ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আদালত প্রাঙ্গণে বিএনপি সমর্থকদের বিক্ষোভ, ধস্তাধস্তি ॥ পুলিশসহ আহত অর্ধশতাধিক

গউছ কারাগারে, হবিগঞ্জ রণক্ষেত্র ॥ গাড়ি ভাংচুর, গুলি

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪

গউছ কারাগারে, হবিগঞ্জ রণক্ষেত্র ॥ গাড়ি ভাংচুর, গুলি

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ, ২৮ ডিসেম্বর ॥ সাবেক অর্থমন্ত্রী শাম্স কিবরিয়া হত্যা মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি আলহাজ জিকে গউছের আদালতে আত্মসমর্পণ ও জামিন নামঞ্জুরকে কেন্দ্র করে রবিবার দুপুরে হবিগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় নির্বিচারে গাড়ি ভাংচুর, লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সদর থানার ওসিসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। শহরে বিরাজ করে থমথমে পরিস্থিতি। সড়কে যান চলাচল কমে যায়, বন্ধ হয়ে যায় অধিংকাংশ দোকানপাট। সাধারণ মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। রবিবার দুপুরে হবিগঞ্জ আমলী আদালত-১-এর বিচারক রোকেয়া বেগমের কাছে আত্মসমর্পণ করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আলহাজ জিকে গউছ। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হয় হাজার হাজার মানুষ। শহরের নেতাকর্মীরা ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছুটে আসে গউছ সমর্থক সাধারণ মানুষ। একপর্যায়ে হাজার হাজার জনতা আর বিএনপি নেতাকর্মীদের বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মাঝেই সংশ্লিষ্ট আদালতের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক শুরুর পর দীর্ঘ ৫৫ মিনিট রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি এ্যাডভোকেট আকবর হোসেন জিতু এবং বিবাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট খালেকুজ্জামান, এ্যাডভোকেট সালেহ আহমেদ, এ্যাডভোকেট সামছু মিয়া চৌধুরী, এ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন সেলিম, এ্যাডভোকেট মঞ্জুর উদ্দিন শাহীনের যুক্তিতর্ক শুনানির পর গউছের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিজ্ঞ বিচারক রোকেয়া বেগম। তাঁর এই নির্দেশের পর পরই গউছের মুক্তির দাবিতে বিএনপি নেতাকর্মী-সমর্থক আর শত শত জনতার মুহুর্মুহু সেøাগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে আদালত প্রাঙ্গণ। পুলিশ মেয়র গউছকে নিয়ে এজলাস থেকে বের হয়ে তাঁকে প্রিজনভ্যানে তোলার সময় বাধা দেয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে গউছ সমর্থকদের ধস্তাধস্তি। প্রিজনভ্যানে করে জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় গউছকে। এর পর পরই বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা শহরে জঙ্গী মিছিল বের করে। একপর্যায়ে সদর থানা, সার্কিট হাউস ও শায়েস্তানগরসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ও প্রধান সড়কের ওপর নির্বিচারে গাড়ি ভাংচুর ও ফুটপাথে থাকা ক্ষুদ্র দোকানপাটে আগুন দিতে শুরু করে নেতাকর্মীরা। পরে পুলিশ এ্যাকশনে নামে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে লিপ্ত হয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ প্রথমে মৃদু লাঠিচার্জ এবং পরবর্তীতে টিয়ারশেল ও শটগানের গুলি ছোড়ে। তার পরও নেতাকর্মীরা দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে ১৪ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ১৫০ রাউন্ড শটগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায় পুলিশ। এ সময় ইটের আঘাতে গুরুতর আহত হন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিনসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যাটারিচালিত আটটি টমটম, একটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকার এবং জেলা পরিষদ রেস্ট হাউস, গণপূর্ত ভবনসহ একাধিক দোকানপাট ভাংচুর করে। দীর্ঘ পৌনে দু’ঘণ্টা তুমুল এই সংঘর্ষে শহরে যানবাহন, দোকানপাট ও পথচারীদের চলাফেরা বন্ধ হয়ে যায়। পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। সংঘর্ষ চলাকালে রাসেল ও তানভীর নামে দুই ছাত্রদল কর্মীকে আটক করে পুলিশ। তারা সংঘর্ষের সঙ্গে যুক্ত নয় দাবি করে কলেজের ছাত্র পরিচয় দেয়। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সড়কগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
×