ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দিল্লীর চিঠি পেয়েছে ঢাকা ॥ প্রক্রিয়া শুরু

নূর হোসেনের বিনিময়ে অনুপ চেটিয়াকে ফেরত চায় ভারত

প্রকাশিত: ০৫:০১, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪

নূর হোসেনের বিনিময়ে অনুপ চেটিয়াকে ফেরত চায় ভারত

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশের কারাগারে বন্দী অসমের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়াকে ফেরত চেয়েছে ভারত। বিনিময়ে কলকাতার কারাগারে বন্দী নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের অন্যতম আসামি কলকাতার কারাগারে আটক নূর হোসেনকে। দিল্লীর পক্ষ থেকে এ কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে ঢাকাকে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী অনুপ চেটিয়াকে ফেরত দেয়ার বিনিময়ে নূর হোসেনকে ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র জানান, দিল্লীর পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের অন্যতম আসামি নূর হোসেনকে ফেরত দেয়ার বিষয়ে জানিয়েছে ঢাকাকে। একইভাবে অনুপ চেটিয়াকে যাতে তারা ফেরত পাওয়া যায় সেই ব্যবস্থাও যেন করা হয় বলে জানিয়েছে দিল্লী। গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের অন্যতম আসামি নূর হোসেন ভারতের কলকাতায় পালিয়ে গিয়ে গ্রেফতার হয় গত ১৪ জুন। তারপর থেকেই তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন ও দাবি জানিয়ে আসছেন নারায়ণগঞ্জসহ গোটা বাংলাদেশের মানুষ। ফরেনার্স এ্যাক্টসহ ভারতের অন্যান্য আইনে মামলা হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে কলকাতার আদালতে বিচার চলছে। তাকে ফেরত আনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলায় গ্রেফতার, জিজ্ঞাসাবাদ, রিমান্ডে আনাসহ আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জসহ গোটা দেশের প্রত্যাশা পূরণ হবে। অপরদিকে বাংলাদেশে আটক ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসম (উলফা) সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া এখন স্বেচ্ছায় স্বদেশে (ভারত) ফেরত যেতে ইচ্ছুক। বাংলাদেশে বিচারের পর তার যে সাজা হয়েছে, অনেক আগেই মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে তার। এতদিন তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ, তৃতীয় কোন দেশে হস্তান্তর ইত্যাদির আবেদন জানিয়ে এতদিন স্বেচ্ছায় কারাগারে থাকার ইচ্ছা পোষণ করলেও এখন স্বেচ্ছায় স্বদেশে ফিরে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করায় তাকে ফেরত দেয়ার বিষয়ে আইনগত আর কোন বাধা নেই। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে উলফার ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়ে সরকারীভাবে অঘোষিত আটক উলফা নেতাদের পুশব্যাক করে উলফা সংগঠনের মেরুদ- ভেঙ্গে দেয়। ভারত সরকার উলফা নেতাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসে ঐকমত্যের সমঝোতা হওয়ার পর এখন ভারতে ফিরে যেতে ইচ্ছা প্রকাশ করছেন উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া। উলফা নেতা অনুপ চেটিয়ার হস্তান্তরের বিষয়টি চূড়ান্ত হলে তার দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর পর কারাগারেসহ বাংলাদেশে অবস্থানের অবসান ঘটবে। গত বছর ভারতের দিল্লীতে যে স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে সেই বৈঠকেও তাকে হস্তান্তরের বিষয়টি আলোচনায় আসে। অনুপ চেটিয়াকে ভারতে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ হিসেবে তাকে রাজশাহী কারাগার থেকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে এনে হাই সিকিউরিটি সেলে রাখা হয়েছে। অসমের উলফা সংগঠনের ১৬ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে ঢাকায় আটক আছেন সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া। অনুপ চেটিয়া ছাড়াও সংগঠনটির ১৬ সদস্যের মধ্যে ১০ জনই ধরা পড়েছে, ৩ জন ভুটানে সেনা অভিযানের সময়ে নিখোঁজ, ১ জন সংগঠন ছেড়ে দিয়েছে। একমাত্র পলাতক পরেশ বড়ুয়াই এখন উলফার শেষ ভরসা। চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র চালানের মামলায় পরেশ বড়ুয়ার মৃত্যুদ-াদেশ দেয়া হয়েছে। পরেশ বড়ুয়ার সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটির কোন সদস্য নেই। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর উলফার ঘাঁটি উচ্ছেদকালে চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়াসহ ২৮জনকে পরিবার পরিজনসহ ধরা পড়ে বাংলাদেশে। তাদের ভারতের কাছে পুশব্যাক করেছে, যা কখনই বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নেয়নি। বাংলাদেশ থেকে উলফা নেতাদের মধ্যে যাদের ভারতে পুশব্যাক (স্বীকার করা হয়নি) করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন, উলফার চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়া, সামরিক শাখার উপ-প্রধান রাজু বড়ুয়া, পররাষ্ট্র সচিব শশধর চৌধুরী, অর্থসচিব চিত্রবন হাজারিকা, সংস্কৃতি সচিব প্রণতি ডেকা ও তাদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ পরিবার পরিজনকে ভারতের কাছে তুলে দেয়া হয়েছে। উলফা এখন কার্যত নখদন্তহীন দুর্বল। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে অন্যতম আসামি করে বাদী হয়ে মামলা করেছেন নারায়ণগঞ্জের সাত অপহরণ ও খুনের ঘটনায় নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। নূর হোসেন ছাড়াও অন্য আসামিরা হচ্ছে, শাহজালাল বাদল, আমিনুল ইসলাম রাজু, ইকবাল হোসেন, হাজী ইয়াসিন ও হাসমত আলী হাসুসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জন। এ ছাড়াও এ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের পক্ষেও বাদী হয়ে অপর একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার, প্রাইভেট কারের চালক জাহাঙ্গীর, শেখ রাসেল, জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সহ-সভাপতি তাজুল ইসলাম, ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের কর্মী মনিরুজ্জামান স্বপন এবং বন্ধু লিটনসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে ছয় জনের লাশ, পরদিন আরেকজনের লাশ পাওয়া যায়। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। নূর হোসেনকে ফেরত আনা হলে এই মামলার তদন্তের গতিতে আরও বেগ পাবে বলে জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত বছরের ৭ অক্টোবরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তি অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। ফৌজদারি মামলায় বিচারাধীন বা দ-প্রাপ্ত আসামি বিনিময় করার সুযোগ রেখে চুক্তি করা হয়েছে। বাংলাদেশের কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভারতে মামলা বা বিচারাধীন থাকলে বিংবা দন্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ফেরত আনা যাবে। সুতরাং নূর হোসেনকে ফেরত আনার বিষয়ে আইনগত কোন বাধা নেই।
×