ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আবদুল মান্নান

তারেক রহমান কবে বলবেন, ওই জিয়াকে আমি চিনি না

প্রকাশিত: ০২:৫২, ২১ ডিসেম্বর ২০১৪

তারেক রহমান কবে বলবেন, ওই জিয়াকে আমি চিনি না

আমার শহর চট্টগ্রাম। গত দুই দশকে বদলে গেছে অনেকখানি। খারাপ অর্থে। এই একটি শহর যেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেও কোন কাজ হয় না; কারণ এখানে যাঁরা রাজনীতি করেন তাঁদের সকলের ধারণা, তাঁরা কম যান কিসে? সপ্তাহ কয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম এসেছিলেন। এটি অনেকেরই জানা চট্টগ্রামের সঙ্গে শেখ হাসিনার সম্পর্কটা অন্য যে কোন শহরের চেয়ে বেশি, অনেকটা আত্মিক। এই চট্টগ্রামেই বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে প্রকাশ্য জনসভায় বাঙালীর মুক্তি সনদ ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে তখন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারাই শেখ হাসিনার বিবাহোত্তর সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলেন রাইফেল ক্লাবে। শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে এই চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিজ হাতে তুলে নিয়েছিলেন। এই কয়েক বছরে এই শহরে কিছু ফ্লাইওভার হয়েছে ঠিক কিন্তু পুরো শহরটা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে; কারণ এখানকার ঐতিহ্যবাহী সিটি কর্পোরেশনটি অযোগ্য মানুষের হাতে পরে অকার্যকর হয়ে পড়েছে অনেক দিন আগে। এমন অপরিকল্পিত শহর বিশ্বের কম দেশেই আছে। ঐতিহাসিকদের মতে, এই শহরের বয়স কমপক্ষে বারো শ’ বছর। প্রধানমন্ত্রী যেদিন চট্টগ্রামে আসেন সেদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে রেখেছিল ছাত্রলীগ নামধারী কিছু দুর্বৃত্ত। অভিযোগ আছে- এদের পৃষ্ঠপোষক মহানগরকেন্দ্রিক কিছু রাজনৈতিক নেতা। তাঁদের হুকুমে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকে আবার তাঁদের হুকুমে তা বন্ধ হয়। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর খবরদারি করে সিদ্ধান্ত দেয়ার চেষ্টা করেন কারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকবেন আর কারা বাইরে। কেউ কেউ পারলে নিজেরাই উপাচার্যকে সরিয়ে নিজেই সেই পদ দখল করেন। এসব কথা প্রধানমন্ত্রীর না জানার কোন কারণ নেই। তিনি প্রথম সুযোগেই চট্টগ্রাম মহানগরের নেতাদের বেশ ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, তিনি আর একদিনও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ দেখতে চান না। বিশ্ববিদ্যালয় পরদিন খুলল ঠিক কিন্তু ক’দিন না যেতেই নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি করে নিজেদের একজনকে লাশ করে দিল এই দুর্বৃত্তরা। এই কাজ তাদের জন্য বেশ সহজ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিল বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকবে। বেশ সাহসী সিদ্ধান্ত, কারণ নেপথ্য নায়করা চাইছিল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাক এবং প্রশাসন বেকায়দায় পড়ুক আর এই ফাঁকে তারা তাদের বশংবদ আর কর্তাভজা কোন একজনকে উপাচার্য নিয়োগের ব্যবস্থা করুক। উপাচার্যের পদটি দখল করার জন্য অনেক দিন ধরেই দৌড়ঝাঁপ চলছে। গত বৃহস্পতিবার এদেরই একদল আবার হুমকি দিয়েছে রবিবার হতে আবার বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেবে। এবার তাদের দাবি- হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করতে হবে। কারণ তিনি দুর্বৃত্তদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছেন। নাদান আর কাকে বলে। ঐতিহ্যবাহী ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে