ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্মিথের দুরন্ত ব্যাটিং- অস্ট্রেলিয়ার রানের পাহাড়

মেলবোর্ন টেস্টে ভালই জবাব দিচ্ছে ভারত

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪

মেলবোর্ন টেস্টে ভালই জবাব দিচ্ছে ভারত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অধিনায়কের আর্মব্যান্ডের সঙ্গে ব্যাটিং-ছন্দ মেলাতে না পেরে খোদ ক্রিকেটঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকরও নুইয়ে পড়েছিলেন। নেতৃত্বের চাপে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে হতাশ করা ক্রিকেটারের উদাহরণও ইতিহাসে কম নয়। সেখানে ঘোর লাগানিয়া চমকের জন্ম দিয়ে চলেছেন স্টিভেন স্মিথ। এমনিতে ব্যাট হাতে ফর্মে ছিলেন। অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়ার পর ব্যাটটাকে তলোয়ার বানিয়ে অবিশ্বাস্য কা-ই করে চলেছেন ২৫ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান সেনাপতি। ব্রিসবেনে নেতৃত্বের অভিষেকে অপরাজিত ১৩৩ ও ২৮ রানের দুটি ইনিংস খেলে হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। চার টেস্টের সিরিজে ২-০তে এগিয়ে গিয়েছিল দল। এবার মেলাবোর্নের ‘বক্সিং ডে’ টেস্টের প্রথম ইনিংসে খেললেন ১৯২ রানের ম্যারথন ইনিংস। যার সৌজন্যে ৫৩০ রানে অলআউট হলেও প্রথম ইনিংসে শক্ত অবস্থানে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। জবাবে দ্বিতীয় দিন শেষে ১ উইকেটে ১০৮ রান করে সফরকারী ভারত পিছিয়ে ৪২২ রানে। ওপেনার মুরলি বিজয় ৫৫ ও চেতেশ্বর পুজারা ব্যাট করছেন ব্যক্তিগত ২৫ রান নিয়ে। দলীয় ৫৫ রানে শিখর ধাওয়ানকে (২৮) হারিয়ে ধাক্কা খায় ভারত। এরপরই বিজয়-পুজারার অবিচ্ছিন্ন ৫৩ রানের জুটিতে গড়ে ওঠে প্রতিরোধ। সিরিজ বাঁচিয়ে রাখার এ ম্যাচে ফলোঅন এড়াতে আরও ২২৩ রান চাই মহেন্দ্র সিং ধোনিদের। অবিচ্ছিন্ন এ জুটি ও নির্ভরযোগ্য বিরাট কোহলি ও অজিঙ্কা রাহানের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। অসিদের বিশাল সংগ্রের বিপরীতে জবাব দিতে নেমে ভারতীয়দের শুরুটাও মন্দ ছিল না। ১৪.২ ওভারে বিজয়-ধাওয়ানের উদ্বোধনী জুটি থেকে আসে ৫৫ রান। যদিও অপরাজিত থাকা বিজয় ব্যক্তিগত ১২ রানের মাথায় জশ হ্যাজলউডের বলে জীবন পান, এক হাতে লুফে নিতে গিয়ে ক্যাচটি হাতছাড়া করেন উইকেটরক্ষক ব্র্যাড হ্যাডিন। মেলবোর্ন টেস্টে অনেকটা ব্রিসবেনেরই পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এক প্রান্তে স্মিথের ড্যাশিং পারফর্মেন্স, অন্যদিকে যথারীতি অসিদের লোয়ার-অর্ডার ব্যাটিংয়ের দাপট। ২ উইকেটে ২৫৯ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করা অস্ট্রেলিয়া কাল শনিবার আর ৫ উইকেট হারিয়ে ৫২.