ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডিপিডিসি ও ডেসকোর নতুন উদ্যোগ

ঢাকায় বিদ্যুতের নতুন সাবস্টেশন হচ্ছে আন্ডারগ্রাউন্ডে

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২০ ডিসেম্বর ২০১৪

ঢাকায় বিদ্যুতের নতুন সাবস্টেশন হচ্ছে আন্ডারগ্রাউন্ডে

রশিদ মামুন ॥ ঢাকায় বিদ্যুতের নতুন সাবস্টেশন মাটির নিচে (আন্ডারগ্রাউড) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিতরণ ব্যবস্থা আধুনিকায়নের পাশাপাশি জমি বাঁচাতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উন্নত দেশে মাটির নিচের সাবস্টেশনের ওপর ইমারত পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দেশে এই উদ্যোগ প্রথম কার্যকর করা হচ্ছে। রাজধানীর বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়নে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) নতুন করে ৩৮ সাবস্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, বিভিন্ন উন্নত দেশে মাটির তলায় সাবস্টেশন নির্মাণ করা হয়। এতে উপরের জমি ব্যবহার করা যায়। দেখলে বোঝাই যায় না নিচে সাবস্টেশন রয়েছে। আমরাও দেশে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করছি। সব নতুন সাবস্টেশন মাটির তলায় নির্মাণ করা হবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, ঢাকার বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন করে সাবস্টেশন নির্মাণ করা খুব জরুরী। কিন্তু অধিকাংশ এলাকাতেই সাবস্টেশন নির্মাণের জন্য জমি পাওয়া যায় না। এতে পুরনো বিতরণ ব্যবস্থায় জোড়াতালি দিয়েই সরবরাহ চালাতে হয়। গ্রীষ্মে ফোর্স লোডশেডিংয়ের মতো ঘটনা ঘটে। যাতে পর্যাপ্ত বিদ্যুত থাকার পরও গ্রাহককে সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) নতুন করে ২৪ সাবস্টেশন নির্মাণ করবে। এর বেশিরভাগই হবে মাটির। যদিও আগে থেকে জমি রয়েছে বা এমন কোন এলাকা যেখনে জমির প্রাপ্যতা সহজ সেগুলো মাটির উপরে করা হবে। ডিপিডিসির পরিচালক অপারেশন রমিজ উদ্দিন সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের বেশিরভাগই মাটির নিচে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে কিছু মাটির উপরেও নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এতে করে ডিপিডিসির বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা উন্নত হবে। রাজধানীর সব থেকে বেশি এলাকায় বিদ্যুত বিতরণ করে ডিপিডিসি। ঢাকার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের আংশিক এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ করে কোম্পানিটি। বর্তমানে বিতরণ কোম্পানিটির ৪৫ সাবস্টেশন রয়েছে। প্রতিনিয়ত গ্রাহকের চাহিদা বাড়তে থাকায় সাবস্টেশনগুলো ওভারলোডে চলছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মে এই সঙ্কট আরও তীব্র হয়। ডিপিডিসি সূত্র জানায়, যেসব সঞ্চালন লাইন এবং ট্রান্সফরমার ওভারলোডে চলছে সেগুলোর ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। এ জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। চীনের আর্থিক সহায়তায় যা বাস্তবায়ন করা হবে। ডিপিডিসির এক কর্মকর্তা জানান, কোন এলাকায় নতুন বাড়িঘর হওয়ার সময় আমাদের অগ্রিম জানানো হয় না। ফলে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই এসব নতুন গ্রাহককে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হলে ওভারলোডজনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়। এতে গ্রাহকের দুর্ভোগের পাশাপাশি বিতরণ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যান্ত্রিক সমস্যায় প্রায়ই লাইন মেরামত করতে হয়। ও সময় গ্রাহক বিদ্যুত না পেয়ে মনে করেন লোডশেডিং, যদিও এটাকে কারিগরি ত্রুটি হিসেবে বিবেচনা করি আমরা। ওভারলোড সমস্যা দূর করা গেলে বিতরণ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। বিদ্যুত বিভাগে জমা দেয়া সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে (ডিপিডিসি) তিন হাজার ২৮২ নতুন আবেদন জমা পড়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন আবেদন জমা পড়ছে। নতুন গ্রাহকদের সংযোগ দেয়া শুরু হলে আরও চাপে পড়তে হবে। ডেসকো সূত্র জানায়, কোম্পানিটি বর্তমানে ৩১ সাবস্টেশনের মাধ্যমে বিদ্যুত সরবরাহ করছে। নতুন করে আরও ১৪ সাবস্টেশন নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এ ছাড়া দশটি সাবস্টেশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। ঢাকা ও গাজীপুরের আংশিক এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ করে থাকে ডেসকো। ঢাকার গুলশান-বনানী-বারিধারার মতো অভিজাত এলাকাগুলোও রয়েছে ডেসকোর আওতায়। এসব এলাকায় সাবস্টেশন নির্মাণের জন্য সহজে জমি পাওয়া খুবই দুষ্কর। সম্প্রতি ডেসকো বেশ ক’টি সাবস্টেশন নির্মাণ করতে গিয়ে জমি জটিলতায় পড়েছে বলে জানা যায়। এতে এসব সাবস্টেশন নির্মাণ করতে না পারায় বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গ্রাহক যোগ হওয়ায় ওভারলোডে পড়তে হচ্ছে। জানতে চাইলে ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরজাদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা নতুন যেসব সাবস্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা করছি তার সবই মাটির নিচে করা হবে। এতে মাটির উপরের জমি ব্যবহার করা যাবে। এ ধরনের চৌদ্দটি নতুন সাবস্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি। সূত্র মতে, ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানিতে (ডেসকো) চার হাজার ৫০ নতুন বিদ্যুত সংযোগের আবেদন রয়েছে।
×