ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪

ঢাকার দিনরাত

গডজিলাকে ছেলেবুড়ো সব্বাই চেনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে মার্কিন পারমাণবিক হামলার পর তেজস্ক্রিয়তায় সৃষ্ট মহাদানব গডজিলাকে প্রথমবারের মতো পুরো বিশ্বে পরিচয় করিয়ে দেন জাপানী পরিচালক ইশিরো হন্ডা। তাঁর ১৯৫৪ সালের সিনেমা ‘গডজিলা’র পর থেকেই পারমাণবিক হামলার ঋণাত্মক প্রতিক্রিয়ার রূপক হিসেবে পপ সংস্কৃতিতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই কাল্পনিক চরিত্রটি। ওই সময়ের পর থেকে জাপানী এই আইকনিক মনস্টার মুভি হলিউডে রিমেক হয়েছে বহুবার। এমনকি টিভি এবং এ্যানিমেশন সিরিজ হিসেবেও একাধিকবার আবির্ভাব ঘটেছে গডজিলার। এ বছর হলিউড নির্মিত সায়েন্স ফিকশন মুভি ‘গডজিলা’ যথারীতি বক্স অফিস হিট হয়েছে। মগবাজার ক্রস করলে, তা বাংলামোটর দিক দিয়ে আসি কিংবা সাতরাস্তা হয়ে, মনে পড়ে গডজিলা নামের বিরাটাকায় দৈত্যের কথা। দানবটি যেন রাজধানীর এই সড়কটির শরীরের নানান অংশে নখর দিয়ে ছিন্নভিন্ন করেছে। ‘সৃষ্টির জন্য ধ্বংস’ আপ্তবাক্যটি মেনে নিলে অসুবিধে নেই। কিংবা যদি ভাবি এ এলাকায় ছোটখাটো একটা ভূমিকম্প হয়েছিল তাহলেও সান্ত¡না পাব। তা না হলে কেবল মেজাজই বিগড়াবে। বাংলা মোটর-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে গিয়ে নির্মাতা কর্তৃপক্ষ যে হাল করেছেন রাস্তাটার তাতে শুধু মেজাজ কেন, শরীরও বিগড়ে যাবার কথা। ইস্কাটন-মগবাজার-মালিবাগ মোড় এবং মৌচাক-মালিবাগ রেলগেট-শান্তিনগর এলাকা জুড়ে কয়েক লাখ মানুষকে জিম্মি করে এই ফ্লাইওভারের কাজ চলছে তো চলছেই। আসলে কি চলছে? রাস্তাগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বহু আগেই। ঢাকা শহরে এর আগেও উড়ালপথ এবং উড়ালসেতু নির্মিত হয়েছে। সাময়িক ভোগান্তিও হয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকা দিয়ে চলাচলকারী মানুষের। কিন্তু এটার মতো এমন জটিল দুরবস্থায় আর পড়েননি ঢাকাবাসী। কাজটা শুরু হয়েছিল গত বছরের একেবারে গোড়ার দিকে। এ প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল দু’বছরের মধ্যে অর্থাৎ চলতি বছর ১৫ নবেম্বরের ভেতর। এ প্রকল্পের অগ্রগতির কথা বলতে গেলে মনে পড়ে যায় সুনীলের কবিতার চরণ, Ñ‘কেউ কথা রাখেনি’। দু’বছর শেষ হতে চলল, অর্ধেক কথা রাখলেও হয়ত চলত। দেখেশুনে মনেই হয় না যে সিকিভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে, তা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যতই দাবি করুক না কেন। এর মধ্যে কয়েক দফা মন্ত্রী মহোদয় এসে পদধূলি দিয়ে গেছেন। নাকি পায়ে ধূলি মেখে