ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হচ্ছে না ॥ অসমাপ্ত প্রকল্পের বোঝা

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪

নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হচ্ছে না ॥ অসমাপ্ত প্রকল্পের বোঝা

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ দিন যায়, প্রকল্প সংশোধন হয়, সময় বাড়ে, সেই সঙ্গে বাড়ে ব্যয়ও কিন্তু শেষ হয় না প্রকল্প বাস্তবায়ন। তাই বাড়ছে অসমাপ্ত প্রকল্পের বোঝা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প শেষ করতে পারছে না মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। ফলে প্রতিবছর অতিরিক্ত অর্র্থ অপচয় হচ্ছে সরকারের। তাছাড়া পুরনো প্রকল্পের ঘানি টানতে গিয়ে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যেসব প্রকল্প শেষ হচ্ছে না সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। এটা একদিনে হয়ত হবে না। ধীরে ধীরে করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমার কাছে অনেকেই আসেন ৪৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের এক কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন নিতে। আমি কারণ জানতে চাইলে অধিকাংশ কর্মকর্তাই জানান, পিয়নের বেতন আর গাড়ি কিনতে হবে। আমি অনুমোদন না দিয়ে বলি আগে প্রকল্পের কাজ শুরু করুন তারপর গাড়ি কেনার কথা ভাববেন। তিনি জানান, প্রকল্প হতে হবে প্রকল্পের মতোই, সে বিষয়টিই এখন নিশ্চিত করা হবে। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৩০৮ মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্পের বোঝা কাঁধে নিয়েই যাত্রা শুরু করেছে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)। অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) এবং কারিগরি প্রকল্প প্রস্তাব (টিপিপি) অনুযায়ী এসব প্রকল্প ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা হয়নি। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ এসব প্রকল্প তারকা চিহ্ন দিয়ে নতুন এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করেছিল পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধি ছাড়া অর্থছাড় কিংবা ব্যয় করা যাবে না বলে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিল এডিপি সংশোধনের সময়ই। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বরাদ্দসহ মোট এক হাজার ১৮৭ প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৮৭৯, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৩৪, জাপানী ঋণ মওকুফ সহায়তা তহবিলের (জেডিসিএফ) ২১ এবং সংস্থা বা কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নের ১৫৩ প্রকল্প রয়েছে। সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের বাইরে এডিপিতে একেবারেই নতুন প্রকল্প যুক্ত হয় মাত্র ২৯। বাকি সবই ছিল পুরনো প্রকল্প। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, এটি প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করছে। অনেক ক্ষেত্রে অসমাপ্ত প্রকল্প নতুন এডিপির ঘাড়ে বোঝা হিসেবে দেখা দেয়। তাছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ না হওয়ার বিষয়টিও তো এক ধরনের ব্যত্যয়। কারণ কেন প্রকল্পগুলো লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শেষ হলো না। এগুলোর অনেক প্রকল্প শেষ না হওয়ার যৌক্তিক কারণও থাকে। আবার অযৌক্তিক কারণও রয়েছে। অর্থবছরের শুরুতেই প্রকৃত কারণগুলো খুঁজে বের করে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বিশেষ করে বড় দশ মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করা দরকার। কেন শেষ হয় না, তাদের সীমাবদ্ধতা কতটুকু ইত্যাদি বিষয় আলোচনা হলে এক ধরনের জবাবদিহিতা তৈরি হবে। তখন দেখা যাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আসবে। সূত্র জানায়, গত অর্থবছরের (২০১৩-১৪) এডিপিতে মোট প্রকল্প ছিল এক হাজার ১৭৬। এর মধ্যে বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প এক হাজার ৪৬। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৮৮৭, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১২৯টি, জেডিসিএফ প্রকল্প ৩০ এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়নের ১৩০ প্রকল্প। তবে বরাদ্দসহ প্রকল্পের মধ্যে নতুন অনুমোদিত প্রকল্প ছিল মাত্র ৫০। এ অর্থবছরের এডিপিতে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল ৩০৫ প্রকল্প। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ লক্ষ্য থেকে সরে আসে সরকার। আর এডিপিতে কাটছাঁট করে সমাপ্য প্রকল্পের সংখ্যা ধরা হয় ২০৬। ফলে বাকি ৯৯ প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন হয়নি। এসব প্রকল্পে যে অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে তার সত্যিকার সুফল ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরী। