রশিদ মামুন ॥ সরকারী-বেসরকারী বিদ্যুত কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ এবং দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনার জন্য নতুন একটি কোম্পানি করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নতুন এই কোম্পানির নাম হবে বিদ্যুত কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ কোম্পানি। শুরুতে বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ করবে কোম্পানিটি। বিদ্যুত কেন্দ্র পরিচলন এবং রক্ষণাবেক্ষণে অভিজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের কোম্পানিতে নিয়োগ দেয়া হবে। বিদ্যুত বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
বিদ্যুত বিভাগ সূত্র বলছে, এখন দেশে শতাধিক বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। এসব বিদ্যুত কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণে কোন পৃথক কোম্পানি নেই। কাজেই কেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণে সব সময় বিদেশ নির্ভর হতে হয়। অনেক সময় সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় বিদ্যুত খাত বাধাগ্রস্ত হয়। এসব বিষয় মাথায় রেখে সরকার পৃথক কোম্পানি করার উদ্যোগ নিচ্ছে। কোম্পানিটি হলে বিদ্যুত কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণে অভিজ্ঞ লোকবল তৈরি হবে এতে বিদেশ নির্ভরতা কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকার সারাদেশকে গ্রিড বিদ্যুতের আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে প্রত্যোকের ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। এই সময়ের মধ্যে দেশে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে দেশে নতুন নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। বিদ্যুত খাতের নতুন একটি মাস্টার প্লান-২০১৫ করছে সরকার। মাস্টার প্লানে ব্যাপকভাবে বিদ্যুত উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণে বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নেয়া হচ্ছে। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, এতদিন দেশে পর্যাপ্ত কেন্দ্র না থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ করা হতো না। এখন এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছে বিদ্যুত খাত। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করলে বিদ্যুত কেন্দ্রর উৎপাদন দক্ষতা ঠিক থাকে। এতে করে জ্বালানি সাশ্রয়ের সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রটির সঠিক উৎপাদন হার বজায় থাকে। কিন্তু আমাদের এখানে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পর রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টিতে অবহেলা করা হয়। এই অবস্থার পরিত্রাণ প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, নতুন এই কোম্পানিটি শীঘ্র গঠনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এই কোম্পানিটিতে প্রত্যেকটি বিদ্যুত কেন্দ্রর সকল তথ্য থাকবে। কতদিন পর পর রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। রক্ষণাবেক্ষণে কি ধরনের যন্ত্রাংশ প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ কোন দেশ থেকে আমদানি করা হবে। রক্ষণাবেক্ষণে বিদেশী কোন কোম্পানি সহায়তা প্রয়োজন কী না তা এই কোম্পানি নির্ধারণ করবে। বিদ্যুত বিভাগ বলছে দেশে সরকারের পুরাতন বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্র যেসব কোম্পানি নির্মাণ করেছিল তারা এখন আর এই নক্সার বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করে না। আবার অন্য কোন কোম্পানিও এই ধরনের যন্ত্রাংশ তৈরি করে না। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় বিদ্যুত কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বান করেও কোন কোম্পানির কাছ থেকে সাড়া মেলে না। তখন যৌথ দও কষাকষির মাধ্যমে কোন কোম্পানীকে কাজ দেয়া হলে খরচ বেশি পড়ে।
পিডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুত কেন্দ্র সংরক্ষেণের ক্ষেত্রে সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে দরপত্র প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হয়। বড় সমস্যা হলে ক্ষেত্র বিশেষ ছয়মাস থেকে এক বছর সময় প্রয়োজন হয়। এই সময়ে অনেক বিদ্যুত কেন্দ্রর উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। যথাসময়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হলে কেন্দ্রগুলো থেকে প্রয়োজনের সময় বিদ্যুত পাওয়া যেত। সূত্র জানায়, এখন পিডিবির বিদ্যুত কেন্দ্রর ক্ষেত্রে পরিচালক (ক্রয়) যন্ত্রাংশ ক্রয় করে আর বিদ্যুত কেন্দ্রর প্রকৌশলীরা কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ করে। তবে বড় ধরনের কোন সমস্যা হলে দেশের বাইরে থেকে দরপত্রের মাধ্যমে বিদেশী কোম্পানিকে কাজ দেয়া হয়। এছাড়া বেসরকারী কোম্পানির ক্ষেত্রে কোম্পানি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রর রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। নতুন কোম্পানি হলে সরকারী সব বিদ্যুত কেন্দ্রর রক্ষণাবেক্ষন তারা করবে। তবে বেসরকারী কোম্পানি চাইলে এদের মাধ্যমে কাজ করাতে পারবে। এতে রক্ষণাবেক্ষনে আর্থিক সাশ্রয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: