ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

আদালত অবমাননার মামলাগুলোও এগিয়ে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২১ ডিসেম্বর ২০১৪

আদালত অবমাননার মামলাগুলোও এগিয়ে যাচ্ছে

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার মামলাগুলোও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি মামলায় সতর্ক করে তা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। শুধুমাত্র আদালত অবমাননার দায়ে বাংলাদেশে বসবাসরত ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং সারাদিন কোর্টে বসে থাকার নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রদান করেন ট্রাইব্যুনাল। পরে ডেভিডবার্গম্যান জরিমানার ঐ অর্থ ট্র্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছেন। এদিকে মানবতাবিরোধী বিচার নিয়ে যারা মন্তব্য করছেন তাদের বিষয়ে আদালত অবমাননার দ- ও অর্থদ- পর্যাপ্ত নয় বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন প্রসিকিউশনপক্ষ। তবে কেউ কেউ বলেছেন, এই মুহূর্তে দ- ও জরিমানার পরিমাণ বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। মেয়াদ না বাড়িয়ে যথাযথভাবে তা প্রয়োগ করতে হবে। তা হলেই আদালত অবমাননার হার কমে আসবে। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে আজ অব্দি এর বিরুদ্ধে নানামুখী প্রপাগান্ডা চলে আসছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী মামলা ও বিচার ব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করায় কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল তাদেরকে সতর্ক করে আদালত অবমাননার মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। শুধুমাত্র ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্কম্যানকে জরিমানাসহ ট্রাইব্যুনালে দাঁড়িযে থাকার দ- দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে দুটি আদালত অবমাননার মামলা আছে। স্কাইপি সংলাপে বিচারপতিদের সম্পর্কিত তথ্য জানতে চাওয়ায় বিএনপি নেতা মৃত্যুদ- প্রাপ্ত আসামি সাকা চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে আদেশ দানের দিন পিছিয়ে ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পুনর্র্নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে বিচারাধীন বিষয়ে বক্তব্য দেয়া এবং বক্তব্য প্রকাশ দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না সেই বিষয়ে শুনানির জন্য ২৪ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে। আদালত অবমাননার মামলা দুটি চেয়ারম্যান এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারাধীন রয়েছে। আদালত অবমাননার দ- ও জরিমানা বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী জনকণ্ঠকে বলেছেন, আদালত অবমাননার চেয়ে সহজভাবে বলা যায়, এটা বিচারের কাজে বাধা। আদালত অবমাননার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ্যাক্টের ১১ (৪) ধারায় যা আছে তা ঠিকই আছে। আমি এই মুহূর্তে সংশোধনীর প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ্যাক্টসের ১১ (৪ ) ধারায় বলা হয়েছে আদালত অবমাননার ক্ষেত্রে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আদালত সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছরের কারাদ- বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করতে পারবেন। অথবা উভয় দ-ই প্রদান করতে পারবেন। প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলীর মন্তব্য সমর্থন করে প্রসিকিউটর রানা দাশ গুপ্ত বলেছেন, আদালত অবমাননার শাস্তির মেয়াদটা বাড়ানোর দরকার নেই। শাস্তিটা যথাযথভাবে প্রয়োগ করলেই আদালত অবমাননার হার কমে যাবে। ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত সহানুভূতি নিয়ে বিবেচনা করেছেন। সহানুভূতি বিবেচনা না করাটা এই মুহূর্তে দরকার নেই। আদালত অবমাননার আইন যা আছে তাই থাকুক। একজনের শাস্তি হলে অন্যরা ভয় পেয়ে যাবেন। যাঁরা এ কাজগুলো করছেন তাঁরা লেখাপড়া জানেন। ট্রাইব্যুনাল কাউকে সতর্ক করছেন আবার কাউকে জারিমানা করছেন। ট্রাইব্যুনাল তার বিচার বিশ্লেষণ করেই রায় প্রদান করছেন। অন্যদিকে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেছেন, আাদালত অবমাননার দ- ও জরিমানাটা বাড়ানো প্রয়োজন। এটা সরকারের বিষয়। একইভাবে প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন বলেছেন, যারা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সমালোচনা করছেন, আইন করে তাদের সমালোচনা বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্র শক্তির বিরুদ্ধে যারা সমালোচনা করেছিল আইন করে তাদের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গ্যাস চেম্বারের হত্যাকা-সহ যে সমস্ত যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়েছিল তা নিয়ে কেউ সমালোচনা করতে পারেনি। সেখানে আইন করে তাদের সমালোচনা করার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের যে বিচার হচ্ছে তার বিরুদ্ধে যারা কথা বলছে তাদেরকে আইন করে সমালোচনা বন্ধ করে দিতে হবে। পাশাপাশি আদালত অবমাননার দ- ও জারিমানার পরিমাণ বাড়ানো উচিত।
×