ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কুড়িগ্রামে মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে ডোনেশনের টাকা ভাগাভাগি

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪

কুড়িগ্রামে মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে ডোনেশনের টাকা ভাগাভাগি

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার রাজমাল্লীহাট সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসা। ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও অধ্যক্ষের পাতানো শিক্ষক নিয়োগে পছন্দের প্রার্থীদের কাছ থেকে ডোনেশনের ২১ লাখ টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে কমিটি ও এলাকাবাসী। এসব দ্বন্দ্বের কারণে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে পড়েছে। রাজমাল্লীহাট সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসার শূন্যপদে একজন উপাধ্যক্ষ ও দুইজন সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, পছন্দদের প্রার্থীদের কাছ থেকে ৭ লাখ করে মোট ২১ লাখ টাকা ডোনেশন গ্রহণ করে। এলাকাবাসী ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের আপত্তি সত্ত্বেও গত ৩০ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পছন্দের তিন প্রার্থীকে নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্ত করাও হয়। পছন্দের প্রার্থীদের কাছ থেকে উন্নয়নের নামে ২১ লাখ টাকা গ্রহণ করে তা ভাগবাটোয়ারা করে নেয় কমিটির কতিপয় সদস্য। এলাকাবাসীর অভিযোগ ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটিতে লোকবল কাঠামো অনুযায়ী দাখিল, আলিম ও ফাজিল শ্রেণীতে ২২ শিক্ষকের বিপরীতে বিভিন্ন শ্রেণীতে ৫০-৬০ জন ছাত্র/ছাত্রী উপস্থিত থাকেন। কিন্তু খাতা কলমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেখানো হচ্ছে ২৫০ জন। অন্যদিকে বর্তমান গবর্নিং বডির দুই অভিভাবক সদস্য আব্দুল মান্নান ও আব্দুল্লাহিল বাকী তাদের ছেলে-মেয়ে মাদরাসায় পড়াশোনা না করা সত্ত্বেও অধ্যক্ষ এটিএম রফিকুল ইসলাম জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের অভিভাবক সদস্য হিসেবে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেন। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবস্থাপনা কমিটির অধিকাংশ সদস্য ও এলাকাবাসী এই অনিয়মের প্রতিবাদে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করেছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আব্দুল হাকিম জানান, নিয়ম মাফিক ও সরকারী বিধি অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তবে, ২১ লাখ টাকা ডোনেশনের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। সহ-সভাপতি আলহাজ আব্দুল জব্বার জানান, এ বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সব কিছু জানেন। যদি কোন অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে তার দায়দায়িত্ব অধ্যক্ষ এটিএম রফিকুল ইসলামের। রাজমাল্লীহাট সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এটিএম রফিকুল ইসলাম জানান, সরকারী বিধি অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ডোনেশনের ২১ লাখ টাকা দিয়ে মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজ করা হবে। ডোনেশনের টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাদ্রাসার তহবিলে উক্ত টাকা জমা রাখা আছে। তবে মাদ্রাসা কমিটির একাধিক সূত্র জানায়, এই পরিমাণ অর্থ মাদ্রাসা তহবিলে জমা নেই। ব্যবস্থাপনা কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য মোঃ আবু তাহের সরকার জানান, বর্তমান অধ্যক্ষের অদক্ষতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণœ হতে চলেছে। বর্তমান এটি কমিটির সভাপতি ও অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এসব অনিয়মের কারণে শিক্ষার পরিবেশ না থাকায় দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। জেলা শিক্ষা অফিসার ভগ শংকর বর্মা জানান, রাজমাল্লীহাট মাদ্রাসার অনিয়ম সম্পর্কে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×