ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পাচার্যের সংগ্রহ থেকে নির্বাচিত নকশী কাঁথার প্রদর্শনী বেঙ্গলে

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪

শিল্পাচার্যের সংগ্রহ থেকে নির্বাচিত নকশী কাঁথার প্রদর্শনী বেঙ্গলে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ২৯ ডিসেম্বর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের শততম জন্মবার্ষিকী। আর জন্মশত বার্ষিকীতে শিল্পাচার্য যেন শিল্পানুরাগীদের কাছে ধরা দিলেন চেনা শিল্পীর বাইরে অচেনা শিল্প-সংগ্রাহক হিসেবে। তাঁর সংগ্রহ থেকে নির্বাচিত নকশিকাঁথা নিয়ে শুরু হলো প্রদর্শনী। শিল্পপিপাসুদের সঙ্গে শিল্প-সংগ্রাহক জয়নুলের পরিচয় ঘটাতে বিশেষ এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টস। মঙ্গলবার শীতের সন্ধ্যায় ধানম-ির বেঙ্গল শিল্পালয়ে প্রদর্শনীর উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পাচার্যের সহধর্মিণী বেগম জাহানারা আবেদিন। সম্মানিত অতিথিবৃন্দ যৌথভাবে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। আবহমান বাংলার সূচিশিল্পের অনন্য নিদর্শনের সাক্ষী হিসেবে নকশিকাঁথার এই প্রদর্শনী। কাপড়ের ওপর জুড়ে গড়া কাঁথায় উপস্থাপিত হয়েছে নানা নকশা। লাল-নীল-সবুজসহ নানা রঙের সূক্ষ্ম সুতার কারুকাজে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে লোকজ বাংলার নানা অনুষঙ্গ। কাঁথায় চেপে বসেছে পল্লী বাংলার কারুশিল্পীর সুতোয় বোনো ফুল-পাখি ও লতা-পাতার সমাহার। যাঁতি, কুলা কিংবা কুঁড়েঘরের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে গ্রাম বাংলার যাপিত জীবনের চিত্র। নজরকাড়া ও নান্দনিক ২২টি নকশিকাঁথা দিয়েছে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। চলবে আগামী বছরের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। প্রসঙ্গত, দেশের চারুকলা আন্দোলনের পথিকৃৎ ও শিল্প-সংস্কৃতির পুরোধা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন শিল্পাচার্যের পরিবারের সহযোগিতায় আয়োজন করছে বছরব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ও ইতালির আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা স্কিরার যৌথ প্রকাশনা গ্রেট মার্স্টাস অব বাংলাদেশ : জয়নুল আবেদিন শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানমালার সূচনা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় শিল্পাচার্যের সংগ্রহ থেকে নির্বাচিত নকশিকাঁথার বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শিল্পাচার্যের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন, বেঙ্গল পাবলিকেশন্স আবুল মনসুরের জয়নুল আবেদিন শীর্ষক গ্রন্থ এবং মাসিক পত্রিকা কালি ও কলম জয়নুল আবেদিন শতবর্ষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। ‘বাংলা টেলিভিশনের ৫০ বছর’ গ্রন্থের প্রকাশনা ॥ ফরিদুর রেজা সাগর রচিত চারটি গ্রন্থ ‘একজীবনে টেলিভিশন’, ‘টেলিভিশন আরেক জীবন’, ‘টেলিভিশন : জীবনের সঙ্গী’ ও ‘টেলিভিশন ভাবনা’। সেই চারটি বই নিয়ে এবার এক মলাটে প্রকাশিত হলো ‘বাংলা টেলিভিশনের ৫০ বছর’। বাংলাদেশ টেলিভিশনের সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সম্মিলিতভাবে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন বিশিষ্টজনরা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, সঙ্গীতশিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী, চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকি, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, অভিনেতা কেরামত মওলা, বিটিভির মহাপরিচালক আসাদ মান্নান, চলচ্চিত্র পরিচালক আমজাদ হোসেন, জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ প্রমুখ। এ সময় বইটির লেখক ফরিদুর রেজা সাগর ও গ্রন্থটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা বলেন, ‘বিটিভি আজ ৫০ বছরে পা দিলেও তার আকর্ষণ আর আগের মতো নেই। নানা স্যাটেলাইট টিভির বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার পাশে বিটিভির অনুষ্ঠান এখন অনেকটাই ¤œান। সংশ্লিষ্ট মহলে দুর্বল নেতৃত্ব, ভুল নীতি, উদাসীনতা ও যথাযথ কর্ম পরিকল্পনার অভাবে বিটিভি তার গৌরব হারিয়ে ফেলেছে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল ইনু বলেন, টেলিভিশন ছাড়া আজ জগত প্রায় অচল। বাংলাদেশের মানুষের কাছে টেলিভিশনকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছিল বাংলাদেশ টেলিভিশন বা বিটিভি। ফরিদুর রেজা সাগরের বইটি বিটিভির সেই ইতিহাস তুলে ধরেছে। তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যম তথা শিল্পী-সাংবাদিকদের সমস্যা দূর করতে বর্তমান সরকার সাধ্যমতো সবকিছু করবে। পোষা প্রাণী যেমন প্রাণী