ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘মাইন্ড গেম’ নিয়ে জনসন

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪

‘মাইন্ড গেম’ নিয়ে জনসন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রতিপক্ষ নিয়ে অসি ক্রিকেটারদের ‘মাইন্ড গেম’ খেলার ধর্মটা পুরনো। স্টিভ ওয়াহ, শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রা, ব্রেট লি’রা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মাঠে নামার আগেই শুরু করতেন কথার লড়াই। কখনও মাঠে তা ‘সেøজিং’ ছাড়িয়ে রূপ নিত অঘোষিত যুদ্ধে! আগে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ঐতিহাসিক এ্যাশেজ সিরিজেই এমনটা বেশি দেখা যেত, কিন্তু এখন সেটি সমানে চলে সব দলের বিপক্ষে! ক্রিকেটে অস্ট্রেলীয়দের এটা এক ধরনের কৌশল। ক্রিকেট-মোড়ল ভারতকেও একই অস্ত্রে কাবু করে আনন্দ পাচ্ছেন পেসার মিচেল জনসন। এ্যাডিলেডের পর ব্রিসবেনÑ টানা দুই জয়ে ইতোমধ্যে চার ম্যাচের সিরিজে ২-০তে এগিয়ে স্বাগতিকরা। দুটি ম্যাচেই মাঠে হয়েছে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। শুক্রবার মেলবোর্নে ‘বক্সিং ডে’ টেস্টেও এ ধারা চলবে বলে জানিয়েছেন আইসিসির এই বর্ষসেরা ক্রিকেটার। ‘মানসিকভাবে ব্যাটসম্যানদের কাবু করতেই বাউন্সার দেয়া। শুরুতে পায়ের তলার মাটি কাঁপিয়ে দিতে ভাল লাগে। এটা পুরোপুরি মানসিক ব্যাপার। টিভিতে যা দেখা যায়, মাঠের পরিস্থিতিটা তেমন নয়, সেখানে ক্রিকেটের সঙ্গে চলে অন্য খেলা। মাইন্ড গেম। মাঠ ও মাঠের বাইরে দুই জায়গাতেই আমরা এটা খেলতে পছন্দ করি! ‘বক্সিং ডে’ টেস্টেও ভারতীয়দের জন্য শর্টপিচ, বাউন্স ও সেøজিং নিয়ে তৈরি আমি’Ñ বলেন সাম্প্রতিক সময়ে অস্ট্রেলিয়ার সাফল্যের অন্যতম রূপকার মিচেল জনসন। সাংঘাতিক, এ যে ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধে নামার সামিল! তিনি আরও যোগ করেন, ‘পেসার হিসেবে সেরা সাফল্যের জন্য আমাকে দুই ভূমিকায় খেলতে হয়। ব্যাটসম্যানের মনোবল ভেঙ্গে দিতে তার পা থেকে চোখ, প্রতিটি জায়গায় আঘাত হানতে ভাল লাগে! প্রতিপক্ষের হেলমেটে বাউন্সার লাগাটা কারও কাম্য নয়, তবে এটা খেলারই অংশ। ব্যক্তিগতভাবে আমি মাঠের মানসিক এ লড়াইটা বন্ধ করতে চাই না।’ ভারতের চলতি অস্ট্রেলিয়া সফরে ব্যাট-বলের পাশাপাশি মানসিক খেলাটা শুরু হয় এ্যাডিলেডের সেই প্রথম টেস্ট থেকে। অকালপ্রয়াত ফিলিপ হিউজেসের স্মরণেও এতটুকো ছাড় দেয়নি স্বাগতিকরা। এ্যাডিলেডে চতুর্থ দিন চা বিরতির আগমুহূর্তে একচোট নাটকই মঞ্চস্থ হয়। ঘটনা পেসার বরুণ এ্যারনের ৩৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ওয়ার্নার বোল্ড হয়ে যাওয়ার পর, যখন ক্রেজি ওয়ার্নারের নামের পাশে ৬৬ রান। গ্লাভস-হেলমেট খুলে হাঁটাও দিয়েছিলেন সাজঘরের দিকে। তাঁকে ফিরিয়ে উচ্ছ্বাসে লাফাচ্ছেন এ্যারন, ওয়ার্নারের উদ্দেশে উস্কানিমূলক দু’চারটি কথাও ছুড়ে দেন তিনি! কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় এ্যারনের সেটি ছিল ‘নো’ বল! আর পায় কে? এ্যারনের দিকে গজরাতে গজরাতে, ‘কাম অন! কাম অন!’ বলে শোধ তোলেন ওয়ার্নার। তাতে যোগ দেন বিরাট কোহলি, শিখর ধাওয়ানও। আম্পায়ার ইয়ান গোল্ডের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ৫৩তম ওভারে আবার আম্পায়ার রোহিতের বলে স্মিথকে আউটের আবেদন নাকচ করলেও রোহিত আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ‘হোয়াট-হোয়াট’ বলেন। স্মিথ ফিকফিকিয়ে হেসে ওঠেন! এতকিছুর মাঝেও অবশ্য ক্যারিয়ারের ১১তম সেঞ্চুরি তুলে নেন ‘রাগী মানুষ’ ওয়ার্নার! ব্রিসবেনে দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগেই ভারতীয়দের একপ্রস্ত হুঙ্কার দেন সাবেক গতিতারকা গ্লেন ম্যাকগ্রা। গাব্বার বাউন্সি উইকেটে ভারতীয়রা পাত্তা পাবে না বলে অগ্রিম ঘোষণা করেন তিনি। মিচেল জনসনের ‘মাস্টার ক্লাস’ পেস আক্রমণের মুখে ক্রিকেট মোড়লদের-প্রতিরোধ তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়বে বলে মন্তব্য করেন সাবেক দুর্ধর্ষ পেসার। মুরলি বিজয়ের সেঞ্চুরির ওপর ভর করে প্রথম ইনিংসে ৪০৮ রান তুলে মাঠে তার জবাবটা ভালই দেয় সফরকারী ভারত। উইকেটশূন্য থাকেন জনসন! নাটকের তখনও বাকি। চতুর্থ দিন সকালে দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেটে ৭৬ থেকে দলের ভা-ারে ১০ রান যোগ করতেই ৪ উইকেট হারায় ভারত! জনসনের ২০ মিনিটে ধ্বংসযজ্ঞে শ্মশানে পরিণত হয় মোড়লদের ব্যাটিং লাইনআপ! ৩৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নেন অসি সেনসেশনাল বোলার। তার আগে আট নম্বরে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর পাঁচশ ছাড়িয়ে নিতে খেলেন ৮৮ রানের দুরন্ত এক ইনিংস। সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নেতৃত্বের অভিষেকে স্টিভেন স্মিথ ম্যাচসেরা হলেও অনেকেই মনে করেন গাব্বায় জয়ের আসল নায়ক জনসন-ই। বক্সিং ডে টেস্টে হারলে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ শেষ হয়ে যাবে মোড়ল ভারতীয়দের। এই পরিস্থিতিতে কোনভাবেই মাঠের মধ্যে বকে-ঝকে অস্ট্রেলীয়দের না তাতানোর আহ্বান জানিয়েছেন সুনিল গাভাস্কার।
×