গেছেন! প্রথম দফা তো ক্ষোভ লুকোতে পারেননি বাকপটু এই মন্ত্রী। বলেছিলেন- সাত দিনের মধ্যে এই রাস্তা ঠিক করা না হলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ জানাবেন। মন্ত্রীর কথায় এলাকাবাসী অবশ্য কোন উপকার পাননি। বর্ষার ভেতর কাদায় মাখামাখি হয়ে পথ চলা, বাদবাকি মৌসুমে নাকে রুমাল চেপে (ধুলো আর আবর্জনার দুর্গন্ধ) চলা কোনমতেই গা সওয়া হচ্ছে না। গত সপ্তাহে সেই মন্ত্রী মহোদয় আবার এসেছিলেন এই ফ্লাইওভারের কাজ দেখতে। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে নির্দেশ দিয়ে গেলেন। এবার কি কাজ হবে? তার আলামত তো মিলছে না। সেই একই তিমিরে পড়ে আছেন জনসাধারণ। রাস্তাটার বুকের মাঝখান দিয়ে বড় বড় পিলার প্রোথিত হওয়ায় দুইমুখী যান চলাচলের পরিসর যথেষ্ট ক্ষীণকায় হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে যেসব যান এই রাস্তা ব্যবহার করছে কিংবা এই রুটের বাসগুলো চলছে, তাদের ঝক্কির শেষ নেই। নির্মাণ কাজ হবে নাগরিকদের অসুবিধার বিষয়টি বিবেচনা করেই। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কথাটি মাথায় রাখতে হবে সবার আগে। রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে না নানা সামগ্রী। এইসব সাধারণ বিবেচনাগুলোকে যারা বুড়ো আঙুল দেখান তাদের শুধু নিন্দাবাদ জানিয়ে কি ক্ষোভ মিটবে? এই রাস্তা বলে নয়, ঢাকার বহু রাস্তায় অরাজকতা চলছে। একটু চোখ খুলে তাকালেই দেখবেন। রিক্সাঅলারা ডান-বাম যে যেদিকে পারছেন সেদিকে প্যাডেল মারছেন, মানুষও তা থেকে প্রেরণা নিয়ে স্বেচ্ছাচারী পথচারী হয়ে বসছেন। যত্রতত্র রাস্তা পার হচ্ছেন। গাড়িঅলারাও কম যান না। বামে চলার সাধারণ নীতিকে জলাঞ্জলি দিয়ে ডানপন্থী হয়ে যাচ্ছেন বহুজন। তাদের যানবাহন নিরীহদের জান নিয়ে টানাটানি করছে। বাংলা একাডেমির এজিএম লেখকদের পুনর্মিলনী বছরের শেষ শুক্রবার বাংলা একাডেমির বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হওয়া যেন রীতিতে পরিণত হয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। প্রচ- শীত উপেক্ষা করে বেশ সকাল থেকেই যথেষ্ট সংখ্যক লেখক-পাঠক-বুদ্ধিজীবী এসে উপস্থিত হতে শুরু করেন একাডেমি প্রাঙ্গণে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকসমাগমও বেড়েছে প্রচুর। মহাপরিচালক কর্তৃক বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন, ফেলো-জীবন সদস্য- সদস্যদের অম্লমধুর জিজ্ঞাসা, একাডেমি কর্তৃপক্ষের জবাব এবং কয়েকটি বিশেষ পুরস্কার ও ফেলোশিপ প্রদান- এইসব আনুষ্ঠানিকতা থাকে বটে। তবে আসল আকর্ষণ হলো পরস্পরের সঙ্গে দেখাসাক্ষাত এবং নির্মল আড্ডায় মেতে ওঠা। মাঝে দল বেঁধে