ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশেষজ্ঞদের মতে এই সেক্টরকে পুরোপুরি বাণিজ্যিক সেন্টার করা ঠিক নয়

মেডিক্যালে ভর্তির পাস নম্বর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪

মেডিক্যালে ভর্তির পাস নম্বর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী

নিখিল মানখিন ॥ ভর্তির ন্যূনতম পাস নম্বর ৪০ বহাল রেখে দেশের মেডিক্যাল শিক্ষার মানোন্নয়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মেডিক্যাল শিক্ষার সঙ্গে মানুষের জীবন-মরণের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মেডিক্যালের মতো প্রায়োগিক ও স্পর্শকাতর সেক্টরকে পুরোপুরি বাণিজ্যিক সেন্টার হিসেবে গড়ে তোলা ঠিক হবে না। টাকা দিয়ে ডিগ্রী অর্জন করলেই হবে না, রোগীকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়ার দক্ষতা থাকতে হবে। মুখস্থ করে, বানিয়ে লেখার সেক্টর ‘মেডিক্যাল শিক্ষা’ নয়। দক্ষ চিকিৎসক তৈরি না হলে দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেক্টরে বিপর্যয় নেমে আসবে। ভুল চিকিৎসায় বিপন্ন হবে রোগীদের চিকিৎসা। মানসম্মত মেডিক্যাল কলেজগুলোতে আসনের তুলনায় বেশি শিক্ষার্থীর আবেদন জমা পড়েছে। আর উচ্চ ফি এবং কলেজের মান সন্তোষজনক না হওয়ায় শিক্ষার্থী সঙ্কটে পড়েছে কিছু সংখ্যক মুনাফালোভী বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ। ওইসব কলেজই ভর্তির ন্যূনতম পাস নম্বর কমিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আসনের তুলনায় ভর্তির পাস নম্বরপ্রাপ্ত তিনগুণ শিক্ষার্থী থাকার পরও কিছু সংখ্যক বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের এমন দাবি অযৌক্তিক বলে মনে করছেন দেশের বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষকরা। এবার এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে সুষ্ঠু ও প্রশ্নাতীত নিরপেক্ষতায়। সব কটি পরীক্ষা কেন্দ্রের পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ। অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটেনি। ভর্তি পরীক্ষা ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোন অভিযোগ উঠেনি। পরীক্ষার অনেক আগে থেকেই কোচিং সেন্টার নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার স্বার্থে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে সন্তোষ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকরা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী নানা পদক্ষেপ গ্রহণে অপ্রীতিকর ঘটনা সৃষ্টি করার সাহস করেনি অসাধু চক্রের সদস্যরা। ভর্তি পরীক্ষায় অধিকতর স্বচ্ছতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ প্রশাসন ও র‌্যাব সদর দফতরের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে একটি অনুরোধ পত্র জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া এবার ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বর ২০ থেকে বাড়িয়ে ৪০ করা হয়। এ বছর থেকেই এ নিয়ম কার্যকর হয়। বিগত সময়ে ‘ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেই এমবিবিএস চিকিৎসক’ এমন অভিযোগ থেকে রেহাই পায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা। ভর্তির ন্যূনতম পাস নম্বরপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ॥ এবার ৬৬ হাজার ৯৮৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্য থেকে ভর্তির লড়াইয়ে জয়ী হয়েছে মোট ২২ হাজার ৭৫৯ জন মেধাবী ছাত্রছাত্রী। দেশে সব মিলিয়ে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে আসন সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৯। এর মধ্যে সরকারী কলেজে আসন সংখ্যা ৩ হাজার ৬৯৪। বাকি ছয় হাজার ৬০৫টি আসন বেসরকারী কলেজে। এর বিপরীতে যোগ্য প্রার্থী থাকছে মোট ১৯ হাজার ৬৫ জন ছাত্রছাত্রী। অর্থাৎ বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোতে আসনের তুলনায় তিনগুণ যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশনের দাবি ॥ একের পর এক দাবি তুলে সমালোচনার মুখে পড়ছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশন। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেই ভর্তির সুযোগ দিতে হবে- এ বছর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে এমন দাবি তুলেছিলেন এ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। এবার তাঁরা উত্থাপন করেছেন দুটি দাবি। তাঁদের দাবি অনুযায়ী, এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম পাস নম্বর ৪০ থেকে ২০ এ কমিয়ে আনতে হবে। আর এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি প্রক্রিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখতে হবে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ এ দাবি তুলেন। তারা বলেন, দেশের ৬৩টি বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে আসন সংখ্যা ৬ হাজার ৬০৫টি। পাস নম্বর না কমালে আসনগুলো শূন্য