ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘নিষিদ্ধ এনজিও’র তৎপরতা

প্রকাশিত: ০৩:০৮, ২২ ডিসেম্বর ২০১৪

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘নিষিদ্ধ এনজিও’র তৎপরতা

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ জেলার উখিয়া টেকনাফে বস্তিতে অবস্থানরত ও সৈকতের বালিয়াড়িতে ঝুপড়ি তৈরি করে এবং শহরে বিভিন্ন ভাড়া বাসায় বসবাস করছে রোহিঙ্গারা। ভাসমান দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গার স্থানান্তর না হতে নিষিদ্ধ এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিরা কান ভারি করে তুলছে। সরকার টেকনাফ ও উখিয়ার ক্যাম্প এবং বস্তির শরণার্থী রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতোপূর্বে। নিষিদ্ধ তিনটি এনজিও ওইসব ভাসমান রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের নামে নতুন করে ৬ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। এনজিওগুলো ওইসব রোহিঙ্গার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে স্থায়ীকরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখায় সরকারের স্থানান্তর প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে মত প্রকাশ করছেন সচেতন মহল। ওসব এনজিও সংস্থার রোহিঙ্গাপ্রীতি দেখে সীমান্তে মিয়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছেন অভিজ্ঞ মহল। এসব এনজিওর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি উঠছে স্থানীয়ভাবে। এলাকাবাসী জানায়, এনজিওর অপতৎপরতায় ওসব অবৈধ রোহিঙ্গাকে ফের শেড নির্মাণ করে জামাই আদরে রাখা হলে স্থানীয়দের নাগরিক অধিকার বিপন্ন হবে। সরকারীভাবে নেয়া সিদ্ধান্ত রোহিঙ্গা স্থানান্তর প্রক্রিয়া মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বলে অভিমত অভিজ্ঞজনের। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের আমলে নাফনদী ও পাহাড়ী জনপদ অতিক্রম করে আড়াই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে উখিয়া-টেকনাফ, রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়। ও সময় সরকার ২০টি ক্যাম্প স্থাপন করে ওসব রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদান করে। ১৯৯৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে কুতুপালং ও লেদা এলাকার বনভূমির পাহাড়ে ঝুপড়ি বেঁধে আশ্রয় নেয়। ও সময় জেলা প্রশাসক, বন বিভাগ ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে এসব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে চাইলেও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মদদে ব্যর্থ হয় প্রশাসন। শেষ পর্যন্ত কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোঃ জয়নুল বারী ওসব রোহিঙ্গাকে অবৈধ আখ্যায়িত করে তাদের কোন প্রকার ত্রাণসামগ্রী বিতরণসহ সাহায্য সহযোগিতা না করার জন্য এনজিওগুলোর প্রতি কড়া নির্দেশ প্রদান করেন। অভিযোগ রয়েছে, এক শ্রেণীর প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় তিনটি এনজিও রোহিঙ্গাদের গোপনে ও প্রকাশ্যে সাহায্য-সহযোগিতা করার মাধ্যমে স্বদেশে ফিরে যেতে নিরুৎসাহিত করে চলছে দীর্ঘদিন ধরে। যে কারণে উচ্চ মহলের নির্দেশে জেলা প্রশাসক ৩টি এনজিও সংস্থা যথাক্রমে এমএসএফ হল্যান্ড, এসিএফ ও মুসলিম এইডের অবৈধ রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে দেয়। তারপরও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা এবং সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার নাম ভাঙ্গিয়ে ওসব এনজিও তাদের কার্যক্রম এবং রোহিঙ্গাভিত্তিক তৎপরতা অব্যাহত রাখে। জেলা প্রশাসক মোঃ রুহুল আমিন জানান, অবৈধ রোহিঙ্গাদের নিয়ে এনজিওদের উন্নয়ন কার্যক্রমের ব্যাপারে তিনি অবগত নন। তবে ওইসব এনজিওদের বিরুদ্ধে সরকারী বিধি নিষেধ বলবৎ রয়েছে বলে জানান তিনি।
×