ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দর নামের ফুল হরেক রং, পবিত্র অনুভূতি

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪

সুন্দর নামের ফুল হরেক রং, পবিত্র অনুভূতি

মোরসালিন মিজান ॥ খুব সুন্দর নাম। চন্দ্রমল্লিকা। চন্দ্রমুখীও। দুটোই সুন্দর নাম। ততোধিক সুন্দর দেখতে ফুল। সঙ্গত কারণেই প্রিয়। পরিচিত। মোটামুটি সারা বছর দেখা মেলে। তবে এটি শীতের ফুল। এরই মাঝে নিজেকে মেলে ধরেছে। বাইরের দেশে ফুলটির নাম ক্রিসেনথিমাম। এ দেশে চন্দ্রমল্লিকা। হ্যাঁ, চন্দ্র বা চাঁদ থেকে চন্দ্রমল্লিকা নাম। দুয়ের মাঝে সংযোগ স্থাপন করেছে উভয়ের সৌন্দর্যের গুণ। চাঁদের মতোই সুন্দর ও আকর্ষণীয় চন্দ্রমল্লিকা। অক্টোবরে কুঁড়ি আসে। নবেম্বর থেকে ফুল ফোটার শুরু। এখন এই ডিসেম্বরে বাগান ভরে উঠেছে। চন্দ্রমল্লিকা লম্বা ডাঁটাসহ তুলে এনে ফুলদানি সাজাচ্ছেন শৌখিন গৃহিণীরা। বালিকারা-তরুণীরা ডাঁটা থেকে ফুল আলাদা করে মালা গাঁথছে। অন্য যে কোন ফুলের চেয়ে এ ফুলের আয়ু বেশি হয়ে থাকে। অনেকে জেনে অবাক হবেন- ফুলটি ২০ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত তাজা অবস্থায় গাছে থাকে। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মা জানান, চওড়ায় এই ফুল ৬ থেকে ১০ সেন্টিমিটার। পাপড়ির কিনার লম্বা উঁচানো। মোড়ানো ধরনের। সরু ও চ্যাপ্টা। অনেকটা সূর্যমুখী ফুলের মতো দেখতে। কবিরাও তাই বিভ্রান্ত হয়েছেন। তারাপদ রায় লিখেছিলেন- কোনটা যে চন্দ্রমল্লিকার ফুল/ আর কোনটা যে সূর্যমুখীÑ বার বার দেখেও/ আমার ভুল হয়ে যায়,/ আমি আলাদা করতে পারি না...। আলাদা করতে না পারার অন্যতম কারণÑ চন্দ্রমল্লিকার অসংখ্য জাত। জানা যায়, শুধু থাইল্যান্ডে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার জাতের চন্দ্রমল্লিকা হয়। পাপড়ির গঠন ও ফুলের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চন্দ্রমল্লিকা কয়েকটি শ্রেণীর হয়ে থাকে। হেয়ারি, কেয়ারি, জাপানিজ, ইনকারভড, পমপরা ইত্যাদি এ ফুলের উন্নত জাত। চন্দ্রমল্লিকার অনেক রং। সাদা, হলুদ, মেরুন, হালকা গোলাপী, কালচে লালÑ সবই গায়ে মেখে আছে। না, একটি ফুল একাধিক রং ধারণ করে না। একেকটি একেক রঙের হয়। সাদা যেটি, শুধু সাদা। লালটি লাল শুধু। সাদা রং চন্দ্রমল্লিকা শুদ্ধতার প্রতীক। পবিত্র আবহ তৈরিতে দারুণ ভূমিকা রাখে। এ বিবেচনায় প্রিয়জনের কফিনে, সমাধির ওপর ছড়িয়ে দেয়া হয় সফেদ সাদা ফুলটি। বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে এ দৃশ্য বেশি চোখে পড়ে। ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, ক্রোয়েশিয়ায় সাদা চন্দ্রমল্লিকায় শেষ বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। মৃত ব্যক্তির স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বা প্রার্থনা সভায়ও সাদা ফুলটি অপরিহার্য। এইটুকুন জেনে কেউ কেউ ভেবে বসতে পারেন, সাদা চন্দ্রমল্লিকা গভীর শোক বেদনা আর পরিতাপের কালেই প্রাসঙ্গিক। আদতে তা নয়। বিয়ের অনুষ্ঠানেও চন্দ্রমল্লিকার বিশেষ ব্যবহার হয়ে আসছে। নবদম্পতির শুভ কামনায় সাদা চন্দ্রমল্লিকা উপহার দেয়া হয়। জন্মদিনেও তাই। চন্দ্রমল্লিকার, আগেই বলা হয়েছে, অনেক রং। যখন যেটা দরকার, ব্যবহার করা যায়। ফলে খুব সহজেই আনন্দঘন উৎসব অনুষ্ঠানে অনিবার্য হয়ে ওঠে ফুলটি। জাপানে শুধু এই ফুলে বড় একটি উৎসব হয়। উৎসবের নামÑ ফ্যাস্টিভ্যাল অব হ্যাপিনেস। এ প্রসঙ্গে বলা জরুরী, চন্দ্রমল্লিকা জাপানের জাতীয় ফুল। জানা যায়, জাপানে অষ্টম শতকে এ ফুলের চাষ শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। একপর্যায়ে এটি প্রবেশ করে আশপাশের দেশগুলোতে। পনেরো শতকে চাষ শুরু হয় চীনে। চীন ও কোরিয়া ফুলটিকে বিশেষভাবে আপন করে নিয়েছে। দেশগুলো ফুলটিকে নিজেদের জ্ঞান করে। চন্দ্রমল্লিকা ১৭ শতকে আসে ইউরোপে। বর্তমানে প্রায় সব দেশেই হয়। বাংলাদেশে দীর্ঘকাল ধরে আছে চন্দ্রমল্লিকা। দেশের প্রায় সব এলাকায় দেখা যায়। ঘ্রাণ না থাকলেও, ফুলপ্রেমীরা এর রূপে গুণে মুগ্ধ। বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ করেন বহু ফুলব্যবসায়ী। শাহবাগের ফুলের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন রঙের চন্দ্রমল্লিকা সাজানো। প্রতিটির দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা। একটু বেশিই মনে হবে। তাই বলে বিক্রি থেমে নেই। রূপ গুণ দিয়ে এমনই মুগ্ধ করে রেখেছে চন্দ্রমল্লিকা!
×