পড়ে থাকবে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের নিজস্ব উদ্যোগে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি প্রদানের দাবিও জানান তারা। ১৯ হাজারেরও বেশি পাস করা শিক্ষার্থী বাদ দিয়ে ফেল করা ছাত্র ভর্তিতে আগ্রহ কেন- এমন প্রশ্নে সংগঠনের নেতারা বলেন, তাঁদের সবার আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। ভর্তি ফি কমিয়ে কেন ভর্তির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না- এমন প্রশ্নে সংগঠনের নেতারা বলেন, সরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোয় সরকার প্রচুর টাকা ভর্তুকি দেয়। বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে কোন অনুদান দেয়া হয় না। ফি কমালে শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। দাবি প্রত্যাখ্যান করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ॥ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেই ডাক্তার হওয়া যায়! শিক্ষার্থীদের এমন সুযোগ করে দিতে তদবিরে নেমেছেন বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলোর মালিকরা। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেই শিক্ষার্থীদের এমবিবিএস বা বিডিএসে ভর্তি করানোর সুযোগ চান তাঁরা। এ লক্ষ্যে কয়েকটি বৈঠকও করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। প্রত্যেকবারই কলেজ মালিকদের দাবি এড়িয়ে গেছেন মন্ত্রী। মন্ত্রীর যুক্তি ছিল, ভর্তি পরীক্ষার ন্যূনতম মেধাস্কোর কমানো হলে মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মেধাশূন্য হয়ে পড়বে। আর দেশবাসী পাবে না দক্ষ চিকিৎসক। অদক্ষ চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসার নামে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যাবে না। তাই মেডিক্যাল শিক্ষার মান বজায় রাখতেই ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর ৪০ কমানো হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি ন্যূনতম পাস নম্বর ৪০ রাখার পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন। ন্যূনতম পাস নম্বর ৪০ থেকে ২০ এ নামিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছিল বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশন। মেডিক্যাল কলেজ মালিকপক্ষের নানা চাপ সত্ত্বেও যথাযথ শিক্ষার মান বজায় রাখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৪০ নম্বর বহালের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেয়। চিকিৎসক নেতা ও মেডিক্যাল শিক্ষকরা যা বলেন ॥ কিছু সংখ্যক বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের কারণে পুরো চিকিৎসা সেক্টর প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-এর সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, বিভিন্ন কারণে পর্যাপ্ত দক্ষ চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না। অনেক বেসরকারী কলেজে শিক্ষক, মেডিক্যাল উপকরণ ও রোগীর সঙ্কট রয়েছে। কিছু সংখ্যক মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতাল পর্যন্ত নেই। হাসপাতাল, রোগী ও পর্যাপ্ত মেডিক্যাল উপকরণ না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্র্যাকটিক্যাল দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ে। নতুন মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আর শিক্ষকদের যোগ্যতা ভালভাবে মনিটরিং করা হয় না। একজন শিক্ষককে শিক্ষাদান ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হয়। অনেক সময় শিক্ষাদানের তুলনায় চিকিৎসাদানে বেশি সময় দিতে হয় শিক্ষকদের। অনেক শিক্ষক একাধিক মেডিক্যাল কলেজে সম্পৃক্ত থাকেন। তিনি আরও বলেন, বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর মান বজায় রাখতে হবে। নিম্নমানের কলেজ থেকে বের হয়ে একজন দক্ষ চিকিৎসক এবং মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব নয়। এ ধরনের চিকিৎসকরা অনেক সময় জাতির জন্য হুমকি হয়ে ওঠেন। ভাড়াটে ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকে না। নতুন কলেজ অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান অধ্যাপক মাহমুদ হাসান। বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশনের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ ইকবাল আর্সলান জনকণ্ঠকে বলেন, বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা নিয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশন অবাস্তব ও মনগড়া দাবি তুলেছে। দেশের সকল বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে মোট আসন রয়েছে ৬ হাজার ৬০৫টি। এর বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন এমন যোগ্য প্রার্থী রয়েছে প্রায় ১৯ হাজার ৬৫ জন। আসনের তুলনায় তিনগুণ যোগ্য প্রার্থী থাকার পরও মেডিক্যাল ভর্তির ক্ষেত্রে পাস করা ন্যূনতম নম্বর ৪০ থেকে ২০ এ নামিয়ে আনার দাবি তোলার বিষয়টি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আর এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি প্রক্রিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখলে মেডিক্যাল শিক্ষা পুরোপুরি বাণিজ্যিক ও বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বে। তিনি আরও বলেন, মেডিক্যাল শিক্ষা ও চিকিৎসা কখনও বাণিজ্যিক হতে পারে না। এর সঙ্গে মানুষের জীবনের সম্পর্ক রয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় পাসের ন্যূনতম যোগ্যতাও যাদের নেই, তাঁদের মেডিক্যালের মতো প্রায়োগিক ও স্পর্শকাতর সেক্টরে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ভর্তি করানো ঠিক হবে না। টাকা দিয়ে ডিগ্রী অর্জন করলেই হবে না, রোগীকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়ার দক্ষতা থাকতে হবে। মুখস্থ করে, বানিয়ে দেখার সেক্টর ‘মেডিক্যাল’ নয়। দক্ষ চিকিৎসা তৈরি না হলে দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেক্টরে বিপর্যয় নেমে আসবে। ভুল চিকিৎসায় বিপন্ন হবে রোগীদের চিকিৎসা বলে জানান অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান। বাংলাদেশ চিকিৎসক সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএমএ’র বর্তমান কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ডাঃ মুস্তাক হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, ভর্তির ন্যূনতম পাস নম্বর ৪০ করার কারণে ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না- বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশনের এমন দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। নম্বর নয়, ভর্তি ও অন্যান্য ফি কমালেই ছাত্রছাত্রীর অভাব হবে না। জীবন বাঁচানোর কারিগর গড়ার জায়গাটাকে পুরোপুরি ব্যবসায়িক করে তোলা হচ্ছে। বেশি টাকার লোভ করতে গিয়েই নিজেদের সাজানো জালে নিজেরাই ধরা খেয়েছে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলো। নির্ধারিত যোগ্যতার ভিত্তিতেই মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগ বহাল রাখা দরকার। কলেজ কর্তৃপক্ষের অমানবিক আর্থিক আদায়ের কারণে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ভর্তি হতে পারছেন না ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অনেক শিক্ষার্থী। অথচ ওইসব শিক্ষার্থীদের কষ্ট চাপা দিয়ে গোপনে রেখে নম্বর কমানোর বিষয়টি সামনে এনে মেডিক্যাল শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ডাঃ মুস্তাক হোসেন। জাতীয় স্বাস্থ্য আন্দোলনের সভাপতি ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ রশিদ-ই মাহবুব জনকণ্ঠকে বলেন, একজন ভাল চিকিৎসক হতে হলে মেধাবী হতেই হবে। মানসম্মত মেডিক্যাল শিক্ষার অন্যতম একটি প্রধান শর্ত হলো ‘ন্যূনতম পাস নম্বর।’ তবে একটি মেডিক্যাল কলেজের সার্বিক মানই একজন দক্ষ চিকিৎসক গড়ে তোলার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। দেশের প্রথম শ্রেণীর মেডিক্যাল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীর অভাব হচ্ছে না। যেসব কলেজের মান কিছুটা পেছনে পড়ে রয়েছে, সেই সব কলেজেই শিক্ষার্থীর অভাব দেখা দিয়েছে। ন্যূনতম পাস নম্বরপ্রাপ্ত অনেক শিক্ষার্থী রয়ে গেছে। কিন্তু তাঁরা উচ্চ ভর্তি ফি দিয়ে ওই সব কলেজে ভর্তি হতে চায় না। আবার সরকারও ওই সব তুলনামূলক কম মানের কলেজগুলোর ওপর শক্তিশালী মনিটরিং বসিয়ে প্রথম শ্রেণীর মেডিক্যাল কলেজ বানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে না। এর সমাধান না হলে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির চলমান সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না বলে মনে করেন ডাঃ রশিদ-ই মাহবুব। বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল প্র্যাক্টিশনার্স এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডাঃ মোঃ জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, হঠাৎ করে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেয়ায় হোঁচট খাবে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলো। এমন সিদ্ধান্ত মোকাবেলার জন্য তাঁদের প্রস্তুতি ছিল না। তবে মেডিক্যাল শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারী সিদ্ধান্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন ডাঃ মোঃ জামাল উদ্দিন চৌধুরী। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)-এর সভাপতি অধ্যাপক এএসএম আহমেদ আমীন সাংবাদিকদের জানান, মেধাবী শিক্ষার্থীদের সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। মেধা মূল্যায়িত হবে এমন ন্যূনতম নম্বর নির্ধারিত করা দরকার। অনেক কলেজে পুরনো দিনের পাঠ্যপুস্তক দিয়ে আগামী দিনের ডাক্তারদের পড়ানো হয়। কিন্তু মেডিক্যাল প্রযুক্তি প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হচ্ছে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের যোগ্যতা নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন অধ্যাপক এএসএম আহমেদ আমীন।
×