ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিফলে গেল কোটি কোটি ডলারের সহায়তা

জঙ্গী দমনে পাকিস্তানকে কাছে পায়নি যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২০ ডিসেম্বর ২০১৪

জঙ্গী দমনে পাকিস্তানকে কাছে পায়নি যুক্তরাষ্ট্র

জঙ্গীবাদের হুমকি আরও গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণের জন্য পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সম্মত করার লক্ষ্যে সব ধরনের কৌশল দৃশ্যত প্রয়োগের চেষ্টা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ থেকে। কিন্তু ১২ বছরে ২ হাজার ৮শ’ কোটি ডলারের সাহায্য দেয়ার পর সকল মার্কিন উদ্যোগ ব্যর্থ হয় বলে ব্যাপকভাবে মনে করা হচ্ছে। খবর ইয়াহু নিউজের। প্রথমত, বুশ প্রশাসন পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশারফের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। তিনি তালেবান বিরোধী সামরিক অভিযানে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ব্যয়ের অর্থ প্রদানে সম্মত হয়েছিলেন এবং ড্রোন হামলা চালিয়েছিলেন। এ ড্রোন হামলায় নিহত হয় কিছু আল-কায়েদা নেতা ও জঙ্গী। খুবই আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়ে ওবামা প্রশাসন একতরফা অভিযান চারিয়ে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে। মার্কিন প্রশাসন পাকিস্তানের দুর্বল বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সাহায্য বৃদ্ধি করে ব্যাপকভাবে এবং বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর জন্য সাহায্য ছেঁটে দেয়। তারপরও জঙ্গীরা তাদের সহিংসতা অব্যাহত রাখে এবং তা আরও তীব্র ও মারাত্মকভাবে। তার উদাহরণ পেশোয়ারে শিশুদের স্কুলে মঙ্গলবারের ভয়াবহ হামলা। পাকিস্তান তালেবানের একটি অংশের এ হামলায় নিহত হয় প্রায় দেড় শ’ শিশু শিক্ষার্থী। পাকিস্তানে ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ক্যামেরন মুন্টার বলেছেন, ওয়াশিংটনে পাকিস্তান সম্পর্কে বেশ একটা অবসন্নতা রয়েছে। তিনি বলেন, ১২ বছর ধরে কেবল পাকিস্তান থেকেই জঙ্গীদের কাছ থেকে কঠিন চ্যালেঞ্জ আসছে না, চ্যালেঞ্জ আসছে সিরিয়া, ইউক্রেন, ইরান থেকেও। নাম উল্লেখ করলাম মাত্র কয়েকটি দেশের। এর বিরোধিতায় দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন আমাদের। পাকিস্তানে মঙ্গলবারের বর্বর হামলার নিন্দা প্রকাশ করা হয়েছে সর্বত্র। বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, এ রক্তক্ষয়ী ঘটনায় জঙ্গীদের প্রতি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মনোভাব পরিবর্তনের সময় এসেছে। মুন্টার ও অন্য কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে একটি শক্তিশালী সেনা সমর্থিত উক্তিকে খ-ন করতে পারছে না এবং তা হচ্ছে জঙ্গীদের এ হামলার কারণ সন্ত্রাসীদের বিরদ্ধে আমেরিকা লড়াই। বলা হচ্ছে, পাকিস্তানে জঙ্গীবাদ বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য পাকিস্তান নয়, বিদেশীরাই দায়ী। পাকিস্তান সমস্যা সমাধানে অসমর্থ। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফ পেশোয়ারে হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাবুল ছুটে গেছেন আফগান নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে। তারা বলেছেন, তাদের কাছে তথ্য আছে যে, আফগানিস্তানের পলাতক জঙ্গীদের নির্দেশে স্কুলে হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিম সালিম বাজওয়া বলেছেন, আমরা আশা করি, আগামী দিনগুলোতে আফগানিস্তানের পক্ষ থেকে জোরালো কর্মতৎপরতা দেখানো হবে। এক শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, তিনি আশা করেন, এ হামলা বন্ধে ব্যর্থতার দায় থেকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সরিয়ে নেয়ার জন্য ‘কমিউনিকেশনস কাবুকি’ হবে না জেনারেল রাহিলের এ সফর। বিশ্লেষকরা বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের কয়েক দশক ধরে জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ, অর্থায়ন এবং আশ্রয় দিয়ে এসেছে। তারা আফগানিস্তান ও কাশ্মীরে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে প্রতিহত করার জন্য প্রক্সি হিসেবে ব্যবহারও করেছে জঙ্গীদের। এখন এসবের পরিণতি মোকাবেলায় ব্যর্থ হচ্ছে পাক সেনাবাহিনী।
×