ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাতিসংঘ ও ইইউয়ের আহ্বান প্রত্যাখ্যান পাকিস্তানের

ফাঁসি স্থগিত হবে না

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪

ফাঁসি স্থগিত হবে না

সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। দেশটি শনিবার বলেছে, সন্ত্রাসীদের দেয়া এই শাস্তি মৃত্যুদ- আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করছে না। পেশোয়ারে স্কুলে হামলার পর মৃত্যুদ- কার্যকরের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয় দেশটির সরকার। দেশটিতে ছয় বছর ধরে মৃত্যুদ- কার্যকরের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। খবর ডন ও ওয়েবসাইটের। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে ফোন করে মৃত্যুদ- স্থগিতে আহ্বান জানান। নওয়াজ তাকে আশ্বস্ত করেছেন, আইনের পথেই সব কিছু হবে। প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র মুসাদ্দিক মালিক বলেছেন, পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সম্মান রয়েছে। কিন্তু দেশ এখন বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে; যা বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানায়। তিনি আরও বলেন, শান্তিপূর্ণ পাকিস্তানের দিকেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ রয়েছে। অপরদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাসনিম আসলাম টুইটার পোস্টে বলেছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে সচেতন আছে পাকিস্তান। সন্ত্রাসীদের মৃত্যুদ- কার্যকরের ফলে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হচ্ছে না। বানের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, মহাসচিব বান কি মুন ২৫ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ নওয়াজ শরীফের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। দেশটির এমন কঠিন পরিস্থিতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েও মহাসচিব আসামিদের মৃত্যুদ- কার্যকর বন্ধে এবং মৃত্যুদ- কার্যকরে পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গত ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের পেশোয়ারে সামরিক বাহিনী পরিচালিত একটি স্কুলে তালেবান জঙ্গীদের হামলায় ১৩২ শিশুসহ অন্তত ১৪১ জন নিহত হয়। এরপরই সরকার দেশটির মৃত্যুদ- কার্যকরের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়। এরপরই বেশ কিছু আসামির মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। দেশটিতে প্রায় আট হাজার আসামিকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। তবে সরকার বলেছে, শুধু সন্ত্রাসবাদ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে মৃত্যুদ- কার্যকরের ওপর নিষেধাজ্ঞা রদ করা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দোষী সাব্যস্তের সংখ্যা প্রায় ১৭০। এর আগের সপ্তাহেই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদসংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলো বিচারে সামরিক আদালত গঠন করছে পাকিস্তান। দ্রুত বিচারের স্বার্থেই সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে বিশেষ আদালত গঠন করা হচ্ছে। দুই বছরের জন্য এসব আদালতের কার্যক্রম চলবে। এদিকে মৃত্যুদ- কার্যকরের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। পাকিস্তানে নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত লর্স-গুনার্স উইগমার্ক এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, আমরা মনে করি, সন্ত্রাসের সঙ্গে লড়াইয়ে মৃত্যুদ- কোন কার্যকর ব্যবস্থা নয়। ইইউ সব পরিস্থিতিতেই মৃত্যুদ-ের বিরোধিতা করে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, পাকিস্তান আবার মৃত্যুদ-ের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করবে। গত সপ্তাহের গোড়ার দিকে পাকিস্তানের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার জেইদ রাদ আল হুসেন। একই দাবি বিশ্বের বেশ কিছু মানবাধিকার সংগঠনেরও। কিন্তু বর্তমানে এসবে কান দিতে চায় না পাক প্রশাসন। দেশটির এক উচ্চপদস্থ আমলা জানান, জেলে থেকেও বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগ রাখছে তালেবান বন্দীরা। এখন কিছু অর্থের বিনিময়ে জেলে বসেই মোবাইল, নানা ধরনের যন্ত্রপাতি পেয়ে যাচ্ছে বন্দীরা। ফলে যোগাযোগ রাখাটা মোটেও অসুবিধাজনক নয়। তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে যা অবস্থা তাতে গোয়েন্দা সংস্থার সতর্কতা উপেক্ষা করা মানে আরও বিপর্যয় ডেকে আনা। পেশোয়ারের সেনা স্কুলে হামলার পর স্বাভাবিকভাবেই আর কোন বিপর্যয় চায় না পাক প্রশাসন।
×