ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘নেরিকা’ জাতের ধানের বীজ আমদানি সম্পর্কে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২২ ডিসেম্বর ২০১৪

‘নেরিকা’ জাতের ধানের বীজ আমদানি সম্পর্কে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য

২১ ডিসেম্বর দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত ‘নেরিকা’ জাতের ধানের বীজ আমদানি সম্পর্কিত খবরের প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। এ বিষয়ে রবিবার কৃষি মন্ত্রণালয় প্রেরিত বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হলো : সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রিকায় ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক ‘নেরিকা’ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না নিয়ে মনগড়া, অবৈজ্ঞানিক ও ভিত্তিহীন বক্তব্য পরিবেশন করা হচ্ছে। নেরিকা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য হলো, বিগত ২০০৯ সালে জনৈক বাংলাদেশী ব্যক্তি উগান্ডা সফরকালে খরাসহিষ্ণু নেরিকা ধানের উচ্চ ফলন দেখে ৬০ গ্রাম ধানবীজ বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং মাননীয় কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী’র নিকট হস্তান্তর করেন। কৃষিমন্ত্রী উক্ত ধান প্রায়োগিক গবেষণা করে উপযোগিতা পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এ প্রদান করেন। প্রায়োগিক গবেষণায় নেরিকা ধান বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ুতে আউশ, আমন এবং বোরো তিন মৌসুমেই চাষাবাদের জন্যে উপযোগী পাওয়া যায়। এর প্রেক্ষিতে বিএডিসি সেপ্টেম্বর ২০০৯ নেরিকা ধানের বীজ উৎপাদন কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে ডিসেম্বর ২০১০ সালের মধ্যে ৪৫ মে. টন বীজ উৎপাদন করে। পরবর্তীতে জানুয়ারি ২০১১ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মধ্যস্থতায় উগান্ডা হতে শুধুমাত্র ৫ মে. টন ভিত্তি বীজ সংগ্রহ করা হয়। যার দ্বারা বিএডিসির বিভিন্ন বীজ উৎপাদন খামারে এবং চুক্তিবদ্ধ চাষী জোনের মাধ্যমে ২০১০-১১ সালে বোরো মৌসুমে ১৭২ মে. টন, ২০১১-১২ সালে আউশ মৌসুমে ৯৮ মে. টন ও ২০১১-১২ সালে আমন মৌসুমে ২০৪ মে. টন এবং বন্যাপরবর্তী নাবি আমন হিসেবে ১০৩ মে. টন এবং ২০১২-১৩ সালে ১০৩৭ মে. টনসহ মোট ১৫১৪ মে. টন বীজ উৎপাদনে সক্ষম হয়। বিভিন্ন মৌসুমে জাতভেদে নেরিকা ধানের হেক্টরপ্রতি ফলন ৪.৫০ মে. টন হতে ৬.০০ মে. টন পাওয়া যায়। এ জাতটি খরাসহিষ্ণু, স্বল্প জীবনকাল (৯০-১০০ দিন), উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ (৯.৫০%-১১.৮০%), কর্তনের সময় ধান ঝরে পড়ে না ফলে কোন ফলন ঘাটতি হয় না, শিকড় মাটির গভীরে ১ মিটার পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে ফলে গাছ অত্যন্ত শক্ত ও মজবুত হয়, বৃষ্টিনির্ভর উঁচু জমিতে চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত জাত এবং বীজে কোন সুপ্ততা না থাকায় ও আলোক অসংবেদনশীল হওয়ায় যে কোন মৌসুমেই তা আবাদ করা যায়। নেরিকা ধানের এ সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকায় এ জাতের বীজ বিএডিসির বিভিন্ন খামারে বর্ধন করা হয় এবং কৃষক পর্যায়ে প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। কৃষক পর্যায়ে নেরিকা ধানটি অত্যন্ত সমাদৃত হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালে নেরিকা-১০ জাতের মাঠে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক ব্রিডিং-এর মাধ্যমে সৃষ্ট নেরিকা মিউট্যান্ট উদ্ভাবন করা হয় যার ফলন মৌসুমভেদে ৮-১০ মে. টন। উল্লেখ্য, নেরিকা ধানের উচ্চ ফলন সম্পর্কে