ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী কর্মকর্তাদের নতুন পে-স্কেল ॥ বেতন বাড়ল শতভাগ

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২২ ডিসেম্বর ২০১৪

সরকারী কর্মকর্তাদের নতুন পে-স্কেল ॥ বেতন বাড়ল শতভাগ

এম শাহজাহান ॥ সর্বোচ্চ ৮০ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন স্কেল সুপারিশ করেছে ‘বেতন ও চাকরি কমিশন’। নতুন এ বেতন স্কেলের ফলে সরকারী কর্মকর্তাদের প্রায় শতভাগ বেতন বাড়ল। আগামী ১ জুলাই থেকে এই বেতন স্কেল কার্যকর করবে সরকার। সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন বাড়লেও মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। একই সঙ্গে তিনি এই সুপারিশকে একটি ‘ভাল ও যুগোপযোগী’ উল্লেখ করে বলেছেন, এটি বাস্তবায়নে সরকার আর্থিক সঙ্কটে পড়বে না। কমিশন বিদ্যমান বেতন কাঠামো ২০টি ধাপ থেকে কমিয়ে ১৬টি করার সুপারিশ করেছে। প্রথম ধাপে রয়েছেন সচিবরা। সচিবদের বেতন-ভাতা বিদ্যমান ৪২ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৮০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের বেতন ৪৫ হাজারের পরিবর্তে সুপারিশ করা হচ্ছে নির্ধারিত ১ লাখ টাকা। সিনিয়র সচিবদের জন্য বেতনের সুপারিশ করা হয়েছে ৮৮ হাজার টাকা। রবিবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সকাল ৯টায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে প্রতিবেদন তুলে দেন কমিশনের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর অর্থমন্ত্রী বলেন, কমিশন একটি ভাল রিপোর্ট করেছে। সরকার খুশি মনে এই নতুন বেতন কাঠামো আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ১ জুলাই মাস থেকে কার্যকর করবে। বেতন কাঠামো কার্যকর করতে শীঘ্রই একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করবে সরকার। যাচাই-বাছাই শেষে আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া সরকারী চাকুরেদের আবাসন সঙ্কট মেটাতে ফ্ল্যাট নির্মাণ ও তা ক্রয়ে ২৫ লাখ টাকার ঋণ সুবিধা নিশ্চিত, সরকারী জমি থেকে ২০-২৫ কাঠা জমি বিক্রি করে একটি ব্যাংক গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এই ব্যাংকের নাম ‘সমৃদ্ধির সোপান ব্যাংক’ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ব্যাংক থেকে ‘এক অঙ্কে’ সুদে ঋণ দেয়া সম্ভব হবে বলেও মনে করছে কমিশন। স্বেচ্ছা অবসরের চাকরির বয়স ২৫ বছর থেকে কমিয়ে ২০ বছর করা এবং কল্যাণফান্ডকে পুনর্গঠিত করে বীমা, পেনশন ও কল্যাণ ফান্ড ব্যবস্থাপনা নামে তিনটি আলাদা বিষয় করার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর ফরাসউদ্দিন নতুন বেতন কাঠামোতে কি কি সুপারিশ করা হয়েছে সে বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, নতুন বেতন কাঠামোতে ১৬টি ধাপ করার সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে ২০টি ধাপ আছে। ছয় সদস্যের পরিবারকে একক ধরে করা নতুন বেতন কাঠামোতে সর্বনিম্ন বেতন স্কেল ৮ হাজার ২০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা নির্ধারিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে ধাপ ‘এক’ এর সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন হবে নির্ধারিত ৮০ হাজার টাকা আর ১৬তম ধাপধারীদের বেতন স্কেল হবে ৮ হাজার ২০০ টাকা। এ ছাড়া সরকারী চাকরিতে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানকারীদের স্কেল হবে ২৫ হাজার টাকা। ফরাসউদ্দিন বলেন, পদোন্নতি হোক বা না হোক সরকারী চাকরিজীবীদের বেতন ১৫ বছরে দ্বিগুণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সচিবদের ৮০ হাজার টাকার সঙ্গে আরও ৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত দেয়া, সিনিয়র সচিবদের বেতন ৮৮ হাজার টাকা এবং কেবিনেট সচিব ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের বেতন ১ লাখ টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এই বেতন কাঠামো কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহার্ঘ ভাতা বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো করা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে জাতীয় বেতন কাঠামোর ধাপগুলো যেন বজায় রাখা হয়, সেটি সরকার বিবেচনা করবে। সরকারী চাকরিজীবীদের আবাসন সঙ্কট মেটানোর জন্য কিছু আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফ্ল্যাট তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। এ ছাড়া ১০ বা ২০ জন সরকারী চাকরিজীবী মিলে গ্রুপ করে জমি কিনে ফ্ল্যাট নির্মাণ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে সরকার যেন স্বল্পমূল্যে প্রত্যেককে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়, সে সুপারিশ করা হয়েছে। ফরাসউদ্দিন জানান, পেনশন বর্তমান ৮০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশে উন্নীত করা যায় কিনা, সেটি বিবেচনার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া স্বেচ্ছা অবসরের চাকরির বয়স ২৫ বছর থেকে কমিয়ে ২০ বছর করা এবং কল্যাণ ফান্ডকে পুনর্গঠিত করে বীমা, পেনশন ও কল্যাণ ফান্ড ব্যবস্থাপনা নামে তিনটি আলাদা বিষয় করার সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, কমিশনের কার্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে সরকারী চাকুরেগণের মধ্যে বিভিন্ন রকম নতুন ভাতা প্রদান ও বিদ্যমান ভাতা বাড়ানোর দাবি প্রবল হয়ে উঠেছে। নতুন বেতন কাঠামোতে যেহেতু বেতন যথেষ্ট বৃদ্ধি পাবে তাতে ভাতা বৃদ্ধি সমীচীন হবে না বলে কমিশন মনে করে। কিছু ভাতা যৌক্তিকরণ করার পক্ষে মত দিয়েছে কমিশন। এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া ভাতা আরও যৌক্তিক করার সুপারিশ দেয়া হয়েছে। ৪টি স্তরের সুপারিশ করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিট্রন, চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহর ও সাভার, নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার, জেলা শহর ও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করার সুপারিশ দেয়া হয়েছে। বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র বেতনের একটি অংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার বিধানকে যৌক্তিক মনে করে কমিশন। এছাড়া এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে ৬ মাস পর বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। লোকসানি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে আলাদা বেতন কাঠামো সমর্থন করে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকে আলাদা বেতন কাঠামো থাকতে পারে। তাতে ১৬টি গ্রেড রাখার সুপারিশ করেছে কমিটি। সুপারিশে বিদ্যমান ৮ ও ৯ গ্রেড মিলে ৮ নং গ্রেডের প্রস্তাব হয়েছে। এছাড়া বিদ্যমান ১২-১৩ নং গ্রেড মিলে ১১ নং গ্রেড, ১৭ ও ১৮ নং গ্রেড মিলে ১৫ নং গ্রেড এবং ১৯ ও ২০ নং গ্রেড মিলে ১৬ নং গ্রেড করা হয়েছে। এতে বিদ্যমান ২০টি গ্রেড কমিয়ে ১৬টি গ্রেড করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কোন্ গ্রেডে কত বেতন ॥ বিদ্যমান ২০টি গ্রেডকে ১৬টি গ্রেডে নামিয়ে এনে বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। এতে গ্রেড-১ বিদ্যমান ৪০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৮০ হাজার, গ্রেড-২ বিদ্যামন ৩৩ হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৭০ হাজার, গ্রেড-৩ বিদ্যমান ২৯ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৬০ হাজার, গ্রেড-৪ বিদ্যমান ২৫ হাজার ৭৫০ থেকে বাড়িয়ে ৫২ হাজার, গ্রেড-৫ বিদ্যমান ২২ হাজার ২৫০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ হাজার, গ্রেড-৬ বিদ্যমান ১৮ হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ হাজার, গ্রেড-৭ বিদ্যমান ১৫ হাজার থেকে বৃদ্ধি করে ৩২ হাজার, গ্রেড-৮(৮এবং ৯) বিদ্যমান ১২ হাজার ও ১১ হাজার বাড়িয়ে ২৫ হাজার, গ্রেড-৯ বিদ্যমান ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৭ হাজার, গ্রেড-১০ বিদ্যমান ৬ হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ১৩ হাজার, গ্রেড ১১(১২ এবং ১৩) বিদ্যমান ৫ হাজার ৯০০ এবং ৫ হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ১১ হাজার ৫০০, গ্রেড-১২ বিদ্যমান ৫ হাজার ২০০ থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার ৫০০, গ্রেড-১৩ বিদ্যমান ৪ হাজার ৯০০ থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার, গ্রেড-১৪ বিদ্যমান ৪ হাজার ৭০০ থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার ৫০০, গ্রেড-১৫( ১৭ এবং ১৮) ৪ হাজার ৫০০ এবং ৪ হাজার ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার এবং গ্রেড ১৬(১৯ এবং ২০) ৪ হাজার ২৫০ এবং ৪ হাজার ১০০ থেকে বাড়িয়ে ৮ হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে। চাকরিজীবীদের জন্য ফ্ল্যাট-বাড়ি ॥ রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মাধ্যমে পুরনো বাড়িগুলো ভেঙ্গে ফ্ল্যাট নির্মাণ এবং খাস জমিতে বাড়ি নির্মাণ করে সরকারী চাকরিজীবীদের দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছে কমিশন। সুপারিশে বলা হয়েছে, ৬০: ৪০ অনুপাত ভিত্তিতে মালিকানার হতে পারে। এ ছাড়া ২০ বা ১০ জনের গ্রুপকে ৫ বা ১০ কাঠা জমি দিয়ে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ৫০ মাসের মূল বেতনের সমান ঋণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সাধারণভাবে জমি কেনার প্রমাণ সাপেক্ষে ৫০ মাসের মূল বেতনের সমান ঋণ হিসেবে দেয়ার চিন্তা করা যেতে পারে বলে মনে করে কমিশন। ফরাসউদ্দিন বলেন, কমিশন মনে করে এই কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে ম্রিয়মাণ আবাসন খাতে প্রাণের সঞ্চার ঘটবে। গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে প্রাধিকারপ্রাপ্তদের বাইরে ৩ গ্রেডের কর্মকর্তাদের ২৫ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার চিন্তা করা যেতে পারে। তবে আধাসরকারী বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে অনুরূপ গাড়ির ঋণ দেয়া হলে তার রক্ষণাবেক্ষণ খরচ সেই প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করতে বলা হয়েছে। মাসে এক শ’ টাকা দিয়ে ৫ বছর পর্যন্ত ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বীমা চালু করা যেতে পারে। বীমার দাবি সরাসরি হাসপাতালে পরিশোধযোগ্য হতে পারে, নগদ প্রদানযোগ্য নয়। এই খাতের অর্থ থেকে ৫শ’ শয্যার হৃদরোগ হাসপাতাল নির্মাণ করা যেতে পারে। এতে প্রথম বছর টাকা খরচ হলেও পরে আর তেমন অর্থের প্রয়োজন পড়বে না বলে মনে করে কমিশন। এই ব্যবস্থা নেয়া হলে বীমা খাতে প্রাণের সঞ্চার হতে পারে বলে মন্তব্য করেন ফরাসউদ্দিন। কমিশন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডেপুটেশন বাতিল ও প্রেশনে থাকা কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভাতা বাতিলের সুপারিশ করেছে। তিনি আরও বলেন, ইনক্রিমেন্ট চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এ হিসেবে কেউ চাকরিতে যোগ দেয়ার ১৫ বছরের মধ্যে তার বেতন দ্বিগুণ হয়ে যাবে। অষ্টম ও নবম গ্রেড যোগ করে ৮ম গ্রেড করা হয়েছে। এটি প্রথম শ্রেণির সরকারী কর্মকর্তাদের চাকরির প্রবেশপথ। এই স্কেলের বেতন ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ৬ বছরের মূল্যস্ফীতি ও প্রতিবেশী দেশের চিত্র পর্যালোচনা করে নতুন এ বেতন কাঠামোর সুপারিশ করা হয়। এর আগে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য দূর করতে গত বছরের ২৪ নবেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে ১৭ সদস্যের এ কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের ৬ মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার কথা থাকলে পরে আরও ৬ মাস বাড়িয়ে এক বছর করা হয়। নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়িত হলে ১৩ লাখ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী এর আওতায় আসবেন। এর মধ্যে চাকরিতে সক্রিয় রয়েছেন প্রায় ১১ লাখ। আর দু’লাখ অবসরকালীন হিসেবে এ সুবিধার আওতায় চলে আসবেন। সর্বশেষ ২০০৭ সালে সপ্তম পে-কমিশন গঠন করা হয়। যার রিপোর্টের ভিত্তিতে ২০০৯ সালের জুলাই থেকে সর্বশেষ সরকারী চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়। বর্তমান কর্মচারীদের বছরে বেতন-ভাতা বাবদ ৩৮ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এ সুপারিশ বাস্তবায়ন করলে ৬৩ দশমিক ৭ ভাগ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। গত ৫ বছরে ৬৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে; যে বিষয়টি বিবেচনা করে কমিশন এই সুপারিশ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ফরাসউদ্দিন। মূল্যস্ফীতি বাড়বে না, নেই অর্থ সঙ্কট ॥ বেতন ও চাকরি কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ালে মূল্যস্ফীতি বাড়বে না বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তিনি বলেন, সুপারিশ বাস্তবায়নের কারণে মূল্যস্ফীতিতে কোন ধরনের প্রভাব পড়বে না। বাজেট যেভাবে বেড়েছে, কমিশনের সুপারিশে বেতন কাঠামোও সেভাবে বেড়েছে। আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন এই কাঠামো কার্যকর হলে বিসিএস দিয়ে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা পদে যোগ দেয়া একজন চাকরিজীবীর মূল বেতন হবে মাসে ২৫ হাজার টাকা। আগের কাঠামোতে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের মূল বেতন ছিল ১১ হাজার টাকা। সরকারী চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে বলে এর আগে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ওই সময় বাজার পরিস্থিতি সহনীয় রাখতে ধাপে ধাপে বেতন বাড়ানোর পাশাপাশি বাড়তি বেতনের অর্থ বিনিয়োগে ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি। নতুন কাঠামো কার্যকর করতে সরকারের বেতন বাবদ খরচ ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়বে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ আছে। সেটা দেশের মানুষেরই অর্থ। এই সুপারিশ বাস্তবায়নের কারণে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে না। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করতে শীঘ্রই একটি ‘বাস্তবায়ন কমিটি’ করা হবে। সচরাচার যা হয়, এই ক্ষেত্রেও তাই হবে। এই সুপারিশ কার্যকরে একটি বাস্তবায়ন কমিটি করা হবে। সেটা আমরা দ্রুতই করব। কারণ, এই সুপারিশ আমরা ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়ন করব। অর্থমন্ত্রী জানান, কমিশন নতুন বেতন কাঠামোর পাশাপাশি প্রশাসনিক কিছু সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। এসব সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। মুহিত বলেন, আমরা ক্ষমতা নিয়েছি এই উদ্দেশ্য নিয়ে যে, দেশটি অন্যভাবে পরিচালিত হবে। ২০০৯ সালের অর্থনীতির সঙ্গে বর্তমান অর্থনীতির কোন রকম মিল নেই। অর্থনীতি অনেক এগিয়েছে। এজন্য প্রশাসনকে দক্ষ ও গতিশীল করা দরকার। আবার প্রশাসনের সন্তুষ্টিও দরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, পে এ্যান্ড সার্ভিস কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে কোন চাপে পড়তে হবে না। যে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে তার সংস্থান বাজেটে রয়েছে। সরকার চাইলে এ বছরও এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করলে অসুবিধা নেই।
×