ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আগে নিজেদের সামলান এবার বললেন খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪

আগে নিজেদের সামলান এবার বললেন খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, অন্যকে উপদেশ দেয়ার আগে নিজের জিভ সামলান তাহলে দেশের মানুষ শান্তি পাবে। কথায় কথায় আমাদের গালি দিতে দিতে আপনি এখন বিদেশীদেরও গালি দিচ্ছেন। স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী হলেও আপনার মুখে এভাবে কথা বলা মানায় না। সংযত হয়ে কথা বলুন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ টিকবে না, বাংলাদেশের নামও থাকবে না। তাই আমার বয়স হলেও এখনও সাহস আছে। দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করে প্রাণ দিতেও প্রস্তুত। সময় হলে আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই প্রস্তুত থাকুন। এবার ঢাকার রাজপথ আর খালি যাবে না। পুলিশকে আর একটিও গুলি না চালানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এবার যদি গুলি চলে, তাহলে জনগণ তা মোকাবেলা করবে। গুলি, বন্দুক ও টিয়ারগ্যাস উপেক্ষা করে আমরা রাজপথে থাকব। তবে পুলিশকে বলছি বালুর ট্রাক দিয়ে আমার বাড়ি আটকিয়ে রাখবেন না, সাহস থাকলে গেট খোলা রাখবেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘নব্বইয়ের ডাকসু ও ছাত্রঐক্য’ আয়োজিত দিনব্যাপী কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। দেশে বিচার বিভাগ বলে কিছু নেই মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, বিচার বিভাগ এখন আওয়ামী লীগের পকেটে চলে গেছে। আওয়ামী লীগের জন্য বিচার এক, আর বিরোধীদলের জন্য বিচার আরেক। এখন বিচারপতিরা চেহারা দেখে বিচার করেন। আওয়ামী লীগের সব মামলা শেষ হয়ে যায় কিন্তু বিএনপির মামলা শেষ হয় না। তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় আমার নামে ৫টি ও শেখ হাসিনার নামে ১৫টি মামলা হয়। কিন্তু শেখ হাসিনার সব মামলা তুলে নেয়া হয়েছে। তাই আমার মামলা চালাতে হলে শেখ হাসিনার সব মামলা আবার পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। বিচারপতিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা আপনাদের সম্মান করি। নিরপেক্ষভাবে বিচার করুন। যে অন্যায় করে তাকে সাজা দিন। শেখ হাসিনার কথামতো চলবেন না। সত্যের পথে থেকে সকলের প্রতি সমান আচরণ করুন। আপনারা মানুষ মারলে, মানুষকে ফাঁসি দিলে আল্লার কাছে জবাব দিতে হবে। কাউকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দিলে আল্লার কাছে গিয়ে ১০গুণ শাস্তি পেতে হবে। আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা জনসমাবেশ দেখলে, গঠনতান্ত্রিক রাজনীতি দেখলে, ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন দেখলে ভয় পান। তাই নির্বিচারে মানুষ হত্যা, গুম ও খুন করেন। পুলিশকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা জনগণের সেবক। কিন্তু আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে ক্ষমতায় জেঁকে বসেছে। তাই তাদের কথায় সাধারণ জনগণের বুকে গুলি করা বন্ধ করেন। কারণ যাদের আপনি গুলি করছেন তাদের মধ্যে কেউ আপনার মেয়ে, ভাই, বোন বা ছেলে হতে পারে। দেশে গুম, খুন এখনও বন্ধ হয়নি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, র‌্যাব এখন পেশাদার খুনীতে পরিণত হয়েছে। রিমান্ডে তারা স্বীকার করেছেন তারা হুকুম অনুযায়ী কাজ করেছেন। জনগণ জানতে চায়, কারা হুকুম দিয়েছে। র‌্যাব কর্মকর্তা জিয়াকে গ্রেফতার করলে সব বের হয়ে আসবে; কাদের নির্দেশে মানুষ খুন করা হচ্ছে। দেশের অবস্থা খুবই খারাপ উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, প্রশাসনে সরকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে এখন চাকরি আতঙ্ক বিরাজ করছে। কখন-কার চাকরি চলে যায় এ নিয়েই আতঙ্ক। এমনকি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও এখন ভয়ে ভয়ে থাকে। তিনি বলেন, সরকার বলছে সরকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই নাকি বিএনপি করে। আর তাই তো অনেক সরকারী অফিসারকে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই যদি বিএনপিরই হয় তা হলে তো দেশে সবাই বিএনপির সমর্থক। খালেদা জিয়া বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচন হলো। তাতেও কারচুপি ছিল। সেই নির্বাচন ছিল গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার নির্বাচন। আর তাই সে সময় ওই নির্বাচন আমরা মেনে নিয়েছিলাম। পরে দেশে যে উপনির্বাচনগুলো হলো আওয়ামী লীগের অধীনে তাতে যে ধরনের কারচুপি হয়েছে এতে সবাই বুঝে যায়; আওয়ামী লীগের আধীনে কোন নির্বাচন সঠিক ও সুষ্ঠু হয় না। গোয়েন্দারা সরকারকে ভুল তথ্য দেয় বলে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, আমার সঙ্গে বৈঠকের কথা বলে সরকারী কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। আমি প্রধানমন্ত্রী ছিলাম তাই আমার সঙ্গে কেউ দেখা করলে তা বেআইনী হয় না। প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের সঙ্গে দেখা করলে সেটা দোষের হয় না? তিনি বলেন, এ সরকারের লোকেরা ১৪ হাজার কোটি টাকা পাচার করে সুইস ব্যাংকে রেখেছে। আর সোনার বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন বিমানে সোনা আসছে। আর এর সঙ্গে জড়িত সিভিল এ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান জামালউদ্দিন। বেলা ১১টায় কনভেনশন উদ্বোধন করতে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নব্বইয়ের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটাতে হবে। এ জন্য দেশের সকল শ্রেণীপেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে জাগিয়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে ফখরুল বলেন, তারেক রহমান নয়, কথাবার্তায় আপনারই সংযত হওয়া উচিত। আপনি যে ভাষায় বক্তব্য দিচ্ছেন সে ভাষা আমরা উচ্চরণ করতে পারি না। আপনারা যখন মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের উপসেনাপতি এ কে খন্দকারকে রাজাকার বলেন, তখন হুঁশ থাকে না। তারেক রহমান ইতিহাসভিত্তিক বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে আপনাদের গায়ে জ্বালা ধরেছে। আপনারা মনে রাখবেন ইট মেরেছেন, পাটকেল খেতে হবে।
×