দুপুরের আহার সারা। ফের গল্প-গুজবে আনন্দে ভাললাগায় গোটা দিনটা পার করে দেয়া। ছয়টি ফেলোশিপের পাশাপাশি এবার তিনটি পুরস্কার প্রদান করা হয়। কবিতা, শিশুসাহিত্য এবং গবেষণাকর্মÑ তিনটি শাখায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার পেলেন যথাক্রমে কবি আসাদ চৌধুরী, শিশুসাহিত্যিক মাহমুদউল্লাহ এবং লেখক-গবেষক ড. ফজলুল আলম। এই তিনটি পুরস্কার আবার তিন বিশিষ্ট লেখকের নামে। এঁরা হলেন মযহারুল ইসলাম, কবীর চৌধুরী এবং সা’দত আলি আখন্দ। পুরস্কৃত লেখক ফজলুল আলম বর্ধমান হাউসের মাঠে বন্ধুদের নিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন। গত বছর মারণব্যাধির শিকার হয়েছিলেন, বড় অপারেশন হয়ে গেছে কে বলবে! দূর থেকেই তাঁর হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। ড. গোলাম মুরশিদ এসে তাঁকে অভিনন্দিত করলেন। ড. আলম আমাকে দেখেই বললেন, এত দেরি কেন? জানা গেল একাডেমি কর্তৃপক্ষ পুরস্কৃত লেখকদের সকাল নয়টার মধ্যে চলে আসার অনুরোধ জানিয়েছিল। ড. আলম বললেন, ঠিক ন’টা দশে সাগর (তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর) চলে এসে আমাকে ফোন দিয়েছে। বললাম, টাকা না চেক? প্রথমে না শোনার ভান। পাশেই দাঁড়ানো এক ভদ্রমহিলা প্রশ্নটির পুনরাবৃত্তি করলেন। অগত্যা উত্তর আসল। হেসে বললেন, আমি তো দেখিনি। পদক, সনদ, খাম আর কী কী যেন ছিল ব্যাগটায়; সাগরের কাচে জমা রেখেছি। ও তো চলে গেল। হাসির হুল্লোড় উঠল। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক-আনোয়ারা সৈয়দ হক মাঠে প্রবেশ করতেই অনেকে ছুটে গেলেন তাঁদের কাছে। পরদিনই সৈয়দ হকের আশিতম জন্মদিন। তাঁকে আগাম সম্ভাষণ জানানোর সুযোগ অনেকেই হারাতে চাইলেন না। নাট্যকার মমতাজউদ্দীন আহমদ বেশ দেরি করেই এলেন। ততক্ষণে মধ্যাহ্নভোজের টেবিল তন্দ্রাচ্ছন্ন। তিন-চার শিফটে ভোজনপর্ব সমাপ্ত। তাতে কি। ছড়াশিল্পীরা এসকর্ট করে তাঁকে নিয়ে গেলেন খাওয়াতে। কনকনে ঠা-া হাওয়া বয়ে চলেছে, কারু কোনো ভ্রƒক্ষেপ আছে বলে মনে হলো না। পাঞ্জাবির ওপর হাফ হাতা সোয়েটার পরে সেই উত্তরা থেকে এসেছিলেন আমিনুল ইসলাম বেদু। মৌসুমের প্রথম দারুণ ঠা-ার দিনে এত অল্প পোশাক! হেসে বললেন, ভেবেছি অনেক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হবে; তাঁদের মনের উষ্ণতার পাশাপাশি শরীরের উত্তাপ আছে না। তাতে আর তেমন শীত লাগবে না বলে ভেবেছিলাম। এখন দেখি লাগছে। তিনি যে রীতিমতো কাঁপছেন সেটা আর বললাম না। এখন মানুষের মোবাইলেই ক্যামেরা থাকে। দল বেঁধে ছবি ওঠালেন অনেকেই। সেলফি তোলাও চলল হরদম। কেউ কেউ আবার পকেট থেকে ক্যামেরা বের করে ছবি তুলতে শুরু