গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন করে। আমরা আন্দোলনে আছি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করব। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের হরতাল কর্মসূচী ছিল অহিংস ও শান্তিপূর্ণ। তবে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে পারেনি। তাই বলে এ হরতাল সফল হয়নি বলা যাবে না। অনেক জায়গায় পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর সরাসরি গুলি চালিয়েছে। তবে দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই হরতাল পালন করেছে।
×