এমন দুর্বৃত্তপনা নজিরবিহীন। এ শহরে রাস্তা দিয়ে চলতে গেলে জীবনটা হাতে নিয়ে চলতে হয়, কারণ এখানে আছে হাজার হাজার ব্যাটারিচালিত রিক্সা। এসব চালকের কোন কোনটির বয়স তেরো থেকে চৌদ্দের বেশি নয়। চট্টগ্রামের বেশিরভাগ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের রোগী এসব রিক্সা নামক দানবের কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালে এসেছেন। পঙ্গু হয়ে গেছেন অনেকে। জীবন দিতে হয়েছে কয়েকজনকে। মেট্রোপলিটন পুলিশ চেষ্টা করেছিল এই দানবদের রুখতে। ব্যর্থ হয়ে তাঁরা এখন রাস্তা ঝাড়ু দেয়ার কাজে মনোযোগী হয়েছেন। কোতোয়ালি থানার অদূরে সন্ধ্যায় স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি হয়। পুলিশ তখনও রাস্তা ঝাড়ু দিতে ব্যস্ত। ডাকাতরা নির্বিঘেœ তাদের কর্ম সেরে সটকে পড়ে। তাদের ছোড়া বোমার আঘাতে মারা যায় একজন। পুলিশ এখন রাস্তা ঝাড়ু দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরের নালা নর্দমা পরিষ্কারে হাত দিয়েছে। তারাও বুঝে গেছে সিটি কর্পোরেশনকে দিয়ে এসব কাজ আর হবে না। জানটা হাতে নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। এই শহরে আমার কোন নিজস্ব বাহন নেই। ব্যাটারিচালিত রিক্সায় চড়লে জীবন নিয়ে ফিরতে পারব তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তিন চাকার সিএনজি নিয়ে কোথাও গেলে ন্যূনতম ষাট টাকা ভাড়া হাঁকে। হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। তবে চট্টগ্রাম শহরে হাঁটতে গেলে সব সময় চোখ-কান খোলা রাখতে হয়। হাঁটার পথে কয়েকজন অপরিচিত লোক সালাম দিয়ে অনেকটা পথ রুখে দাঁড়ালেন। বললেন, তাঁরা আমার টকশো শোনেন। যাঁরা টকশোতে অংশগ্রহণ করেন এটি তাদের একটি বাড়তি পাওনা। অনেক অপরিচিত লোকজনের সঙ্গেও চলার পথে পরিচয় হয়ে যায়। যাদের সঙ্গে সেদিন চলার পথে পরিচিত হলাম তাদের একটাই অনুরোধ, আমার কোন একটি টকশোতে যেন আমি তারেক রহমানের লন্ডনে গত ১৬ তারিখ বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে দেয়া বক্তব্য নিয়ে কিছু একটা বলি। তাঁদের বলি টকশোর বিষয় প্রযোজক নির্ধারণ করেন, অংশগ্রহণকারী নন। তাহলে কিছু একটা লিখুন। আর তো সহ্য হয় না। আমার সেই পথের বন্ধুদের বলি, তারেক রহমান আপাতত বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলে আমি মনে করি না। তাঁর জন্য কিছু লিখে সময় নষ্ট করার কোন প্রয়োজন দেখি না। তাঁদের আরও বলি, তারেক রহমান কী বলেছে তাও আমি ভাল করে শুনিনি বা পত্রিকায় তখন পর্যন্ত পড়িনি। পড়ে চিন্তা করব। বাসায় এসে নব্য ইতিহাসবিদ তারেক রহমানের নতুন গবেষণালব্ধ তত্ত্ব পড়লাম। পড়ে আক্কেল গুড়ুম। তারেক রহমানের মেধা সম্পর্কে আমার কখনও তেমন উচ্চ ধারণা ছিল না। ১৬ তারিখে লন্ডনে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে দেয়া তাঁর বক্তব্য পড়ে আমি নিশ্চিত যে যদিও দীর্ঘ সাত বছর যাবত লন্ডনে তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য অবস্থান করছেন আসলে এতদিন তাঁর ভুল চিকিৎসা হয়েছে। গিয়েছিলেন কোমরের চিকিৎসার জন্য; কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে তাঁর মানসিক চিকিৎসারও প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এই আলামত দেখা যাচ্ছিল কয়েক মাস ধরে। প্রথমে আবিষ্কার করলেন তার পিতা মরহুম জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে গলা মেলালেন তাঁর মা বেগম জিয়া। এর রেশ না কাটতেই লন্ডনে বসে রহমান সাহেব বললেন, বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতির শপথ নিয়েছিলেন। কিছুদিন না যেতেই তারেক রহমান বঙ্গবন্ধুকে ‘পাকবন্ধু’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তারেক রহমান ভুলে গিয়েছিলেন তাঁর পিতা জিয়াউর রহমান করাচীতে বড় হয়েছেন। বাংলা লিখতে বা পড়তে পারতেন না। শুধু ‘জিয়া’ নামটুকু সই করতে পারতেন। পরে কিছু বাংলা শব্দ শিখেছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন পাওয়ার পর পাকিস্তানের অখ-তা রক্ষার জন্য শপথ নিয়েছিলেন। তা তাঁর কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। এ সবে আপত্তির কিছু নেই। তবে অন্তত একাত্তরের ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত জিয়া পাকিস্তানের আস্থাভাজন এক সেনা কর্মকর্তা ছিলেন, সেই কারণেই তিনি পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর জন্য সোয়াত জাহাজ হতে অস্ত্র খালাস করতে চট্টগ্রাম বন্দরে যাচ্ছিলেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু কখনও পাকিস্তানের কোন সরকারী চাকরি করেননি। অখণ্ড পাকিস্তানের তেইশ বছরে আঠারোবার কারারুদ্ধ হয়েছেন। ফাঁসির রুজ্জু হতে ফিরে এসেছেন অন্তত দু’বার। তারেকের এসব কথা শুনে তাঁর দলের লোকজন আড়ালে আবডালে বলাবলি করতে লাগলেন এই বলে- ‘ভাইয়ার চিকিৎসার ত্রুটি হচ্ছে মনে হয়। তার আরও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।’ এরপর ঘটল গত ১৬ তারিখের ঘটনা। এবার সকল লাজলজ্জা ফেলে দিয়ে অনেকটা পরনের লুঙ্গি মাথায় পেঁচিয়ে লন্ডনে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক দলীয় সভায় তারেক রহমান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সম্পর্কে ঘোষণা করলেন- একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা আসার ঠিক আগে ইয়াহিয়া খানকে প্রেসিডেন্ট মেনে তার সঙ্গে সমঝোতা করেছিলেন শেখ মুজিব। ঘটনা চক্রে এই দফায় রহমান সাহেবের সঙ্গে ছিলেন দু’জন বিজ্ঞ কেন্দ্রীয় নেতা। একজন বেগম জিয়ার উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন। এক সময় জুডিশিয়াল সার্ভিসে ছিলেন। অন্যজন দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। দু’জনই শিক্ষিত বলে জানি। তবে কথায় বলে অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। তাঁদের অবস্থাও হয়েছে অনেকটা সেই রকম। রহমান সাহেব বঙ্গবন্ধুকে আগাগোড়া ‘সে’ সম্বোধন করেছেন এবং বলেছেন, ‘সাতই মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা না করে সময়ক্ষেপণ করার জন্য শেখ মুজিবকেই এত লোক হত্যা করার দায়িত্ব নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, সেই কারণেই শেখ মুজিবকে রাজাকার বলা যায়। পৌনে দুই ঘণ্টার বক্তৃতায় তারেক আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দাবি করে তারা মুক্তিযুদ্ধের দল। আরে তুমি তো পৃথিবীর সব চেয়ে বড় রাজাকারের ভাই। ... মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দলকে তুমি ব্যান্ড করে দিলে, তা তো মুক্তিযুদ্ধের সব চেয়ে বড় বিপক্ষের কাজ হলো। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কাজ কে করবে ভাই? বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ...।’ তা হলে শেখ মুজিবকে কি বলা যায়? বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় ...।’ বিএনপির কর্মীরা হুক্কা হুয়া করে উঠেন ‘রাজাকার, খুনী’। পৌনে দু’ঘণ্টা ধরে এমন সব বাকওয়াজ চলতেই থাকে। এসব বিষয় নিয়ে আগামীতে বিস্তারিত আলোচনা করার ইচ্ছা রইল। তারেক রহমান অন্য কোন কিছু শিখেছেন কিনা জানি না তবে আদব-কায়দা যে শেখেনি তা তার বক্তব্যই বড় প্রমাণ। বঙ্গবন্ধুকে তাঁর একান্ত বন্ধুবান্ধব বা পিতা-মাতা ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি তারেক রহমানের মতো এমন ‘সে’ ‘তুমি’ সম্বোধন করতে শুনিনি, এমনকি বেগম জিয়াও না। বাঙালী সমাজে এখনও বড়দের আর কিছু না হোক ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করা হয়। কর্নেল অলি যখন বিএনপি ছাড়েন তখন তারেক রহমান আর তাঁর মা সম্পর্কে একটি সত্য কথা বলেছিলেন। তা মুখে আনতেও বিবেক বাধা দেয়। এখন দেখা যাচ্ছে কর্নেল অলির কথা এক শ’ ভাগ সত্যি। তারেক রহমানের বক্তব্যের পর দেশের সাধারণ জ্ঞান বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ কিছুটা হলেও হতভম্ব হয়েছেন। সাংবাদিকরা বিএনপির একাধিক শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তাঁরা সকলে তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন অথবা বলেন, তাঁরা বিষয়টা সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। বোঝা যাচ্ছে তাঁরা তারেক রহমানের বক্তব্যে কিছুটা হলেও বিরক্ত ও বিব্রত। ১৮ তারিখ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারেকের বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাঁর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে পরদিন বেগম জিয়াও প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছেন। তবে তারেক রহমানের বক্তব্য নিয়ে তেমন একটা কিছু বলেননি। তবে বিএনপির ভারাক্রান্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতে, তারেক রহমান সাহেব গবেষণা করে কিছু সত্য কথা বলেছেন তাতে শেখ হাসিনার গা জ্বালা করার কি আছে? দলে বাঘা বাঘা এত প-িত থাকতে নিম্ন মেধার একজন তারেক রহমানকে লাগল এতদিন পর এই ‘সত্য’ কথা বলতে? দেশে ফিরে রহমান সাহেব আর কোন কিছু না হোক কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক হতে পারেন। এখন শুরু হবে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও বিশ্লেষকের পালা। তাঁরা বলবেন, প্রধানমন্ত্রীর উচিত হয়নি এমন করে তারেক রহমান সম্পর্কে বক্তব্য দেয়া। তাঁরা দুই নেত্রীকে একপাল্লায় মাপার চেষ্টা করবেন। ভুলে যাবেন তারেক রহমান বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যা বলেছেন তা একজন অর্বাচীন বলতে পারে। আর যাকে নিয়ে বলেছেন তিনি জাতির জনক, হাজার বছরের বাঙালীর শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতা। তারেক রহমান যদি নিজেকে অর্বাচীনের পর্যায়ে নিয়ে আসেন তা হলে বলার তেমন কিছু নেই। বাস্তবে এক তারেক রহমানই তার দলের যা ক্ষতি করছেন অন্য কেউ তা করতে পারবেন বলে মনে হয় না। আসলে তারেক রহমান এসব বালখিল্য সুলভ আচরণ করে নিজে সার্কুলেশনে থাকতে চান অন্য কিছু নয়। রাজনৈতিক দেউলিয়াদের এমন আচরণ নতুন কিছু নয়। জানি তারেক রহমান আমার প্রশ্নের কোন উত্তর দেবেন না। তার পরও তাঁকে প্রশ্ন করতে চাইÑ আপনার বাবা যিনি বঙ্গবন্ধু সরকারের অধীনে একজন সামরিক অফিসার থাকা অবস্থায় ১৯৭৪ সালের ২৬ মার্চ সাপ্তাহিক বিচিত্রায় লিখেছিলেনÑ ‘এরা (পাকিস্তানীরা) যে ভয়ঙ্কর রকমের অশুভ একটা কিছু করবে, তার সুস্পষ্ট আভাসই আমরা পেলাম। তার পর এল ১ মার্চ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহ্বানে সারাদেশে শুরু হলো ব্যাপক অসহযোগ আন্দোলন ...। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ঘোষণা আমাদের কাছে এক গ্রীন সিগন্যাল বলে মনে হলো।’ তারেক রহমানের পিতা জিয়া তো এই ‘পাক বন্ধু, খুনী রাজাকারের’ হাত থেকেই বীরউত্তম খেতাবটি নিয়েছিলেন, তাঁকে জাতির পিতা আর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন। দেবেন নাকি এই খেতাবটি ফিরিয়ে? নাকি বলবেন, ওই জিয়াকে আমি চিনি না ? আল্লাহ আপনার সহায় হোন। ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৪ লেখক : গবেষক ও বিশ্লেষক।
×