ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কসাই সিরাজ, আকরাম ও লতিফের বিরুদ্ধে সাক্ষী নিমাইয়ের জেরা সম্পন্ন

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪

কসাই সিরাজ, আকরাম ও লতিফের বিরুদ্ধে সাক্ষী নিমাইয়ের জেরা সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত বাগেরহাটের তিন রাজাকার কসাই সিরাজ, খান আকরাম হোসেন ও আব্দুল লতিফ তালুকদারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সপ্তম সাক্ষী নিমাই চন্দ্র দাশের জেরা সম্পন্ন করেছে আসামিপক্ষ। বুধবার অষ্টম সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চলতি বছরের ২৫ আগস্ট বাগেরহাটের তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন এবং শতাধিক বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগের মতো আটটি অভিযোগ এনে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরবর্তীতে তদন্ত সংস্থা চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রশিকিউশনে দাখিল করেন। প্রসিকিউশন পক্ষ যাচাই-বাছাই করে ট্রাইব্যুনালে সাতটি অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, সদর থানাধীন রণজিতপুর গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়ি-ঘরের সমস্ত মালামাল লুটপাট, অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করা এবং ৪০-৫০ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা। ভারতে শরণাথী শিবিরে গমন করার উদ্দেশ্যে ডাকরার কালীমন্দিরে জমায়েত হওয়া ২-৩ হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ৬০০-৭০০ জনকে হত্যা করা। বেসরগাতী, কান্দাপাড়া এলাকায় অপারেশন চালিয়ে ১৯ জন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের লোককে আটক, নির্যাতন, অপহরণ ও হত্যা করা। চুলকাঠিতে হামলা চালিয়ে ৫০টি বাড়ি লুট, অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংস করা হয়। এবং ৭ জন নিরীহ লোককে সে হত্যা করে। কচুয়া থানাধীন শাখারীকাঠি হাটে হামলা চালিয়ে ৪২ জন স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র লোককে আটক নির্যাতন ও হত্যা করা। কচুয়া থানাধীন কচুয়া সদরে বিভিন্ন গ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র ৫ জনকে আটক নির্যাতন, অপহরণ ও হত্যা করা। তেলিগাতিতে মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান শিকদারকে আটক, নির্যাতন ও হত্যা করা। এর মধ্যে সিরাজ মাস্টারের বিরুদ্ধে পাঁচটি এবং আব্দুল লতিফ ও খান আকরামের বিরুদ্ধে তিনটি করে অভিযোগ আনা হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর এ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১০ জুন এ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। কচুয়া থানা পুলিশ ১১ জুন পলাতক আসামি আঃ লতিফ তালুকদারকে গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে। ১৯ জুন অপর পলাতক আসামি আকরাম হোসেন খানকে রাজশাহী থেকে মোরেলগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করে। ২১ জুলাই রাত ১১টায় বাগেরহাট মডেল থানা পুলিশ সদর উপজেলার ডেমা গ্রামে মৃত মোসলেম পাইকের (তার চাচা শ্বশুর) পরিত্যক্ত খুঁপড়ি ঘর থেকে সিরাজ মাস্টারকে গ্রেফতার করে। ৩ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত আসামিদের বিরুদ্ধে মোট ৭ জন সাক্ষী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। তাঁরা হলেনÑ দিলীপ দাস, শৈলেন্দ্র নাথ দাস, শহীদজায়া কমলা রানী চক্রবর্তী, তপন কুমার দাস, শহীদপুত্র অরুণ দাস, শহীদপুত্র নন্দলাল দাস ও নিমাই চন্দ্র দাস। গত ৩ ডিসেম্বর তিন আসামির বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর ব্যরিস্টার সাইয়েদুল হক সুমন। ৫ নবেম্বর রাজাকার কমান্ডার ‘বাগেরহাটের কসাই’ বলে কুখ্যাত সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার এবং তার দুই সহযোগী আব্দুল লতিফ তালুকদার ও আকরাম হোসেন খানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মোট সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে প্রসিকিউশন পক্ষ শুনানি করেন। অন্যদিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ও ২০ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে শুনানি করেন আব্দুল লতিফ তালুকদার ও খান আকরাম হোসেনের পক্ষে তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মীর সরোয়ার হোসেন এবং শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টারের পক্ষে রাষ্ট্রকর্তৃক নিযুক্ত আইনজীবী এ্যাডভোকেট আবুল হাসান।
×