ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বগুড়ায় দুই প্রতিষ্ঠানে ‘শহীদ’ মুছে শহীদদের অমর্যাদা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪

বগুড়ায় দুই প্রতিষ্ঠানে ‘শহীদ’ মুছে শহীদদের অমর্যাদা

সমুদ্র হক ॥ হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে প্রথম দফায় প্রতিহত করতে গিয়ে যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হয়েছেন তাঁদের অমর্যাদা করা হয়েছে বগুড়ায়। শহরের এডওয়ার্ড পার্কের ভিতরে শহীদ টিটু মিলনায়তনের নাম ফলকে শুধু পৌর টিটু মিলনায়তন লিখা হয়েছে। উধাও করে দেয়া হয়েছে ‘শহীদ’ শব্দটি। শহরের জলেশ্বরিতলায় শহীদ আজাদ পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রবেশ দ্বারের নাম ফলকে শহীদের নাম উধাও করা হয়েছে। নতুন নামকরণ করা হয় বগুড়া প্রিক্যাডেট হাইস্কুল। কৃতজ্ঞ জাতি যে শহীদদের নাম ইতিহাসে ধরে রাখতে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেছে, সেখান থেকে নাম উধাও করে ধৃষ্টতা দেখানো হয়েছে। বগুড়ার প্রগতিশীল ধারার সকল মানুষ এর প্রতিবাদ করে কোন কূলকিনারা করতে পারেনি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কাল রাতে হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী রংপুর সেনানিবাস থেকে বগুড়ার দিকে রওনা দেয়। উত্তরে মহাস্থান পার হয়ে গোকুলের কাছে পৌঁছলে গ্রামের লোকজন রাস্তায় গাছ কেটে ব্যারিকেড দিয়ে প্রতিহত করে। এ সময় স্থানীর রিকশাচালক তোতা মিয়া বীরত্বের সঙ্গে শুধু কুড়াল নিয়ে হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কনভয়ের কাছে গেলে গুলি করা হয়। বগুড়ায় প্রথম শহীদ হয় তোতা মিয়া। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে পরদিন সকালে বগুড়া জিলা স্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী টিএম আইয়ুব টিটু শহরের বড়গোলায় একটি ভবনের ওপরে উঠে বন্দুকের গুলি ছুড়ে হানাদারদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এ সময় হানাদারদের গুলিতে সে প্রাণ হারায়। দেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বগুড়ার মানুষ এই দ্বিতীয় শহীদের নামে পৌর অডিটোরিয়ামের নামকরণ করে শহীদ টিটু মিলনায়তন। বছর কয়েক আগে বগুড়া পৌরসভার বিএনপি দলীয় মেয়র এ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমানের সামনেই মিলনায়তনের নাম ফলক থেকে শহীদ শব্দটি তুলে দিয়ে শুধু পৌর টিটু মিলনায়তন লিখে প্লাস্টিক বক্স সাইনবোর্ড ঝুলে দেয়া হয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ দুপুরে জলেশ্বরিতলা এলাকার আনোয়ারুল হক আজাদ প্রতিরোধ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন। তাঁর নামে জলেশ্বরিতলা পৌর প্রাথমিক স্কুলের নামকরণ করা হয় শহীদ আজাদ পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর পট পরিবর্তনের পালায় এই স্কুলের নামকরণ করা হয় বগুড়া প্রিক্যাডেট হাইস্কুল। বগুড়ার সুধীজন এই স্কুলের পূর্বের নাম বহাল রাখার অনেক আবেদন নিবেদন করেও ফল পাননি। এই বিষয়ে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সহ-সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বগুড়া থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান ময়না বলেন, শহীদের নামের অমর্যাদা ও অপমান করার ধৃষ্টতা মেনে নেয়া যায় না। পৌরসভার মেয়রের কাছে বার বার তাগাদা দেয়ার পরও তিনি বিষয়টি কানে তুলছেন না।
×