ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তারেক উন্মাদ- যা ইচ্ছা তাই বলুক, বঙ্গবন্ধুর কিছু যায় আসে না

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪

তারেক উন্মাদ- যা ইচ্ছা তাই বলুক, বঙ্গবন্ধুর কিছু যায় আসে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জীবন্ত উন্মাদ ও পাগল বলে আখ্যায়িত করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি বলেন, পাগল না হলে কেউ বিদেশে বসে এ কথা বলে না। মীর জাফরের ছেলে মিরন শেষ বয়সে পাগল হয়ে গিয়েছিল। নানান ধরনের পাগলামি করত। আর বলত আমি দিল্লী সম্রাট। কখনও বলত আলীবর্দী খান সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসনে বসিয়ে ভুল করেছিল। পাগলামি করতে করতে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়েছিল। তারেক রহমানের শেষ পরিণতি হবে উন্মাদ অবস্থায় বলে উল্লেখ করেন তিনি। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) মিলনায়তনে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সেভেন মার্চ ফাউন্ডেশন নামক সংগঠনের মতবিনিময় সভায় গাফ্্ফার চৌধুরী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, তারেক রহমানকে অর্ধ উন্মাদ বললেও সম্মান করা হবে। সে পুরোটাই পাগল এবং উন্মাদ। তারেক রহমানকে অশিক্ষিত, অযোগ্য উল্লেখ করে বলেন, মামলার ভয়ে লন্ডনে পালিয়ে আছে। দেশে এসে মামলা মোকাবেলা করার যোগ্যতা তার নেই। লন্ডনে বসে লাখ লাখ পাউন্ড খরচ করে জামায়াতের লোক ভাড়া করে কি সব বলে বেড়াচ্ছে। সে যদি দেশে এসে গ্রেফতার হয়ে মামলা মোকাবেলা করত তাহলে তার বীরত্ব প্রকাশ পেত। সেই যোগ্যতা তারেকের নেই। গাফ্্ফার চৌধুরী বলেন, একদিন ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে দেখি মেজর সাহেব এক বালককে বেল্ট দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলেছে। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন খালেদা জিয়া। তিনি কিছু বলছেন না। ছোট্ট বালককে কেন মারছেন বলতেই জিয়াউর রহমান বললেন, আরে ভাই বলবেন না। তার কুকর্মের জন্য শাহীন স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মেয়েদের সঙ্গে যতসব অপকর্ম করে বেড়ায়। তিনি উল্লেখ করেন, এই সেই তারেক রহমান। মামলার ভয়ে লন্ডনে পালিয়ে রয়েছে। তাকে নিয়ে বলার কিছু নেই। যা ইচ্ছা তাই বলুক। তাতে বঙ্গবন্ধুর কিছু যায় আসে না। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কথা বলার শিক্ষাগত যোগ্যতা তারেক রহমানের নেই। গাফ্্ফার চৌধুরী আরও বলেন, এক সময় হাওয়া ভবন ছিল। হাওয়া ভবন থেকে শুরু করে, দশ ট্রাক অস্ত্র, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো অপকর্মে জড়িত ছিল। এখন হাওয়া ভবন নেই, মায়ের সঙ্গে দেখা হয় না, অর্থ সম্পদও শেষ হয়ে আসছে। বিলেতে গিয়ে এখন উন্মাদ হয়ে গেছে। উন্মাদ অবস্থায় তার শেষ পরিণতি হবে। তিনি বলেন, ৭ মার্চ নিজস্ব মেধার গুণে আন্তর্জাতিক চেহারা পেয়েছে। এ বক্তৃতার প্রভাব অনেক বেশি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের বক্তব্য নিয়ে আজ বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। আমি সেদিন উপস্থিত ছিলাম। বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তৃতায় কোথাও পাকিস্তান শব্দটি ব্যবহার করেননি। একে খন্দকারকেও বিভ্রান্ত করা হয়েছে। আর এটা জামায়াত বিএনপির লোকেরা করেনি। করেছে আওয়ামী লীগের লোকেরাই। তবে নাম বলতে চাই না, শত্রু বাড়াতে চাই না। তারা নানা সুবিধা পাওয়ার জন্য এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের অনেক লোক আছে যারা গলাবাজি করেন। বক্তৃতা দিয়ে গলা ফাটিয়ে ফেলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের কোন জবাব দেন না। মূলত ক্ষমতায় থেকে সুবিধা নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ করেন। গাফ্্ফার চৌধুরী বলেন, সাবেক বিচারপতি হাবিবুর রহমানকে এমনিভাবে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। তিনিও