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, যদি মৌলিক উদ্দেশ্য ব্যাহত করে এমন কাজ বাদ রেখেই প্রকল্প শেষ করা হয় তাহলে যে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে তার যৌক্তিকতা থাকে না। কেননা সে প্রকল্প থেকে কাক্সিক্ষত সুফল আসবে না। আর যদি এমন হয় সামান্য বা অপ্রয়োজনীয় কাজ বাদ দিয়ে সমাপ্ত করা হয়েছে তাহলে সেখানেও প্রশ্ন রয়ে যায় যে, প্রকল্প গ্রহণের সময় কেন বিষয়টি ভেবে দেখা হয়নি। তাহলে প্রকল্প প্রণয়নের দুর্বলতা রয়েছে। অন্যদিকে ২০১০-১১ অর্থবছরে মূল এডিপিতে সমাপ্তির জন্য প্রকল্প ধরা হয়েছিল ২৮৭। পরবর্তীতে সংশোধিত এডিপিতে সেই সংখ্যা কমিয়ে ধরা হয় ২৫০। ফলে ওই অর্থবছরে বাস্তবায়ন পিছিয়ে যায় ৩৭ প্রকল্প। তার আগের অর্থবছর (২০০৯-১০) মূল এডিপিতে ৩৪৬ প্রকল্প সমাপ্তির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সংশোধিত এডিপিতে কমিয়ে ধরা হয়েছিল ২৩৭ প্রকল্প। ফলে ওই অর্থবছরে বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার লক্ষ্য থেকে বাদ পড়েছিল ১০৯ প্রকল্প। তাছাড়া ২০১০-১১ অর্থবছরে গড় ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও পুরো কাজ শেষ না করেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প। এ রকম ২০২ প্রকল্প খুঁজে পেয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। যেগুলোর কিছু কাজ বাকি থাকলেও সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাস্তবায়নকারী সংস্থা তথা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কর্তৃক প্রকল্প সমাপ্তির যে প্রক্ষেপণ করা হয় অর্থবছর শেষে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্জন হয় না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্পে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পাওয়া। সংস্থাটির প্রকাশিত ২০১০-১১ অর্থবছরের সমাপ্ত ঘোষিত প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ওই অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) মোট ৯১৬ প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ২৬৮ প্রকল্প ২০১১ সালের জুনের মধ্যে সমাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা মোট প্রকল্পের ২৯ শতাংশ। সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ২৬৮ প্রকল্পের মধ্যে ২১৭ প্রকল্প সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। বাকি ৫১ প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণা না করে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। অপরদিকে ওই বছরের মধ্যে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল না কিন্তু বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে ৪০ প্রকল্প। এতে মোট সমাপ্ত প্রকল্পের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫৭। কিন্তু বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ তদন্ত করে জানতে পেরেছে যে, শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৫৫ প্রকল্পের আর অবশিষ্ট ২০২ প্রকল্পের কিছু কাজ বাকি থাকলেও পুরো কাজ শেষ না করেই সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। গত ২০০৯-১০ অর্থবছরের সমাপ্ত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নকাল ও অর্থ ব্যয়ের চিত্র হচ্ছে, যেসব প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে এগুলোর মধ্যে নির্ধারিত সময় ও ব্যয়ে সমাপ্ত প্রকল্পের সংখ্যা ৭৬। যা মোট সমাপ্ত প্রকল্প সংখ্যার মাত্র ৩০ শতাংশ। শুধু প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে এমন প্রকল্পের সংখ্যা ১৬, যা মোট সমাপ্ত প্রকল্প সংখ্যার ৬ শতাংশ। আবার শুধু বাস্তবায়ন কাল বেড়েছে ১০০ প্রকল্পের, যা মোট সমাপ্ত প্রকল্প সংখ্যার ৩৯ শতাংশ। ব্যয় ও বাস্তবায়নকাল উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে এমন প্রকল্পের সংখ্যা ৬৫, যা মোট সমাপ্ত প্রকল্পের ২৫ শতাংশ। শেষ হয়ে যাওয়া প্রকল্পগুলোর মূল গড় প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ১১৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে গড় প্রকৃত ব্যয় হয়েছে ১৪৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রত্যেক প্রকল্পের গড় প্রকৃত ব্যয় বেড়েছে গড় পরিকল্পিত ব্যয় থেকে ৩৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ফলে সময়মতো প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হয়েছে। যেসব কারণে আটকে থাকে প্রকল্পের বাস্তবায়ন ॥ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়নে ১১ সমস্যা চিহ্নিত করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সমস্যাগুলো হচ্ছে- ভূমি অধিগ্রহণ, ওয়ার্ক প্ল্যান প্রণয়ন, নির্মাণ ক্ষেত্রে রেট সিডিউলের বার বার পরিবর্তন, স্থাপনা সম্পর্কিত সমস্যা, পরামর্শক/ফার্ম নিয়োগ, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ, জনবল নিয়োগ, প্রকল্পের ডিপিপির/টিপিপি সঠিক প্রণয়ন, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং, চাহিদার তুলনায় এডিপিতে কাক্সিক্ষত বা অপর্যাপ্ত বরাদ্দ এবং বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে অর্থ প্রাপ্তি সমস্যা। সঙ্কট কাটাতে ১১ সুপারিশ ॥ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সঠিক ও সময়মতো করতে ১১ বিষয়ে সুপারিশ দিয়েছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এগুলো হচ্ছে মানসম্মতভাবে প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য যথাসময়ে বাস্তবসম্মত ক্রয় পরিকল্পনা ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও অনুসরণ, প্রকল্পের বাস্তবায়নের গতি বাড়ানো ও যথাসময়ে অর্থ ব্যয় নিশ্চিত করতে দরপত্র আহ্বান এবং কন্ট্রাক্ট এ্যাওয়ার্ড ইত্যাদি কাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার, সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্পে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামোর আওতায় প্রাপ্ত বরাদ্দের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্প সংখ্যা যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা, ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সহজতর ও দ্রুততর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া, প্রয়োজনে ইতোপূর্বে যে সকল সংস্থা অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ করেছে নতুন প্রকল্পের জন্য ওই সব জমি সমন্বয় করা যেতে পারে, প্রকল্প প্রণয়নের পূর্বে ডিজাইন পর্যায়ে যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই ও সমীক্ষা করতে হবে, হালনাগাদ রেট সিডিউল অনুসরণ করে ব্যয় প্রাক্কলন করা, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিধান অনুযায়ী ৫০ কোটি টাকা অধিক ব্যয়সম্পন্ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করতে হবে এবং এক ব্যক্তিকে একাধিক প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে দেয়া যাবে না, মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পর্যায় মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে হবে, বিভাগ, জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে কর্মকর্তাদের পরিবীক্ষণ কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে, আইএমইডির মূল্যায়ন প্রতিবেদনের সুপারিশ প্রতিপালনের আদেশ জারি করা যেতে পারে, এছাড়া প্রকল্প পরিচালকের এ্যাকাউন্টে সম্পূর্ণ অর্থছাড় করে দেয়া যায়, যাতে অর্থের সর্বোচ্চ ব্যবহারপূর্বক দক্ষতার সঙ্গে প্রকল্পের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়। সমাধানের প্রক্রিয়া শুরু ॥ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দুটি বড় সঙ্কট কাটানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর একটি হচ্ছে ভূমি সঙ্কট, অপরটি প্রকল্প পরিচালকের বদলি সংক্রান্ত। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়নে ভূমি সঙ্কট পিছু ছাড়ছে না, বরং দিনে দিনে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন হোঁচট খাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা হচ্ছে। এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রকল্প অনুমোদনের আগেই জমি অধিগ্রহণ নিশ্চিত করার বিধান তৈরি করা হচ্ছে। অন্যদিকে তিন বছরের আগে বড় কোন অভিযোগ প্রমাণিত না হলে প্রকল্প পরিচালককে (পিডি) বদলি করা যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সে জন্যই গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে গঠন করা হয়েছে একটি কমিটিও। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় সেগুলোর বাস্তবায়ন পর্যায় সেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালকের বদলি। এছাড়া প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হঠাৎ করে বদলি হয়ে গেলে নতুন যিনি দায়িত্ব পান তার কাজ বুঝতেই কিছুটা সময় নষ্ট হয়। ফলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ কারণে সার্বিক উন্নয়ন বিলম্বিত হয়। এ প্রেক্ষিতে সরকার তিন বছরের আগে প্রকল্প পরিচালক ও প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রকল্প শেষ হওয়ার আগে বদলি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে গঠিত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালকে। সর্বশেষ অবস্থা ॥ অর্থবছরের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেছে। অথচ এখন পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) এক টাকাও ব্যয় করতে পারেনি সাত মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলো হচ্ছে সেতু বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশন। এ ছাড়া এখনও দশ শতাংশের নিচে এডিপি বাস্তবায়ন হার রয়েছে আট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের। এই পাঁচ মাসে মোট এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ২১ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২০ শতাংশ। দশ শতাংশের নিচে অবস্থানকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলো- অভ্যন্তরীণ সম্পদ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয়, বাস্তবায়ন পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
×