ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভর্তির ন্যূনতম পাস নম্বর কমছে না বেসরকারী মেডিক্যালে

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪

 ভর্তির ন্যূনতম পাস নম্বর কমছে না বেসরকারী মেডিক্যালে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তির ন্যূনতম পাস নম্বর না কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ একজন পরীক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪০ নম্বর পেলেই ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন। রবিবার বিকেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ এবং ইউনিটসমূহে ছাত্রছাত্রী ভর্তিসংক্রান্ত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ, বিএমএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণায়য়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ন্যূনতম পাস নম্বর ৪০ রাখার পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন। ন্যূনতম পাস নম্বর ৪০ থেকে ২০ এ নামিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছিল বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশন। মেডিক্যাল কলেজ মালিক পক্ষের নানা চাপ সত্ত্বে¡ও যথাযথ শিক্ষার মান বজায় রাখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৪০ নম্বর বহালের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেয় বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দীন মোঃ নূরুল হক জনকণ্ঠকে জানান, সভায় উপস্থিত সকলের মতামত শোনার পর ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ এবং ইউনিটসমূহে ছাত্রছাত্রী ভর্তির ন্যূনতম পাস নম্বর ৪০ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় । ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪০ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরাই কলেজে ভর্তি হতে পারবেন বলে জানান মহাপরিচালক। মেডিক্যাল ভর্তি নিয়ে একের পর এক দাবি তুলে আসছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশন। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেই ভর্তির সুযোগ দিতে হবে-এ বছর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে এমন দাবি তুলেছিলেন এ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। এবার তাঁরা উত্থাপন করেছেন দুটি দাবি। তাঁদের দাবি অনুযায়ী, এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম পাস নম্বর ৪০ থেকে ২০ এ কমিয়ে আনতে হবে। আর আর এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি প্রক্রিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখতে হবে। রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ এ দাবি তোলেন। সংগঠনের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রবিবার পর্যন্ত বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ১ হাজার ২১৭ জন ভর্তি হয়েছেন। দেশের ৬৩টি বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে আসনসংখ্যা ৬ হাজার ৬০৫টি। পাস নম্বর না কমালে আসনগুলো শূন্য পড়ে থাকবে। সভাপতি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের নিজস্ব উদ্যোগে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি প্রদান করতে হবে, যা পূর্বে চালু ছিল। ১৯ হাজারেরও বেশি পাস করা শিক্ষার্থী বাদ দিয়ে ফেল করা ছাত্র ভর্তিতে আগ্রহ কেন-এমন প্রশ্নে সংগঠনের নেতারা বলেন, তাঁদের সবার আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। ভর্তি ফি কমিয়ে কেন ভর্তির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না-এমন প্রশ্নে সংগঠনের নেতারা বলেন, সরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোয় সরকার প্রচুর টাকা ভর্তুকি দেয়। বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে কোন অনুদান দেয়া হয় না। ফি কমালে শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। সংগঠনের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আরও বলেন, বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য ৪০ নম্বর বেঁধে দেয়া হলেও প্রায় ৮শ’ ছাত্র নম্বর না পেয়েও বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের অনাপত্তিপত্র নিয়ে বিদেশে পড়তে যাচ্ছে। এক দেশে দুই নীতি চলতে পারে না। সংগঠনের নেতারা দাবি করেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে এমবিবিএস ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় স্নাতকোত্তর বিভিন্ন কোর্সের ভর্তি পরীক্ষায়ও বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ ভাল করেছে। যদিও দাবির সপক্ষে তাঁরা কোন নথিপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি। বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশনের দাবিসমূহের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, দেশের সকল বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে মোট আসন রয়েছে ৬ হাজার ৬০৫টি। এর বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন এমন যোগ্য প্রার্থী রয়েছে প্রায় ১৯ হাজার ৬৫ জন। আসনের তুলনায় তিনগুণ যোগ্য প্রার্থী থাকার পরও মেডিক্যাল ভর্তির ক্ষেত্রে পাস করা ন্যূনতম নম্বর ৪০ থেকে ২০ এ নামিয়ে আনার দাবি তোলার বিষয়টি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আর এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি প্রক্রিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখলে মেডিক্যাল শিক্ষা পুরোপুরি বাণিজ্যিক ও বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বে। এতে মেডিক্যাল শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এমনিতেই দেশের বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর শিক্ষাকার্যক্রম ও মান নিয়ে সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এদিকে, বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশনের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ ইকবাল আর্সলান জনকণ্ঠকে জানান, বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা নিয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশন অবাস্তব ও মনগড়া দাবি তুলেছে। দেশের সকল বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে মোট আসন রয়েছে ৬ হাজার ৬০৫টি। এর বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন এমন যোগ্য প্রার্থী রয়েছে প্রায় ১৯ হাজার ৬৫ জন। আসনের তুলনায় তিনগুণ যোগ্য প্রার্থী থাকার পরও মেডিক্যাল ভর্তির ক্ষেত্রে পাস করা ন্যূনতম নম্বর ৪০ থেকে ২০ এ নামিয়ে আনার দাবি তোলার বিষয়টি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আর এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি প্রক্রিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখলে মেডিক্যাল শিক্ষা পুরোপুরি বাণিজ্যিক ও বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বে। তিনি আরও বলেন, মেডিক্যাল শিক্ষা ও চিকিৎসা কখনও বাণিজ্যিক হতে পারে না। এর সঙ্গে মানুষের জীবনের সম্পর্ক রয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় পাসের ন্যূনতম যোগ্যতাও যাঁদের নেই, তাঁদের মেডিক্যালের মতো প্রায়োগিক ও স্পর্শকাতর সেক্টরে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ভর্তি করানো ঠিক হবে না। দক্ষ চিকিৎসা তৈরি না হলে দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেক্টরে বিপর্যয় নেমে আসবে। ভুল চিকিৎসায় বিপন্ন হবে রোগীদের চিকিৎসা বলে জানান অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এবার ৬৬ হাজার ৯৮৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্য থেকে ভর্তির লড়াইয়ে জয়ী হয়েছে মোট ২২ হাজার ৭৫৯ জন মেধাবী ছাত্রছাত্রী। মেধার লড়াইয়ে পাস করেও আসনের অভাবে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে না কোন সরকারী বা বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে। কারণ সর্বশেষ হিসাব অনুসারে দেশে সব মিলিয়ে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে আসনসংখ্যা মাত্র ১০ হাজার ২৯৯। এর মধ্যে সরকারী কলেজে আসনসংখ্যা ৩ হাজার ৬৯৪। বাকি ছয় হাজার ৬০৫টি আসন বেসরকারী কলেজে। এর বিপরীতে যোগ্য প্রার্থী থাকছে মোট ১৯ হাজার ৬৫ ছাত্রছাত্রী।
×