নয়, তেমনি পোষা শিল্পী এবং সাংবাদিকও শিল্পী কিংবা সাংবাদিক নয়। সৈয়দ শামসুল হক বলেন, ‘আমরা যারা কবি, লেখক তারা অনেকটাই নিঃসঙ্গ। আমরা রাত জেগে, অনেকটা নিভৃতেই তেল পুঁড়িয়ে কিছু একটা লিখি। বছর শেষে তা বই আকারে প্রকাশিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশ টেলিভিশন সেই আড়ালে থাকা মানুষগুলোর কৃতকর্ম মানুষের কাছে তুলে ধরে তারকা খ্যাতি দিয়েছিল। তিনি তথ্যমন্ত্রীর কাছে বিটিভিকে সরকারী খাত থেকে কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানান। মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, বিটিভিতে আমরা অনেক কিছু করেছি। ফরিদুর রেজা সাগর তার কিছু ইতিহাস বইটিতে তুলে ধরেছেন। আসাদ মান্নান বলেন, জনগণের বাইরে গিয়ে কোন প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। আসছে জানুয়ারি থেকে বিটিভি গণমানুষের গণমাধ্যম হিসেবে রূপান্তরের পথে হাঁটবে। এ জন্য যারা বিটিভির সোনালি সময়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ভালবেসেছিলেন তারা আবার বিটিভিতে আসা যাওয়া করুন। বিটিভিকে আপনাদের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করুন। মামুনুর রশীদ বলেন, এই মুক্ত তথ্যের যুগে এসে বিটিভি মুখ থবড়ে পড়ে আছে। বিটিভি এখন আমলা আর রাজনৈতিক নেতাদের দখলে। কিন্তু বিটিভি তো আমলা, রাজনীতিবিদদের স্থান নয়, এখানের প্রাণ হলো শিল্পী ও সাংবাদিকরা। আলী ইমাম বলেন, বাংলাদেশে টেলিভিশন চালুর পেছনে একটি উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু সেই উদ্দেশ্যটা ছিল অত্যন্ত খারাপ। আইয়ুব খান তার রাজনৈতিক মতবাদ প্রচারের উদ্দেশে ঢাকায় টেলিভিশন চালু করেছিলেন। কিন্তু ১৯৬৪ সাল থেকে মুস্তাফা মনোয়ার, কলিম শরাফীরা টেলিভিশনকে গণমানুষের গণমাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। বইটিতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের পটভূমি, জন্ম, সূচনা পর্ব ও ডিআইটি পর্বের প্রথম এক দশক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন লেখক। এর পাশাপাশি তথ্য-উপাত্ত ও মতামতের ভিত্তিতে তুলে ধরেছেন বিটিভির সোনালি যুগের বহু নাটক, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, টক শো, কুইজ, বির্তক প্রতিযোগিতা, ধারাবাহিক নাটক, লাইভ ফোন ইন অনুষ্ঠান, ছোটদেরর অনুষ্ঠান, নতুন কুঁড়িসহ বেশ কিছু জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বইটিতে তিনি বলতে চেয়েছেন দেশে টেলিভিশনের যে প্রভাব ও পরিধি বেড়েছে এবং ক্রমাগত বাড়ছে, তার মূলে রয়েছে বিটিভির স্বর্ণযুগের ভূমিকা। প্রকাশনা উৎসবের সমাপ্তি টানা হয় সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের বক্তব্যের মাধ্যমে । এর আগে অনুভূতি প্রকাশ করেন ফরিদুর রেজা সাগর। বইটির উৎসর্গ করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি গানকে। গানটি হচ্ছে ‘ধায় যেন মোর সকল ভালোবাসা প্রভু তোমার পানে’। অনুষ্ঠানে এই গানটি পরিবেশন করেন খ্যাতিমান রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। কুষ্টিয়ায় ইন্টারন্যাশনাল আর্ট ক্যাম্প ॥ আজ বুধবার থেকে কুষ্টিয়ার রহিমপুরে স্মরণ মৎস্য বীজ খামারে শুরু হচ্ছে অষ্টম ক্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল আর্ট ক্যাম্প। ছয় দিনের এ আর্ট ক্যাম্পে অংশ নেবেন বাংলাদেশ ৬ দেশের ৩০ জন শিল্পী। অন্য দেশের শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও ব্রাজিল। কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করবেন ভারতের শিল্পী নীলাঞ্জনা নন্দী। ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেনÑ অনুপম সিং, কাসিলদা এসপিনদোলা, চিরন্তন মুখার্জী, গোপা রায়, জিনাল সাঙ্গই, মুরারি ঝা, রাম মহার্জন, রিতি মহার্জন, রাজিয়া রেজাই, সুজন ভাঙ্গল, জিনাল প্যাটেল, শতদ্রু শোভন ভাদুড়ি, দিনেশ ইশান্ত, দেলোয়ার হোসেন, অনন্ত কুমার দাস, মাহাদি মাসুদ, তাহমিনা হাফিজ লিসা, রাহুল আনন্দ, কনক আদিত্য, অনাদি বৈরাগী, পলাশ চৌধুরী, অনার্য তাপস, শক্তি নোমান, শাহীন মাহমুদ, রেজা রাজন, তানজিম আহমেদ, আফসানা শারমিন ঝুমা, সাদিকা স্বর্ণা, রায়হান রাফি, সাইফুল ইসলাম জার্নাল, এবিএস জেম, আজমাইন আজাদ কথা ও শাকন আকন্দ। আয়োজক সূত্র জানায়, ২০০৭ সাল থেকে এই মাল্টিডিসিপ্লিনারি আর্ট ক্যাম্পটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রচলিত ধরনের থেকে কুষ্টিয়ার এই আর্ট ক্যাম্পটির কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। জীবনযাপনের সঙ্গে শিল্পের সমন্বয় সাধনের চেষ্টা রয়েছে এই ক্যাম্পে। ৩০ ডিসেম্বর বেলা দুইটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ক্যাম্পে সৃজিত শিল্পীদের শিল্পকর্ম দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×