ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হার্ডলাইনে সরকার

প্রকাশিত: ০৭:০১, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪

হার্ডলাইনে সরকার

শংকর কুমার দে ॥ আগামী ৫ জানুয়ারি সামনে রেখে ‘ঢাকা অচল’ করার পরিকল্পনা করছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোট। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ‘হার্ডলাইন’ নিয়েছে সরকারও শতাধিক নেতাকর্মীর ওপর চালানো হচ্ছে গোয়েন্দা নজরদারি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে শুরু হয়েছে পুলিশের ‘বিশেষ অভিযান’। অভিযান চলছে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের কয়েকটি জেলায়। গ্রেফতার করা হচ্ছে জঙ্গী, সন্ত্রাসী, অপরাধী, গ্রেফতারি পরোয়ানার আসামিদের। রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে যে কেউ নাশকতা, নৈরাজ্য সৃষ্টি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করলে তাকেই গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের উচ্চ পর্যায় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ সদর দফতর থেকে দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার ও মেট্রোপলিটন কমিশনারদের কাছে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য করণীয় দিক নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। রাজধানীর হোটেল, মেস, বস্তি এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে বুধবার রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে দু’শতাধিক। যে কোন মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে সরকার। এ জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীকে। আগামী ৫ জানুয়ারি, সাক্ষরের ক্ষমতা লাভের বর্ষ পূর্তি। ব্যাপক আয়োজনের মাধ্যমে বর্ষপূর্তি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। অন্যদিকে ৫ জানুয়ারিকে গণতন্ত্র হত্যা ও কালো দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোট। দিনটি সামনে রেখেই মূলত শক্তি প্রদর্শনের মহড়া দিয়ে চলেছে সরকারী দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট। আদালতে দুর্নীতির দুই মামলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার শুনানির দিন হাজিরা দিতে গেলে রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের মহড়া দিতে গিয়ে দু’পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে রাজধানীর বকশীবাজারসহ আশপাশের এলাকা। সরকারী দলের সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাসের ওপর হামলা ও তাঁর গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনায় ছাত্রদল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দেড় শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে শাহবাগ ও চকবাজার থানায় পৃথকভাবে দায়ের করা দু’টি মামলায় পুলিশের কাজে বাধা, গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও ছবি বিশ্বাস হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। সূত্র জানায়, পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে বুধবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে বিশেষ অভিযান। রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ-মাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে বিশেষ অভিযান চলছে। ঢাকায় চেকপোস্ট, তল্লাশি অভিযান, মোবাইল টিম টহল জোরদার করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কোন রাজনৈতিক কর্মকা-ের আড়ালে কেউ বোমা হামলা কিংবা পরিকল্পিত নাশকতার ঘটনা ঘটাতে পারবে না। এ জন্য রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। বিশ দলীয় জোটের একটি রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সময়ে নাশকতা করেছে। নাশকতা, নৈরাজ্য ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটালে মানুষজনের জানমাল রক্ষার্থে নেতা-নেত্রী যে কেউ হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবশ্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, ঢাকায় অভিযান পরিচালনার বিষয়টি রুটিনওয়ার্ক। চেকপোস্ট, তল্লাশি অভিযান চলছে। জঙ্গী, সন্ত্রাসী, অপরাধী, গ্রেফতারি পরোয়ানার আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান রুটিন ওয়ার্ক। রাজনৈতিক কর্মসূচী থাকলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে এটাই স্বাভাবিক। এ জন্য গোয়েন্দা নজরদারিসহ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
×