জাতীয় সংবাদপত্রসমূহে বহু সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। কৃষক পর্যায়ে যে বীজ বিতরণ করা হয়ে থাকে তা বিএডিসি’র খামারসমূহেই উৎপাদিত এবং কোন নেরিকা বীজ বিদেশ হতে আমদানি করা হয় না। নেরিকা ধানের জাতটি এখনও মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষারত অবস্থায় আছে। প্রকৃতপক্ষে কোন ধানের জাত জাতীয় বীজ বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে আমদানি করা হয় না। তাই কারও ব্যক্তিগত স্বার্থে নেরিকা বীজ আমদানি করার প্রশ্নটি অবান্তর। বাংলাদেশে হাইব্রিড জাতের চাষাবাদের বিপক্ষেও ১৯৯৭-৯৮ সালে একটি মহল বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রদান করেছিল। অথচ দেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে হাইব্রিড ধান চাষের অবদান অনস্বীকার্য। বিগত ১৯৯১-৯২ সালে তদানীন্তন বিএনপি শাসনামলে বিএডিসি’র কাজ সঙ্কুচিত করে সার আমদানি ও বিতরণ কার্যক্রমে বেসরকারী খাতে দেয়া হয়। ফলে তৎকালীন সরকারের অপরিণামদর্শিতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে ১৯৯৪-৯৫ সালে তীব্র সার-সঙ্কট দেখা দেয় এবং সারের দাবিতে ১৮ জন কৃষকের প্রাণহানি ঘটে। সার ব্যবস্থাপনা খাতে দেখা দেয় চরম নৈরাজ্য। বিগত ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ৪০.০০ লাখ মে. টন খাদ্য ঘাটতি নিয়ে সরকার গঠনের পর সঠিক ব্যবস্থাপনা ও কৃষিবান্ধব নীতির কারণে দেশ খাদ্য ঘাটতি হতে খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হয়। বিগত ২০০১-০৬ সময়কালে চারদলীয় জোট সরকারের শাসনামলে অব্যবস্থাপনা ও ভুলনীতির কারণে বাংলাদেশ পুনরায় খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত হয়। চারদলীয় জোট সরকারের এ সময়ে কৃষকগণকে সিøপের মাধ্যমে/লাইনে দাঁড়িয়ে সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ সংগ্রহে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়, এমনকি সারসহ অন্যান্য উপকরণেও ঘাটতির কারণে দেশে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ২৬.০০ লাখ মে. টন খাদ্য ঘাটতি নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই কয়েক দফায় সারের মূল্য হ্রাস ও অন্যান্য উপকরণের ব্যয় হ্রাস, যথাসময়ে সুলভ মূল্যে কৃষি উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করাসহ কৃষকবান্ধব নীতি গ্রহণের কারণে দেশ আবারও খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হয়। খাদ্যে উদ্বৃত্ত হওয়াই বিএপির গাত্রদাহের কারণ। আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাতের চাষাবাদে রাসায়নিক সারের গুরুত্ব অপরিসীম হওয়ায় সরকার উপকরণ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করে এবং নিরবচ্ছিন্ন সার সরবরাহের লক্ষ্যে বেসরকারী পর্যায়ের পাশাপাশি বিএডিসিকে পুনরুজ্জীবিত করে। বিগত ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিএডিসিকে নন-ইউরিয়া সার আমদানি ও সরবরাহ কার্যে পুনরায় সম্পৃক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিএডিসি’র সার ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম অধিকতর দক্ষ ও উন্নততর করে। যার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে কৃষককে আর সিøপের মাধ্যমে/লাইনে দাঁড়িয়ে সার ক্রয়ের জন্য সারের পেছনে ছুটে সময় ও শ্রম নষ্ট করতে হয় না। এ সবই কৃষকবান্ধব সরকারের সুশাসন ও সুনীতি বাস্তবায়নের সাফল্য। এ সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রাক্তন কৃষি প্রতিমন্ত্রী তথ্যহীন, বিভ্রান্তিকর ও অসত্য বক্তব্য উপস্থাপন করে যাচ্ছেন এবং কৃষকের জন্য মায়াকান্না শুরু করেছেন। -বিজ্ঞপ্তি
×