ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চলতি অধিবেশনে বিল পাস না হওয়ায় হতাশা ॥ দীপ্তিমান বললেন, আমরা ফের গণসংযোগে নেমেছি

আশাহত ছিটমহলে ফের আন্দোলনের প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২০ ডিসেম্বর ২০১৪

আশাহত ছিটমহলে ফের আন্দোলনের প্রস্তুতি

তাহমিন হক ববি, ছিটমহল থেকে ॥ ফের আশা-নিরাশার দোলাচলে ১৬২ ছিটমহল। ৬৭ বছরের অবরুদ্ধ জীবন থেকে কি তারা মুক্তি পাবেন না এমন প্রশ্ন দানা বাঁধছে ছিটমহলবাসী মনে। ভারতের লোকসভার চলতি শীতকালীন অধিবেশনেই স্থল সীমান্ত (ছিটমহল) বিনিময় হস্তান্তরের চুক্তিটি পাসের মাধ্যমে ছিটমহলের সমস্যার সমাধান হওয়ার কথা থাকলেও মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বিলটি পাস না হওয়ায় বিষয়টি আবারও ঝুলে গেছে। আর এতেই ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির নেতারা ছিটমহলগুলোতে ঘুরে ঘুরে গণসংযোগ করে আন্দোলনে নামতে চাইছেন। তারই অংশ হিসেবে নীলফামারীর অভ্যন্তরে ভারতীয় চারটি ছিটমহলবাসীর মাঝে শুক্রবার সকালে গণসংযোগ করেন ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির যুগ্ম স¤পাদক ভারতের দীপ্তিমান সেনগুপ্ত, কলকাতার বিশিষ্ট সাহিত্যিক অমর মিত্র, সমন্বয় কমিটির সভাপতি বাংলাদেশের মইনুল হক ও সাধারণ স¤পাদক গোলাম মোস্তফা প্রমুখ। জনসংযোগে ছিটমহল বড়খানকিবাড়ি খারিজা ছিটমহলের চেয়ারম্যান যদুনাথ রায়ের সভাপতিত্বে মতবিনিময়সভা হয়। সভায় বলা হয় ছিটমহল বিনিময় নিয়ে আমরা কোন নাটক দেখতে চাই না, দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। ৬৭ বছরের অবরুদ্ধ জীবন থেকে মুক্তি পেতে চাই। ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। এ সময় জনকণ্ঠের এই প্রতিবেদকে দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, ছিটমহল চুক্তি বাস্তবায়নে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সরকার -ভারতের সঙ্গে তিনটি চুক্তি করেছিল। দীর্ঘদিন সেসব চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ছিটমহল বিনিময় বাস্তবায়নের প্রথম দাবি তোলেন ভারতের দিনহাটার সাবেক বিধায়ক প্রয়াত দীপক সেনগুপ্ত। তিনি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি। তার মৃত্যুর পর তার ছেলে হিসেবে আমি (দীপ্তিমান সেনগুপ্ত) ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির যুগ্ম স¤পাদকের দায়িত্ব পালন করে চলেছি। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছিটমহল চুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, আজ তাঁর কারণেই আমরা ছিটমহলের অবরুদ্ধ জীবন থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখছি। এই চুক্তির বাস্তবায়ন ঘিরে প্রতিটি ছিটমহলে আনন্দ উৎসব হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হয় বিজয় দিবস। আমরা দেশের নাগরিক হয়ে আগামীতে অনুষ্ঠান করতে চাই। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরার মধ্যে স্বাক্ষরিত স্থল সীমান্ত চুক্তি এবং ২০১১ সালে হাসিনা-মনমোহনের স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রটোকল ভারতের পার্লামেন্টে অনুমোদন ও সংবিধান সংশোধনের জন্য কনস্টিটিউশন ১১৯তম সংশোধনী সংবিধান এবার শীতকালীন অধিবেশনে তোলা হয়। আশা ছিল ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যেই চুক্তি বাস্তবায়ন হবে। কিন্তু এটি ফের ঝুলিয়ে রাখা হলো। কিন্তু কেন এই বিলম্ব প্রশ্ন দীপ্তিমান সেনগুপ্তের। তিনি বলেন, ছিটমহল চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের রাজ্য ও লোকসভায় বিলটি তোলা হয়েছে। আমরা জানি ভারতের পার্লামেন্টে ৫৪৩ এমপি রয়েছেন। বিলটি পাসের জন্য দুই-তৃতীয়ংশ অর্থাৎ ৩৬২ এমপির সমর্থন লাগে। তার মতে কংগ্রেসের ৪৪, তৃণমূলের ৩৪ বাম দলগুলোর ১২ ও বিজেপি ২৮৩ মিলে চুক্তি পাসের ৩৭৩ ভোট রয়েছে। তাহলে কেন এই বিলম্ব? তিনি আশা করেন, চুক্তিটি পাস করে বাংলাদেশে সফরে এসে ছিটমহল বাংলাদেশকে উপহার দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দীপ্তিমান বলেন, চুক্তি বাস্তবায়িত না হলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এবার বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। তাই প্রতিটি ছিটমহলে আমরা গণসংযোগ চালাচ্ছি।
×