তার লেখায় বঙ্গবন্ধু জয় পাকিস্তান বলেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এ তথ্যটি আপনি কোথায় পেলেন। জবাবে হাবিবুর রহমান বলেছিলেন তিনি অন্যের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের লোকের দ্বারাই একে খন্দকার বিভ্রান্ত হয়েছে। এ বিভ্রান্তির পেছনে কিছু আওয়ামী লীগের লোক জড়িত। তিনি বলেন, ’৭১ সালের ৪ জানুয়ারি জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের শপথ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু জয় বাংলার পাশাপাশি জয় পাকিস্তান বলেছিলেন। কারণ সেটা ছিল একটি শপথ অনুষ্ঠান। এ কারণেই তিনি এ কথা বলেছিলেন। এছাড়া তিনি জয় সিন্ধসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের নাম উচ্চারণের ক্ষেত্রেও জয় কথাটি ব্যবহার করতেন। কিন্তু ৭ মার্চের ভাষণে তিনি কখনও জয় পাকিস্তান শব্দটি একবারের জন্যও উচ্চারণ করেননি। এসব ক্ষেত্রে তিনি পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশ ব্যবহার করতেন। গাফ্্ফার চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু এদেশকে দু’বার স্বাধীন করেছিলেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি দেশে ফিরে না আসলে ভারতীয় সৈন্যরা কত বছর এদেশে থেকে যেত তার কোন ঠিক ছিল না। তখন জিয়াদের মতো মেজরদের এদেশ ছেড়ে চলে যেতে হতো। যুদ্ধের সময় জিয়া আগরতলায় ছিলেন। দেশে এসে যুদ্ধ করার কোন সাহস তার ছিল না। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা এক জিনিস নয়। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি একই সঙ্গে এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম উল্লেখ করেছেন। স্বাধীনতা বলতে তিনি পাকিস্তানের দাসত্ব থেকে মুক্তির স্বাধীনতার কথা বলেছেন। আর মুক্তির সংগ্রাম বলতে দারিদ্র্য ও বৈষম্য থেকে মুক্তির কথা উল্লেখ করেছেন। কারণ দেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি না আসা পর্যন্ত স্বাধীনতা পূর্ণ হবে না। এটা তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। গাফ্্ফার চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর কেউ জয়বাংলা পর্যন্ত মুখে আনত না। তারাই আজ বেশি বেশি জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু সেøাগান দেয়। ক্রমেই বঙ্গবন্ধু এখন জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে মহাত্মাগান্ধী এবং নেলসন ম্যান্ডেলার পর্যায়ে উন্নীত হচ্ছেন। দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি বাকশাল গঠন করেছিলেন। তিনি বলেন, আজ বামপন্থীদের ভেতরেও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ভুল ভেঙ্গেছে। তারাও আজ ঐক্যের পথে এসেছেন। গাফ্্ফার চৌধুরী ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলেন, ওই ভাষণের যে আন্তর্জাতিকতা আছে তা বিশ্বের সমস্ত নিগৃহিত জাতির সেøাগান। আফ্রিকার কোন কোন দেশ তাঁর এ ভাষণ অনুবাদ করে জনগণের মুক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে। এ কারণেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের এক হাজার শ্রেষ্ঠ ভাষণের মধ্যে স্থান পেয়েছে। মঙ্গলবার পাকিস্তানের একটি স্কুলে তালেবান হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা পাকিস্তানের পাপের ফসল। আজও তারা বাংলাদেশের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চায়নি। তারা যে জুলুম করেছে এই জন্যই তাদের এ রকম শাস্তি পেতে হয়েছে। এখন নিজেরাই নিজেদের হানাদার হয়ে ধ্বংস করছে। ধর্মের নামে তারা মসজিদে বোমা মেরে ধ্বংস করেছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মোনায়েম সরকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাঃ সারওয়ার। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য ভিত্তিক অগ্রণী রিসার্চের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুদ্দিন আহমদ এবং সিনিয়র রিসার্চ এ্যাডভাইজর ড. কপিল আহমেদ।
×