৩ ওভারে আরও ২৭১ রান যোগ করে। হ্যাডিন-স্মিথের অবিচ্ছিন্ন জুটি এদিন ১১০ রান তোলে। মোহাম্মদ শামির শিকারে পরিণত হওয়ার আগে হ্যাডিন করেন ৫৫ রান। মিচেল জনসন-স্মিথের সপ্তম উইকেটে আসে ৫০ রান। তবে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ পাঁচ শ’ ছাড়িয়ে যায় মূলত অষ্টম উইকেট জুটিতে স্মিথ-হ্যারিসের ১০৬ রানের সৌজন্যে! স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে ৮৮ বলে ৭৪ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস খেলেন হ্যারিস। পেসার হ্যারিসের এটি তৃতীয় টেস্ট হাফ সেঞ্চুরি। স্মিথের কথা বিশেষভাবে না বললেই নয়। ‘লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট বলতে যা বোঝায়’, লোয়ার অর্ডার দিয়ে যেমন খেলালেন, তেমনি ব্যাট নিজেও খেললেন তরুণ অস্ট্রেলিয়ান সেনাপতি। পেসার উমেশ যাদবের বলে বোল্ড হওয়ার আগে খেললেন ১৯২ রানের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। মাত্র ৮ রানের জন্য জীবনের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত হওয়া স্মিথের ৩০৫ বলের ম্যারাথন ইনিংসটি ১৫ চার ও ২ ছক্কা দিয়ে সাজানো। স্মিথ কি রকম ফর্মে আছেন, তার উদারহরণÑ ‘প্রথম’ টেস্ট সেঞ্চুরি পেতে খেলেতে হয়েছিল ২৩ ইনিংস, আর পরের ২৪ ইনিংসেই হাঁকালেন ‘সাত’ সেঞ্চুরি! এর মধ্যে ভারতের বিপক্ষেই তিনটি, চলতি সিরিজের তিন টেস্টে! আবুধাবিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে হয়ে এ পর্যন্ত শেষ ছয় ইনিংসে স্মিথের স্কোরÑ ৯৭, ১৬২*, ৫২*, ১৩৩, ২৮ ও ১৯২!! বিস্রবেনে অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচে ১৩৩ রানের দুরন্ত ওই ইনিংস খেলে হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। ১৯২ রানে কাল ছাড়িয়ে গেলেন সেটিকেও। অনুভূতি জানিয়ে স্টিভেন স্মিত বলেন, ‘ক্রিজে দীর্ঘক্ষণ থাকতে পেরে ভাল লাগছে। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে লোয়ার-অর্ডারে সবাই দারুণ করেছে। ফলে আমরা পাঁচ শ’র ওপরে রান পেয়েছি।’ দুরন্ত এই ব্যাটিং সফরকারী ভারতীয়দের এ্যাগ্রেসিভনেসের জবাব কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমার মনে হয় না ভারতকে জবাব দেয়ার কিছু আছে! মিচেল জনসন, ক্রিস রজার্স সবাই ভাল ফর্মে আছে। আমরা বক্সিং ডে টেস্ট জিতে সিরিজ নিশ্চিত করতে চাই।’ ম্যাথু হেইডেনের পর টানা তিন টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকালেন স্মিথ। আর অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকের দুই টেস্টেই সেঞ্চুরি পাওয়া ইতিহাসের পঞ্চম ক্রিকেটার তিনি। স্কোর ॥ অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ৫৩০/১০ (১৪২.৩ ওভার; স্মিথ ১৯২, হ্যারিস ৭৪, রজার্স ৫৭, হ্যাডিন ৫৫, ওয়াটসন ৫২, শন মার্শ ৩২; সামি ৪/১৩৮, যাদব ৩/১৩০, অশ্বিন ৩/১৩৪), ভারত প্রথম ইনিংস ১০৮/১ (৩৭ ওভার; বিজয় ৫৫*, ধাওয়ান ২৮, পুজারা ২৫*; জনসন ১/২৪) । ** দ্বিতীয় দিন শেষে
×