ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শতাধিক পণ্যবাহী কার্গো চট্টগ্রামে আটকা

প্রকাশিত: ০৩:০১, ২১ ডিসেম্বর ২০১৪

শতাধিক পণ্যবাহী কার্গো চট্টগ্রামে আটকা

মহসিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে অয়েল কার্গো ট্যাঙ্কার দুর্ঘটনার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য এ নৌরুটটি বন্ধ করে দেয়ায় পণ্য পরিবহনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। গত বারদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে শতাধিক কার্গো জাহাজ আটকা পড়েছে বিভিন্ন পয়েন্টে। বন্ধ হয়ে আছে ভারত থেকে সিমেন্টের কাঁচামাল একলাখ টন ফাইএ্যাশ আমদানি। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গর থেকে ২ লাখ টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য ডেলিভারিও অনিশ্চিত অব¯′ার মধ্যে। শতাধিক কার্গো জাহাজ পণ্য নিয়ে আটকা পড়েছে। তিন বছর ধরে ঘষিয়াখালি নৌরুট ড্রেজিংয়ের নামে বন্ধ রাখার পর সুন্দরবনের বিকল্প এ নৌরুটটিতে দুর্ঘটনাজনিত কারণে পরিবেশ বিপর্যয় স"ষ্টি হলে এ অচলাবস্তার সৃষ্টি হয়। নৌরুটটি সীমিত আকারে অথবা সতর্কতামূলকভাবে অবিলম্বে চালু না করলে এ মাসেই ঢাকা ও চট্টগ্রামের অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাঁচামাল সঙ্কট এবং খুলনার বিভিন্ন অঞ্চলে জরুরি পণ্যের সঙ্কট স"ষ্টি হতে পারে। এমন আশঙ্কা করেছেন বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন এবং কোস্টাল শিপ এ্যাসোসিয়েশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানিয়েছে, ২০১১ সালে বিকল্প নৌরুট হিসেবে সুন্দরবনের অভ্যন্তর দিয়ে শ্যালা নদীর রুটটি চালু করা হয়। এ রুটের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ নৌ প্রটোকলের অধীনে আমদানি করা পণ্য চট্টগ্রাম, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বাঘাবাড়ী, নগরবাড়ী, আশুগঞ্জ এবং সিলেটে পরিবহন হয়ে থাকে। কিš′ পূর্বের নৌরুট অর্থাৎ ঘষিয়াখালি নৌরুটটি নাব্যতাজনিত কারণে অচল রয়েছে। ঐ নৌরুট দিয়ে কোন জাহাজ চলাচল করতে না পারায় বিআইডব্লিউটিএ বিকল্প হিসেবে সুন্দরবনের অভ্যন্তর দিয়ে এ নৌরুট চালু করে। কিš′ গত তিন বছর যাবত নৌরুটটি ড্রেজিং এখনও শেষ হয়নি। ফলে একমাত্র ভরসা বিকল্প রুট। গত ৯ ডিসেম্বর একটি অয়েল কার্গো ট্যাঙ্কার ডুবে গেলে বিরাট এলাকা জুড়ে ফার্নেস অয়েল ছড়িয়ে পড়ে। এতে স"ষ্টি হয় পরিবেশ বিপর্যয়। ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে প্রাকৃতিক অনেক গাছ এবং জীবজš′র ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুর্ঘটনার দশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও পরিবেশবান্ধব করা হয়নি শ্যালা রুটটি। আবার অনির্দিষ্টকালের জন্য রুটে কার্গো জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্য কোন বিকল্প পথ না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে নোয়াপাড়া এবং মংলায় পণ্য পরিবহন। এতে পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ সঙ্কটে পড়েছে। ভারত থেকে এ রুট দিয়ে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ফাইএ্যাশ আমদানি হয়। ইতোমধ্যে একলাখ টনের অধিক ফাইএ্যাশ নিয়ে শতাধিক জাহাজ অপেক্ষমাণ। এসব জাহাজ একদিকে লোকসান গুনছে, অন্যদিকে সিমেন্ট কারখানাগুলোতে কাঁচামাল সরবরাহ করতে না পারায় শীঘ্রই সঙ্কটে পড়তে যা"েছ। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দরে ১২টি সমুদ্রগামী জাহাজ ২ লাখ ৪২ টন পণ্য নিয়ে বহির্নোঙ্গরে অপেক্ষা করছে। এসব জাহাজের মধ্যে রয়েছে আসন্ন ইরি-বোরো মৌসুমের জন্য বিভিন্ন ধরনের সার। ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সারবাহী জাহাজ থেকে গত দশ দিনে ডেলিভারি দেয়া যা"েছ না। প্রায় একশটি বিভিন্ন ধরনের আভ্যন্তরীণ নৌ রুটের কার্গো জাহাজ বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছে। শ্যালা নৌরুট ব্যবহার করতে না পারায় বিকল্প পথও নেই। সড়ক পথে এত পরিমাণের পণ্য পরিবহন অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক। কারণ, নৌ রুটের বিকল্প হিসেবে অন্য পথে পণ্য পরিবহনে খরচ কয়েকগুণ বেশি। শুধু সার নয়, আমদানি করা সিমেন্ট কিংকার, লবণ, বিভিন্ন ধরনের খাদ্য শস্য, জ্বালানি, ভোজ্য তেলের চালানও পৌঁছানো যা"েছ না। কাঁচামালের সঙ্কটে পড়তে যা"েছ খুলনা অঞ্চলের বেশ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান। বিকল্প কোন নৌরুট স"ষ্টি করতে না পারলে নৌপথে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যাবে। আবার কয়েকমাসের মধ্যে সড়ক পথেও শিল্প ইউনিটগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁচামাল পরিবহন সম্ভব নয়। বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব উদ্দিন বীর বিক্রম জানান, জাতীয় অর্থনীতি এবং বাণিজ্য ও বিভিন্ন স্বার্থ বিবেচনা করে পরিবেশবান্ধব নৌরুট চালু রাখার কোন বিকল্প নেই। দুর্ঘটনার কারণে বর্তমানে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেটি বিবেচনা অত্যাধুনিক সম্মত নয়। সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। কোস্টাল এ্যাসোসিয়েশন ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান গাজী বেলায়েত হোসেন জানান, সুন্দরবনের ঐতিহ্য বিবেচনার পাশাপাশি পূর্বতন নৌরুট ঘষিয়াখালি চ্যানলেটি দ্রুত ড্রেজিং করা উচিত। এছাড়া সার্বিক বিবেচনা করে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ঘষিয়াখালি, মংলা ও পশুর নদীর নাব্যতা দ্রুত নিশ্চিত করা উচিত। উভয় সংগঠন সরকারের কাছে ইতোমধ্যে দাবি জানিয়েছে, ঘষিয়াখালি নৌরুটটি চালু না হওয়া পর্যন্ত সতর্কতামূলকভাবে শ্যালা নৌরুট খুলে দেয়া উচিত। অন্যথায় শুধু কার্গো জাহাজ নয়, অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। বিভিন্নস্থানে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, সারের সঙ্কট স"ষ্টি হতে পারে। খাদ্যশস্য সরবরাহে বিঘ্ন হওয়ায় দামও বেড়ে যেতে পারে।
×