ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাস বিকৃতি রোধে জার্মানির মতো হলোকাস্ট আইন হোক

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ২০ ডিসেম্বর ২০১৪

ইতিহাস বিকৃতি রোধে জার্মানির মতো হলোকাস্ট আইন হোক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, যখনই একটি জাতিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র হয়েছে তখনই সেদেশের ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। নবাব সিরাজুদ্দৌলার মৃত্যুর পর ইংরেজরা ইতিহাস বিকৃতি করেছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তারা বুঝতে পারে একটি আদর্শকে হত্যা করা যায় না। তার পরই এদেশে শুরু হয়েছে ইতিহাস বিকৃতি। তারা মিথ্যাগুলো পাকিস্তান থেকে সরবরাহ করত এবং করছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতায় বসে জিয়া, এরশাদ সেই মিথ্যাগুলোকে লালন করেছে। আজকে তারেকের পাশে জামায়াতী স্কলার, তারা এক একটি মিথ্যা তৈরি করে দেয় আর তারেক তা মিডিয়ায় উপস্থাপন করে। তাই দেশের ইতিহাস বিকৃতি রোধে জার্মানির মতো হলোকাস্ট আইন করা হোক। আমার ধারণা, তারেক পাগল হয়ে গেছে। কারণ তার ক্ষমতা নেই। আলোচনায় থাকার জন্য যা ইচ্ছে তাই বলছে। প্রধানমন্ত্রীকে জানাই, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে ‘গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ’ শীর্ষক আলোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, যখন থেকে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে মর্যাদা দেয়ার অপচেষ্টা হয়েছে তখন থেকেই ইতিহাস বিকৃতির শুরু। মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার একটি অবদান আছে। তাঁকে যুদ্ধে চার্জ (নিয়োগ) করা হয়। তবে, মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে জিয়াকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয়নি। যখন জানা যায়, জিয়া ডাবল স্ট্যান্ডার্ড (উভয় মতাদর্শ) বজায় রাখছে তখন মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে তার জেড ফোর্স নিষ্ক্রিয় করে দেয়া হয়। তবু জিয়া ছিল অসতর্ক। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জিয়াকে তুলনা করা চরম ধৃষ্টতা এবং মূর্খামির শামিল। যুদ্ধ শেষে বর্তমান বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ঘরে তুলে নিতে মেজর জিয়ার অস্বীকৃতির কথা উল্লেখ করে বিশিষ্ট কলামিস্ট ও সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, জিয়াকে চাপ দেয়া হয় খালেদাকে বাসায় ফেরত নিতে। বঙ্গবন্ধু পুরো ঘটনা জানার পর উভয়কে (জিয়া ও খালেদা) ডেকে পাঠান। তখন খালেদাকে গণভবনের পেছনে বসিয়ে রাখা হয়। জিয়ার মুখ থেকে পুরো ঘটনা খুব মনোযোগ দিয়ে শোনেন জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধু সব শোনার পর জিয়াকে বুঝিয়ে বলেন, আমার এই মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিলাম। সেই সময়ে মতিয়া চৌধুরী বলেছিলেন খালেদা বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় মেয়েÑ উল্লেখ করে গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, বলা যায় বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় মেয়ে খালেদা। আর এখন তিনি তাঁর বাবার মৃত্যুদিনে নিজের মিথ্যা জন্মদিন পালন করেন। তিনি আওয়ামী লীগের সমালোচনা করুন, কিন্তু তিনি বা তাঁরা কি করে দেশের স্থপতিকে নিয়ে কুৎসা রটান? ওই আলোচনাসভায় শহীদ বুদ্ধিজীবী আলিম চৌধুরীর কন্যা ড. নুজহাত চৌধুরী শম্পার দাবিকৃত ইতিহাস বিকৃতি রোধে ‘হলোকাস্ট’ আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিলেতের মতো বাংলাদেশেও হলোকাস্ট আইন চালু করতে হবে। বাংলাদেশের ইতিহাসের মূল ৫টি বিষয় নিয়ে কেউ যেন প্রশ্ন তুলতে না পারে এমন আইন করতে হবে। আর যারা প্রশ্ন তুলবে তারা রাষ্ট্রদ্রোহী। তিনি আরও বলেন, তারেককে নিয়ে আমার বক্তব্য মিডিয়ায় টুইস্ট করে প্রচারিত হয়েছে। তারেকের সঙ্গে আমার দুইবার দেখা হয়েছে। প্রথমদিন যখন ওকে দেখি তখন মেজর জিয়া বেল্ট দিয়ে বেধড়ক পিটাচ্ছিলেন। কারণ জিজ্ঞেস করলে জিয়া বলেন, পড়াশোনা তো করেই না, মেয়েদের টিস করে। ও একটা কুলাঙ্গার। কিন্তু মিডিয়ায় ‘টিস’ শব্দটি কিস হয়ে গেছে। ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের রচয়িতা প্রবীণ এই সাংবাদিক বলেন, ড. কামাল হোসেন বলেন দেশে গণতন্ত্র নাই। আমি বলি, ড. কামাল হোসেনের গণতন্ত্র আমি চাই না। আমি চাই শেখ হাসিনার গণতন্ত্র। শেখ হাসিনার সরকারের অনেক ভুল-ত্রুটি আছে কিন্তু তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাঁচিয়ে রেখেছেন। ইতিহাস বিকৃতি রোধ করা গেলে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা আরও উন্নত হতো। কিন্তু আমরা যে অবস্থায় আছি সেখান থেকে কোন কারণে সরে গেলে দুটি মাত্র বিকল্প রাস্তা খোলা আছে। তারা আমাদের দেশকে পাকিস্তান বা আফগানিস্তান বানাবে। আমাদের দেশে অতীতে বুদ্ধিজীবী ছিল, তাদের হত্যা করা হয়েছে। এখন যারা আছেন তাদের অধিকাংশই কুবুদ্ধিজীবী । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক তাঁর বক্তৃতায় বলেন, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের কথা বলি, যদি পরিসংখ্যান খুঁজে বের করতে চান, তাহলে তা খুঁজে বের করা অসম্ভব। আমরা এখনও ঢাবি থেকে অংশ নেয়া সকল শহীদকে তালিকাভুক্ত করতে পারিনি। নতুন করে তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পর তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়, নাম ফলকে তাদের নাম যুক্ত করা হয়। ইতিহাস বিকৃতি ও বঙ্গবন্ধু হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু হয়নি। তিনি ঠিক আমাদের সঙ্গেই আছেন। থাকবেন। ত্রিশ লাখ শহীদ ও বঙ্গবন্ধু আমাদের সঙ্গে থাকবেন। এই সংখ্যা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যারা কথা বলে তারা দেশের শত্রু, ’৭১-এর শত্রু। তাদের প্রতিরোধ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। জাতির জনকের প্রতি কটাক্ষ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ২০১৪ সালে এসেও আমাদের ’৭১-এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে, ২০১৫ সালেও; কারণ ’৭১ আমাদের অস্তিত্ব। পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি বিচারপতি এএফএম মেজবাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠেনর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন হুমায়ুন কবীর, প্রকৌশলী মঞ্জুরুল হক, ড. নুজহাত, কৃষিবিদ মোহাম্মদ মোবারক আলী, মোনায়েম সরকার প্রমুখ। বঙ্গবন্ধু ও ২১ ফেব্রুয়ারি অবিচ্ছেদ্য ॥ বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ও ২১শে ফেব্রুয়ারি অবিচ্ছেদ্য। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবরণ করেছেন। তাই তরুণ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি নিয়ে সমৃদ্ধ দেশ গঠন করতে হবে। শুক্রবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আওয়ামী সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। এর আগে তিনি মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। জোটের সভাপতি কবি মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, জোটের সহ-সভাপতি জলিলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালে আমার চোখের সামনেই পাক হানাদাররা এই শহীদ মিনার ভেঙ্গে দেয়। পরে সমস্ত ষড়যন্ত্র ও কামানের গোলা প্রতিহত করে আমরা শহীদ মিনারকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করেছি। এর সঙ্গে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ভাষা ও সংস্কৃতি জড়িত। জড়িত বঙ্গবন্ধু ও আমাদের স্বাধীনতার স্মৃতি। এই শহীদ মিনার অব্যয় ও অক্ষয় হোক। জাগ্রত করুক তরুণ প্রজন্মের মাঝে এক নতুন চেতনা।
×