ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভেজাল ওষুধ ও ভুয়া চিকিৎসা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪

ভেজাল ওষুধ ও ভুয়া চিকিৎসা

দেশে ওষুধ শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। দেশের প্রায় ৯৫ ভাগ ওষুধ শিল্পই বেসরকারী বিনিয়োগে গড়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, ওষুধ শিল্প বর্তমানে দেশের অন্যতম রফতানি খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। দেশে আন্তর্জাতিক মানসম্মত অনেক ওষুধ কারখানাও রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর নিম্নমানের ভেজাল ওষুধ কারখানা। একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে ভেজাল আর নকল ওষুধে সয়লাব হচ্ছে দেশ। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে ভুয়া ডাক্তার, ভুয়া হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিকের কথাও। এসব কারণে চিকিৎসা সেক্টরে বিরাজ করছে এক ধরনের অনিয়ম। বিষয়টি স্বাস্থ্য খাতে মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করছে। রোগ মুক্তির জন্য যে চিকিৎসা সেখানে রোগাক্রান্ত হওয়া এমন কি জীবনহানির কোন আশঙ্কা কেউ প্রত্যাশা করে না। তাই রোগের প্রতিকার এবং প্রতিরোধের স্বার্থে সংশ্লিষ্টদের বিষয়গুলোর ওপর যথাযথ নজর দেয়া জরুরী। অতি সম্প্রতি প্রকাশিত এক সংবাদে জানা গেছে, খোদ রাজধানীর কসাইটুলিতে ঘরে বসেই তৈরি হচ্ছে ধনুষ্টঙ্কারের ইনজেকশন, নাকের ড্রপ ও হৃদরোগের ওষুধ। দুই টাকা মূল্যের ব্যথানাশক ওষুধ এট্রোফাইনের বোতলে নাম মুছে ভেতরে পানি ভরে ধনুষ্টঙ্কারের ওষুধের নাম বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিক্রি করা হচ্ছে হাজার টাকায়। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ এ্যানটেক দিয়ে বানানো হচ্ছে হৃদরোগের ‘স্ট্যাকোর’ ওষুধ। ওয়াসার পানি দিয়ে নাকের ড্রপ তৈরি হচ্ছে। এছাড়া ব্যথানাশক রোলাক ও এন্টিবায়োটিক এজিথ্রোমাইসিনসহ ছয় ধরনের জীবনরক্ষাকারী ওষুধও নকলের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নকল ও ভেজাল এসব ওষুধ দেশের বৃহত্তম ওষুধের পাইকারি মার্কেট মিটফোর্ডে বিক্রি হচ্ছে এবং সেখান থেকে বাজারজাত হচ্ছে সারাদেশে। কোন কোন ওষুধে কেমিক্যালও মেশানো হয়। এ ধরনের ভেজাল, নকল ও বিষাক্ত ওষুধ রোগীর জন্য খুবই বিপজ্জনক। রোগমুক্তির জন্য ওষুধের ভূমিকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোও মানসম্মত হওয়া জরুরী। গুরুত্ব দেয়া দরকার ভুয়া চিকিৎসক ও অপচিকিৎসার বিষয়টিতেও। এই বিষয়গুলো এখন জীবননাশের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সময় এসব অপরাধ বা কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয় কিন্তু আইনের দুর্বলতা এবং একটি সুনির্দিষ্ট ওষুধ নীতিমালা না থাকার কারণে তা রোধ করা যাচ্ছে না। দেশের প্রতি ওষুধ কোম্পানি যাতে মানসম্মত ওষুধ উৎপাদন করে তা নিশ্চিত করা দরকার। ওষুধের দোকানে ড্রাগ লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা, লাইসেন্সবিহীন দোকানের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা দরকার। জেলাভিত্তিক ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অফিস স্থাপন করা যেতে পারে। তারা নিয়মিত তদারকি করলে জনগণ মানসম্মত ওষুধ ও চিকিৎসা পাবে। এতে কমবে ভেজাল ওষুধ বিক্রিও। প্রতি কোম্পানিই বাধ্য হয়ে মানসম্মত ওষুধ তৈরি করবে। রোগীবান্ধব ওষুধ নীতিমালা হওয়া জরুরী। জীবন রক্ষা করে যে ওষুধ সে ওষুধের গুণগতমান বজায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও সক্রিয় হতে হবে।
×