ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কবির বিদায়

প্রকাশিত: ০৩:১৫, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪

কবির বিদায়

কবির মৃত্যুতে ইটকাঠকংক্রিটের জঞ্জাল এই ঢাকা শহর একচিলতেও বিচলিত হয় না। তবে ভাবতে ভাল লাগে প্রকৃত কবির প্রস্থানে প্রকৃতি বেদনার্ত হয়। মাত্র কয়েকমাস আগে আমরা হারালাম বাংলা কবিতার সবচেয়ে বর্ষীয়ান কবি আবুল হোসেনকে। দীর্ঘজীবন পেয়েছিলেন তিনি। মাত্র ক’দিন আগে না ফেরার ভুবনে চলে গেলেন কবি অরুণাভ সরকার। ষাটের এই কবির সত্তরতম জন্মদিন পালিত হয়েছিল বছর চারেক আগে। অনেক কবি মৃত্যুর দিনটি নিয়েও কাব্য রচনা করেন। সেসব কবিতায় ব্যক্তিগত অনুভূতির উর্ধে উঠে আসে মানবসমাজের মৃত্যুভাবনা ও জীবনবেদ। মৃত্যু নিয়ে অরুণাভ সরকারের কোন কবিতার কথা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। তবে স্বজনদের কাছে মৃত্যুপরবর্তী করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছিলেন কবি। চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য দেহ দান করে যাবার ব্যাপারে অবশ্য আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়ে ওঠেনি তাঁর। তবে তাঁর পরিবারের সদস্যরা কবির ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন। কবির উপহার দেয়া চোখ দিয়ে এখন পৃথিবী দেখবেন দু’জন ব্যক্তি। ‘মৃত্যুঞ্জয়’ নামের একটি সংস্থা কবির মরদেহ হস্তান্তরের ব্যবস্থাটিও সম্পন্ন করে কবিপরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজের এনাটমি বিভাগের প্রধান কবির মরদেহ গ্রহণ করেন। যারাই কবি অরুণাভ সরকারের সান্নিধ্যে এসেছেন তাঁরাই কবির উদার উষ্ণ হৃদয়ের পরিচয় পেয়েছেন। মানুষের উপকার করতে পারলে এই কবি বড় তৃপ্ত হতেন। স্নিগ্ধ আচরণ আর সুমিষ্ট বাক্যালাপের কারণে তিনি কবিকুলে ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। একসময় ঈষিকা নামে পরিচ্ছন্ন একটি কবিতাপত্র সম্পাদনা করতেন। প্রধানত ইংরেজী কাগজেই সাংবাদিকতা করেছেন। প্রধান কয়েকটি বাংলা সংবাদপত্রেও কর্মরত ছিলেন। বাংলাভাষা ও বানানের শুদ্ধতা নিয়ে সদাসতর্ক ছিলেন এ কবি। সতীর্থদের সচেতন করার কাজটিও করে গেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। বক্ষব্যাধিতে ভোগার কারণে শেষের কয়েকটি বছর তিনি কিছুটা অসহিষ্ণু হয়ে ওঠেন, তাঁর উত্তেজিত স্বর শুনে অনেককেই বিস্মিত হতে দেখেছি। খুব নিয়মিত কখনও লেখেননি। তাঁর কবিতার বই মাত্র তিনটিÑ নগরে বাউল, কেউ কিছু জানে না এবং নারীরা ফেরে না। কবিরাও কি ফেরেন একবার চলে গেলে! ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ [email protected]
×