ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাতে নাতে ধরা পড় ভুয়া কসমেটিকস্ মালিক

প্রকাশিত: ০৭:০২, ২২ ডিসেম্বর ২০১৪

হাতে নাতে ধরা পড় ভুয়া কসমেটিকস্ মালিক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পেন্টিন, হেড এ্যান্ড সোল্ডার, রিজয়েস, সানসিল্ক, ক্লিয়ার, ডাব, গার্নিয়ার, ভ্যাসলিন- কি নেই? বিশ্বের শীর্ষ সব ব্র্যান্ডেরই কসমেটিকস তৈরি হচ্ছে ছোট্ট একটা ঘরে। দিনের পর দিন এসব পণ্য দিয়ে দিব্যি ঠকানো হচ্ছে ক্রেতাদের। অথচ পাশেই থানা পুিলশ, সর্বক্ষণ গোয়েন্দাদের বিচরণ। বিষয়টি জেনে গোয়েন্দাগিরি শুরু করে রবিবার হঠাৎ সাঁড়াশি অভিযান। হাতে নাতে ধরা পড়ে ভুয়া কসমেটিকস কোম্পানির মালিকসহ কজন। তাদের জেল জরিমানা করা হয়, গুঁড়িয়ে দেয়া হয় সব কাঁচামাল। পুরান ঢাকার ১৩৮, খান মার্কেট, চকমোগলটুলিতে অভিযানকালে ছিল বিপুলসংখ্যক লোকের উপস্থিতি। সাজা দেয়া হয় চকবাজার মালিক সমিতির সভাপতির ছেলেসহ ৭ জনকে। ধ্বংস করা হয় আনুমানিক ২০ লাখ টাকার দুই ট্রাক নকল কসমেটিস। সাজা প্রাপ্তরা হলেন- দ্বীন ইসলাম (৫৭) দুই বছরের কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা, দেলোয়ার হোসেন (৪৮), দুই বছরের ণ্ড ও দেড় লাখ টাকা জরিমানা, মোঃ শামীম (৪২) মালিক দুই বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা, হেমায়েত খান (২০), দুই বছরের কারাদণ্ড ও দেড় লাখ টাকা জরিমানা, সাইদ হোসেন (৩২), দুই বছরের কারাদ- ও দেড় লাখ টাকা জরিমানা, মোঃ সামাদ (৪২), দেড় বছরের কারাদ- ও দেড় হাজার টাকা জরিমানা,্ ওমর ফারুক (২৭), ছয় মাসের কারাদণ্ড ও দেড় লাখ টাকা জরিমানা। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম আনোয়ার পাশা। অভিযানের সময় দেখা যায়, মার্কেটের দোতলায় পাঁচটি দোকানে স্তরে স্তরে সাজানো রয়েছে নামীদামী ব্র্যান্ডের শতাধিক ধরনের প্রসাধন। দেখে বোঝার উপায় নেই যে এগুলো আসল না নকল। ৩য় তলার একটি কক্ষে গড়ে উঠেছে কারখানা। এখানে জনসন সাবান তৈরি হচ্ছিল। এ কারখানার মালিক, মার্কেটের মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মফিজ। তিনি অসুস্থ থাকায় প্রতিদিন অল্প সময়ের জন্য মার্কেটে আসতেন। তাঁর ছেলে সাইদ হোসেন (৩২) এবং ম্যানেজার সামাদ (৪২) নকল কারখানা দেখাশোনা করেন। তাঁরা জানান, মেরিল সাবান পাইকারি হিসেবে ২০ টাকা পিস কিনে এনে এ কারখানায় ছাঁচে ফেলে জনসন সাবান তৈরি করা হয়। যার মূল্য ৮৫/-টাকা। ম্যানেজার সামাদ জানান, মার্কেটের দোতলায় যে পাঁচটি নকল সামগ্রী বিক্রির শো-রুম রয়েছে, সেগুলোও সভাপতি মফিজের তত্ত্বাবধানে চলে। তবে সেগুলো অপর আসামিরা মফিজের কাছ থেকে পজেশন কিনে নিজেরা চালাতেন। প্রতিমাসে তিন হাজার টাকা করে মফিজকে দিতে হয় বলে অভিযুক্ত দ্বীন ইসলাম, দেলোয়ার এবং শামীম জানান। দো-তলার শো-রুমগুলোতে পেন্টিন, হেড এ্যান্ড সোল্ডার, রিজয়েস, সানসিল্ক, ক্লিয়ার, ডাব, গার্নিয়ার, ভ্যাসলিন প্রভৃতি নামীদামী ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু পাওয়া যায়। অভিযুক্ত দ্বীন ইসলাম জানান, ব্যবহার করার পর খালি কন্টেনার সংগ্রহ করে তাতে গার্মেন্টসের লিকুইড সাবান এবং সেন্ট মিশিয়ে তাতে ভরে আসলের মতো নকল স্টিকার লাগিয়ে প্যাকিং করা হয়। ৩১০ টাকা মূল্যের পেন্টিন তারা ১০০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করে। এগুলোর গায়ে ৩১০ টাকার নকল স্টিকার লাগানো থাকে। কিন্তু অসাধু দোকানদার সব জেনে বুঝে তাদের কাছ থেকে কম দামে এগুলো কিনে নিয়ে খুুচরা দোকানে গায়ের মূল্যে অর্থাৎ ৩১০ টাকায় বিক্রি করত। তিনি জানান, সাধারণ মানুষের পক্ষে এগুলোর আসল না নকল বোঝা কঠিন। মানুষ এগুলো আসল ভেবে কিনে প্রতারিত হচ্ছে। এ দোকানগুলোতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বডি স্প্রে পাওয়া যায়। ডু ইট, ফগ, এঙ, কুল, মেঙিসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বডি স্প্রে রিফিল করে এখানে পাইকারি বিক্রি করা হয়। অভিযুক্ত শামীম জানান, বডি স্প্রের খালি কন্টেনার সংগ্রহ করে স্পিরিট এবং কাছাকাছি সেন্ট মিটফোর্ড থেকে সংগ্রহ করে তা মিশিয়ে সিরিঞ্জের মাধ্যমে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে গ্যাস লাইটারের গ্যাস ভরে রিফিল করা হয়। আসল বডি স্প্রের কাছাকাছি সেন্ট ব্যবহার করায় সাধারণ মানুষ এগুলোর আসল নকল বুঝতে পারে না। তবে নি¤œমানের পানিযুক্ত স্পিরিট ব্যবহার করায় কাঁচের ওপর স্প্রে করলে দীর্ঘ সময় পানি থেকে যায়। আসল বডি স্প্রে কাঁচের ওপর স্প্রে করলে তা অল্প সময়ের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায়। এভাবে আসল নকল চেনা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফেস ওয়াশ, সাবান, লোশন, পাউডার, স্কিনক্রিম ইত্যাদি নকল পণ্য পাওয়া যায়। নকল পণ্য কারখানায় ব্যবহৃত নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে তৈরি হয় বলে এগুলো ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। আনুমানিক ২০ লাখ টাকা মূল্যের ২০ হাজার পিস নকল পণ্য (দুই ট্রাক) সিটি কর্পোরেশনের ডাম্পিং স্টেশনে নিরাপদে ধ্বংস করা হয়।
×