ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদায় বিজ্ঞানী মাকসুদ

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২২ ডিসেম্বর ২০১৪

বিদায় বিজ্ঞানী মাকসুদ

বাঙালীর গৌরব ও অহঙ্কারের উজ্জ্বল এক নাম বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম চলে গেছেন না ফেরার দেশে। শোকসাগরে ভাসিয়ে তাঁর এই চলে যাওয়া আমাদের ব্যথিত ও শোকাহত করেছে। মাত্র ষাট বছরের এক জীবনে তাঁর অনন্যতা এখানে যে, বিশ্বে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ১৭টি উদ্ভিদের জিন নকশার মধ্যে তিনটিই হয়েছে তাঁর হাতে। পাট, পেঁপে ও রবারের জন্মরহস্য বা জিনম সিকোয়েন্স আবিষ্কারের কৃতিত্ব বহনকারী মাকসুদ। বাংলাদেশের জিনোমিক্স এবং বায়ো-ইফরমেটিক্স গবেষণার ক্ষেত্রে তাঁর পদক্ষেপ একটি বিশাল ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজির প্রফেসর মাকসুদুল আলম ২০ ডিসেম্বর হাওয়াইয়ে কুইন্স মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি যকৃতের জটিলতায় ভুগছিলেন। ১৯৫৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের একজন কর্মকর্তা, যিনি একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ হন। ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর বৃত্তি নিয়ে মস্কো যান। সেখানে অণুপ্রাণ বিজ্ঞানে অধ্যয়ন শেষে ১৯৮২ সালে পিএইচডি করেন। পরে জার্মানিতেও ১৯৮৭ সালে পিএইচডি করেন। পরে হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে প্রাচীন জীবাণুতে মায়োগ্লোবিনের মতো নয়া ধরনের প্রোটিন আবিষ্কার করে ব্যাপক পরিচিতি পান। হাওয়াইতে পেঁপের ও মালয়েশিয়াতে রবারের জিন নকশা রহস্য উন্মোচন করেন। পরে পাটের জিন নকশার উন্মোচন করেন বাংলাদেশে। তাঁর নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডাটাসফটের একদল উদ্যমী গবেষকের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১০ সালে পাটের জন্ম রহস্য উন্মোচন করেন তাঁরা। এই আবিষ্কার জ্ঞানগত অর্জন হলেও এর অর্থকরী সুফল সুদূরপ্রসারী। ফলে লবণাক্ত মাটিতেও পাট চাষ সম্ভব এখন। বন্যার মধ্যেও ফলন ঠিক রাখা সম্ভব। সোনালি আঁশ তথা পাট ও তার বহুবিধ ব্যবহারের নয়াদিগন্ত উন্মোচনকারী তিনি। একসময় বাংলাদেশ বিশ্ববাজারের শতকরা ৫৫ ভাগ পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানি করত। সিনথেটিক দ্রব্যের উত্থান পাটকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাঁর এই আবিষ্কার পাটের ফলন ও আঁশের গুণাগুণ বাড়িয়ে বিশ্ব পাটবাজারে বাংলাদেশের অবস্থানকে ক্রমান্বয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত করবে। পাটের জন্মরহস্য উদ্ধার গবেষণায় মাকসুদুল আলম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর কাছ থেকে সর্বাত্মক সহায়তা পেয়েছেন। শেখ হাসিনা সংসদে এই আবিষ্কারকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন ‘সোনালি আঁশ আবার তার হারানো দিন ফিরে পাবে।’ এটা সত্যি যে, পাট তার ঐতিহ্য ফিরে পাবে। কিন্তু আমরা পাব না আর জন্মরহস্য আবিষ্কর্তা মাকসুদুল আলমকে। তবে তাঁর সৃষ্ট পথ ধরে ভাবীকালের বিজ্ঞানীরা এগিয়ে যাবেন। আর তাঁদের নতুন নতুন সফলতা হবে মাকসুদের সমগ্র শ্রম, নিষ্ঠা ও আবিষ্কারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন। আমরা বাঙালী বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।
×