ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শুদ্ধ সঙ্গীত উৎসবে রাতভর সুরের অনুরণন

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ২০ ডিসেম্বর ২০১৪

শুদ্ধ সঙ্গীত উৎসবে রাতভর সুরের অনুরণন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শীতের সকাল থেকেই শুরু হয় সুরের অনুরণ। চলে দুপুর অবধি। এরপর হিমেল সন্ধ্যায় তৃতীয় অধিবেশনের সূচনা হয়। রাতব্যাপী কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীতের সুর-তাল ও লয়ের মাধুর্যে সিক্ত হন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতানুরাগীরা। ভোর পর্যন্ত ভেসে বেড়িয়েছে সেই অনন্য প্রশান্তিময় সুরেলা শব্দধ্বনি। আর উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের বৈভবময় রাগ-রাগিনীর মায়াজালে শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের সংযোগে পরম প্রশান্তির ছোঁয়া অনুভব করেছেন শ্রোতাকুল। এভাবেই সুরমাধুর্যে শেষ হলো ছায়ানটের শুদ্ধসঙ্গীত উৎসব। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী উৎসবের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। উচ্চাঙ্গের গানপ্রেমীদের জন্য আবেদনময় ছিল তৃতীয় অধিবেশনটি। তাই তো সন্ধ্যা পেরুনো নিশি পার করে ভোর পর্যন্ত সঙ্গীতপিপাসু শ্রোতায় পরিপূর্ণ ছিল মিলনায়তন। আর মিলনায়তনের বাইরে বড় পর্দায় দেখান হয় ভেতরকার আয়োজনটি। এখানে বসেও সুরের আস্বাদন নিয়েছেন সমঝদার অনেক শ্রোতা। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শুরু হয় তৃতীয় অধিবেশন। প্রথমেই ছিল ইমন কল্যাণ রাগের আশ্রয়ে ছায়ানটের শিল্পীদের বৃন্দ পরিবেশনা। অসিত দের পরিচালনায় তবলায় সঙ্গত করেন ইফতেখার আলম ডলার। এরপর কণ্ঠসঙ্গীত নিয়ে মঞ্চে আসেন ঢাকার শিল্পী সঞ্জীবন কল্যাণ। কণ্ঠের খেলায় পরিবেশন করেন রাগ ইমন। শুদ্ধ কল্যাণ রাগের আশ্রয়ে কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন করেন ঢাকার শিল্পী মাহমুদুল হাসান। কণ্ঠসঙ্গীতের পরিবেশনার পর বৃন্দ তালবাদ্যের ধ্বনিতে মুখর হয় ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তন। এ পরিবেশনাটিতে অংশ নেন এনামুল হক ওমর, গৌতম সরকার, জাকির হোসেন ও বিশ্বজিৎ নট্ট। রাগ জয়জয়ন্তীতে সুর ছড়ান যশোরের শিল্পী অর্ধেন্দুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। রাগ বেহাগের আশ্রয়ে কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন করেন ঢাকার শিল্টপী সুস্মিতা দেবনাথ শুচি। সরোদের মিহি সুরে শ্রোতার অন্তরে স্নিগ্ধ অনুভূতির সঞ্চার করেন ভারতের দিল্লীর সরোদবাদক বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন কলকাতার তবলিয়া বিপ্লব ভট্টাচার্য। মুম্বাইয়ের শিল্পী সুধীর হরিভাও পোটের কণ্ঠসঙ্গীতের পরিবেশনাটিও দারুণ উপভোগ্য হয়ে ধরা দেয় শ্রোতার মননে। ঢাকার শিল্পী জগদানন্দ রায়ের কণ্ঠে গীত হয় রাগ মালকোষ। রাগ যোগকোশ অবলম্বনে সেতারের সুরধ্বনি ছড়ান ঢাকার শিল্পী নিশিত দে। এছাড়াও গভীর রাত শেষে ভোরের সূচনালগ্নে কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন তরেন ঢাকার দুই শিল্পী রেজোয়ান আলী ও অসিত দে। এর আগে সমাপনী দিনে সকাল নয়টায় দ্বিতীয় অধিবেশনের সূচনা হয়। এ পর্বে কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন করে ঢাকার দুই শিল্পী সুমন চৌধুরী ও আমিন আখতার সাদমানী। কণ্ঠের চমৎকার কারুকার্যে শ্রোতার মন রাঙিয়ে তোলেন সিলেটের শিল্পী সুপ্রিয়া দাশ। বাশিতে সুর ছড়ান ঢাকার শিল্পী মর্তুজা কবীর মুরাদ। ছায়ানটের শিল্পীদের বৃন্দ সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় দ্বিতীয় অধিবেশন। বিজয় উৎসবে মঞ্চায়িত বীরাঙ্গনা ॥ পল্লী বাংলার প্রাণোচ্ছল এক যুবতী মরিয়ম। ভালবাসে মায়ের আঁচলের গন্ধ নিতে, পুলকিত হয় তেঁতুলের স্বাদে। স্বামীর হাতটি আঁকড়ে ধরে পায় অনাবিল সুখের অনুভব। হঠাৎ করে কালবৈশাখীর তা-বের মতো ধেয়ে আসা একাত্তরে পাল্টে যায় তার জীবনধারা। প্রতীক্ষায় থাকলেও স্বামী আর ফিরে আসে না। ছোট্ট গ্রামটিতে হানা দেয় পাকবাহিনী। পাকিদের হাত থেকে বাঁচার তাগিদে সে লুকিয়ে থাকে বাড়ির পেছনের পুকুরে। তবে এত কিছু করেও রেহাই মেলে না। ধরা পড়ে পাকবাহিনীর কাছে। হারাতে হয় জীবনের অমূল্য সম্পদ নারীর সম্ভ্রম। মুক্তিযুদ্ধে বীরমাতাদের আত্মদানের এমন বাস্তব গল্প নিয়েই আবর্তিত হয়েছে বীরাঙ্গনা নাটক। ব্রিটেনের প্রবাসী বাঙালীদের সংগঠন কমলা কালেক্টিভের এই প্রযোজনাটি শুক্রবার সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হলো শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ১৩ দিনব্যাপী বিজয় উৎসবের অংশ হিসেবে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচজন বীরাঙ্গনা নারীর সচিত্র জীবনের আলোকে যৌথভাবে নাটকটি রচনা করেছেন সামিনা লুৎফা ও লীসা গাজী। নির্দেশনা দিয়েছেন ফিলিয ওযজান। অতল স্পর্শী প্রযোজনাটিতে অনবদ্য একক অভিনয় করেছেন লীসা গাজী। অনুবাদের পাশাপাশি নাটকের সঙ্গীতও রচনা করেছেন এই গুণী শিল্পী। আলোক পরিকল্পনা নাসিরুল হক। কণ্ঠসঙ্গীতে অংশ নিয়েছেন দেলওয়ার হোসেন ও ফয়সাল গাজী। সবার জন্য উন্মুক্ত নাটকটি আগামী ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মঞ্চস্থ হবে চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউটে। পরবর্তীতে সিরাজগঞ্জ ও কুষ্টিয়ায় প্রযোজনাটির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। শিশু একাডেমির বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানমালা ॥ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে শুক্রবার বিকেলে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল-ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির চেয়ারম্যান বরেণ্য কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন। পুরস্কার প্রদান শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শতাধিক শিশু অংশগ্রহণ করে। চিত্রাংকন, পুরস্কার বিতরণ ও একাডেমিসহ বিভিন্ন শিশু সংগঠনের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আলোচনা দিয়ে সাজানো হয়েছিল বর্ণিল এই মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান।
×