করলেন। ক্যামেরাম্যানও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন দুয়েকজন। কোন খ্যাতিমান লেখক কিংবা আড্ডারত দলের মাঝে ঢুকে গিয়ে উচ্চকণ্ঠে নির্দেশনা দিতে শুরু করলেন ক্যামেরাম্যানকে। ছবি তোলার জন্যে মনোরম একটা স্পট হয়ে উঠেছে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-লালনের বড় প্রতিকৃতি সজ্জিত ছোট্ট গ্রামীণ গৃহ। অনেকটা টেলিভিশনের সেটের মতো। এই ঠা-ায় এক কাপের বেশি চা খাওয়ার কথা তুললেন প্রবীণ নয়, একজন তরুণ লেখক। সেই সুযোগ নেই, কেননা অনেকেই তখনও চা পানের সুযোগই পাননি, তার আগেই গুটিয়ে গেছে চা পরিবেশনের উপকরণ। ফলে দু-তিনজন মিলে দু-চারটে টিম বানিয়ে চলেই গেলেন একাডেমির বাইরে চা খেতে। শীতের কমতি নেই, সূর্যের দেখাও মিলছে না। বিকেলের দিকে চা পরিবেশনের জন্যে একাডেমির এক কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা গেল কাছে পেয়ে। ফিসফিস করে বললেন, এমনিতেই আসল অনুষ্ঠানে তেমন লোক পাওয়া যাচ্ছে না লাঞ্চের পরে। আবার চা দেয়া হলে এই আড্ডা ছেড়ে বেশি লোক কি যেতে চাইবেন আলোচনা শুনতে? সত্যি বলতে কি, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লেখকগণ এসেছেন। বছরে এই একটা দিন সতীর্থ লেখকবন্ধুদের সান্নিধ্য পাবেনÑ এই সুযোগ কে আর ছাড়তে চান? বহুজন আছেন যাঁরা ঠিক তেমন একটা লেখেন না। একাডেমির সদস্য হওয়ার সুবাদে বার্ষিক সাধারণ সভায় আসেন। পছন্দের লেখকদের সঙ্গে পরিচিত হন। সেই সুখস্মৃতি নিয়ে ফিরে যান দেশের বাড়ি। এখন প্রবাসী লেখকরাও আসছেন এজিএম-এ যোগ দিতে। শিল্পাচার্যের জন্মশতবর্ষ এবং জয়নুল মেলা জাতীয় পর্যায়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হচ্ছে মহাসমারোহে। গতকাল এ উদযাপনের বর্ষব্যাপ্ত কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়ে গেল জাতীয় জাদুঘরে। তার বিশদ বিবরণ রয়েছে অন্যত্র। তাই পুনরাবৃত্তি এড়িয়ে জয়নুল মেলার সৌরভ দিতে চাইছি। গতকাল শিল্পাচার্যের জন্মদিবসেই শেষ হয়ে গেল চার দিনব্যাপী এই মেলা। যাঁরা যাননি, বলতে বাধ্য হচ্ছি তাঁরা মিস করেছেন। শিল্পাচার্যের হাতে গড়া শিল্প-শিক্ষাঙ্গন (প্রাক্তন আর্ট কলেজ, বর্তমানে ঢাবির চারুকলা ইনস্টিটিউট) ১৯৮৮ সাল থেকে তাঁর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ক্যাম্পাসে জন্মোৎসবের আয়োজন করে আসছে। বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী তারই একটি অংশ। এবারের আয়োজন বিরাট। চারুকলার মূল ভবন ঘিরে বসেছিল জয়নুল মেলা। লিচুতলাসহ গোটা প্রাঙ্গণেই উৎসবের উচ্ছ্বাস। ছোট-বড় ভাস্কর্য পুরো এলাকাটিকেই দিয়েছিল ভিন্ন আবহ। কাগজের পাখি ঝুলিয়ে দেয়া হয় ডাল থেকে। হঠাৎ নজর পড়লে সত্যিকারের পাখি বলে ভ্রম হতে পারে ছোটদের। প্রধানত চারুকলার শিক্ষার্থীরাই নিজ হাতে তৈরি বিভিন্ন শিল্পিত ব্যবহার্য পণ্য প্রর্দশন করছেন। এসব বিক্রিও হচ্ছে বেশ। সেইসঙ্গে কারুকর্মের কিছু স্টলও রয়েছে। শীতলপাটি, শখের হাঁড়ি, চিত্রিত সরা, কাঠের পুতুলসহ বিবিধ কারুপণ্যের প্রতি ক্রেতাদেরও রয়েছে মুগ্ধ দৃষ্টি। আবার মাঠের মধ্যে বিকিকিনি হয়েছে রঙিন কাগজের পাখি খাঁচাসমেত। শ্রেণীকক্ষগুলো পরিণত হয়েছে গ্যালারি বা শিল্পকর্ম প্রদর্শনশালায়। চিত্রকর্ম প্রদর্শনীতে যাঁরা যান তাঁরা অবশ্য চারুকলার প্রধান দুটি গ্যালারিতে আরও ক’দিন ছবি দেখতে পারবেন। এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে চারুকলার শিক্ষকদের চিত্রকর্ম। এ তো গেল লিচুতলার কাহিনী, এর পর রয়েছে বকুলতলার গল্প। চারুকলার শিক্ষার্থী ছিলেন এমন সঙ্গীতশিল্পী অনেকেই আছেন। যেমন সুমনা হক, কনক আদিত্য, কৃষ্ণকলি। অভিনয়শিল্পীও আছেন, আফজাল হোসেন, বিপাশা হায়াত এবং আরও অনেকে। শিল্পাচার্যের জন্মশতবর্ষের আয়োজনে এঁদের কেউ কেউ এসে পারফর্ম করেছেন। প্রথম সন্ধ্যাতেই ছিল কনক আদিত্যের গানের দল ‘জলের গান’-এর পরিবেশনা। মুক্ত আকাশের নিচে চারদিক খোলা আলোকিত মঞ্চে জলের গানের প্রতিটি গানের সঙ্গে অনেক তরুণ শিল্প-শিক্ষার্থীকেই দেখলাম কণ্ঠ মেলাতে। শুধু কি কণ্ঠ? শরীরও দুলিয়েছেন তালে তালে। হাজার হাজার দর্শকশ্রোতা প্রবল শীতের ভেতর যেন উত্তাপ সংগ্রহ করছিলেন। থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ফুর্তির সীমারেখা আগামীকাল বছরের শেষ সূর্য অস্তমিত হবে; মধ্যরাতে ঢাকা মেতে উঠবে ইংরেজী নববর্ষ বরণে। থার্টি ফার্স্ট নাইটের জন্যে অনেকেই ‘থার্স্টি’ থাকেন। ক্লাবে ক্লাবে জমকালো পার্টি হয়। তরুণেরা নেমে আসে রাস্তায় দল বেঁধে। মুহুর্মুহু বাজির শব্দে উৎসব হয় আরও মাতোয়ারা। উৎসবে স্ফূর্তি তো প্রাণেরই স্ফুরণ। তবে তার একটা সীমারেখা থাকা চাই। আমরা চাই উৎসব হোক শালীন, সভ্য, সুন্দর। আমার আনন্দ অন্যকে পীড়িত যেন না করে। অপরের কষ্ট ও বিরক্তি বাড়িয়ে যেন আনন্দলাভ না করি। মধ্যরাতে কেক কাটা হোক, বাজি ফোটানো হোক, চলুক খানাপিনা নাচগান। সীমা লঙ্ঘন না করলে অসুবিধে কী! কিন্তু নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে গিয়ে আমরা একেবারে নতুন কিছু কি করতে পারি না? থার্টি ফার্স্ট নাইটে আমরা কি দল বেঁধে আনন্দে গা ভাসিয়ে দিতে দিতে হঠাৎ করেই কমলাপুর রেল স্টেশন, কিংবা পথের ধারে ফুটপাথে অথবা কোনো বিহ্বল বস্তিতে গিয়ে শীতে কষ্ট পাওয়া মানুষের হাতে হাতে কম্বল তুলে দিতে পারি না? শুভ হোক নতুন বছর। হ্যাপি নিউ ইয়ার। [email protected]
×