ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি হাইকমান্ড হতাশ

খালেদার আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিচ্ছে না নেতাকর্মীরা

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪

খালেদার আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিচ্ছে না নেতাকর্মীরা

শরীফুল ইসলাম ॥ বিএনপির সিনিয়র নেতারা এখন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কথা বলে গলা ফাটালেও তাতে কর্ণপাত করছে না দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা। এমনকি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আন্দোলনের ডাকেও সাড়া দিচ্ছে না তারা। এ নিয়ে দলীয় হাইকমান্ডে চরম হতাশা বিরাজ করছে। উল্লেখ্য, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি নেতারা এ সরকারের পতন ঘটাতে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলনের কথা বলে আসছে। এক পর্যায়ে আন্দোলনের পক্ষে জনমত তৈরি করতে জেলায় জেলায় জনসভা করতে শুরু করেন খালেদা জিয়া। রাজধানীর বাইরে এ পর্যন্ত দশটি জনসভার প্রতিটিতেই তিনি সময়মতো আন্দোলনের ডাক দেয়ার কথা বলে উপস্থিত নেতাকর্মীদের সম্মতি আছে কিনা জানতে চান। প্রতিটি জনসভায়ই নেতাকর্মীরা ডাক দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু পরবর্তীতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে যখন খোঁজখবর নেন তখন দেখা যায় কেউই আর ডাকে সাড়া দিচ্ছে না। সর্বশেষ ১৩ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরের জনসভায়ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদের আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সময়মতো আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। এবার আন্দোলন শুরু করলে সরকারের পতন না ঘটিয়ে রাজপথ ছাড়ব না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য এ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যতদিন প্রয়োজন হয় রাস্তায় থাকব। পুলিশ গুলি চালালে তা রাজপথেই মোকাবেলা করব। মৃত্যু একদিন হবেই। তাই আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না, দেখি পুলিশ কিভাবে গুলি করে। যখন ডাক দেয়া হবে আপনারা আমার সঙ্গে থাকবেন তো? জবাবে জনসভায় উপস্থিত নেতাকর্মীরা হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়ে সেøাগান দিয়ে খালেদা জিয়াকে খুশি করেন। জনসভা চলাকালে সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ভাই, নেত্রী একদিনের জন্য এখানে এসেছেন, তাকে খুশি করাই এখন আমাদের প্রধান কাজ। তিনি চলে গেলে পরে ভেবে দেখব আন্দোলনে নামব কি না। তবে হ্যাঁ আমাদের রাজপথে ঠেলে দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা টিভির সামনে বসে আন্দোলনের চিত্র দেখবেন আর আমরা র‌্যাব-পুলিশের মার খাব সে ধরনের সুযোগ আর দেয়া হবে না। এই নেতার সঙ্গে থাকা আরও ক’জন বিএনপি কর্মী একই কথা বললেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জনকণ্ঠকে বলেন, চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতারা যেভাবে আন্দোলন করার কথা বলছেন সে ধরনের আন্দোলন করার কোন প্রস্তুতি এখন নেই। আর খালেদা জিয়া যদি এ ধরনের আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের কথা ভেবেও থাকেন তাহলে ভাবতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সভা-সমাবেশে উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে অনেকেই আন্দোলনের পক্ষে মত দেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। কোন রাজনৈতিক দলকে একটি আন্দোলন সফল করতে হলে অনেক পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। বিএনপিতে সে ধরনের আন্দোলন করার মতো সাহসী নেতার এখন বড়ই অভাব। পদপদবি রক্ষার জন্য অনেকেই বড় বড় বুলি আওড়ান। কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগের আন্দোলনে সেসব নেতাকে রাজপথে দেখা যায়নি। আর এ কারণেই খালেদা জিয়াসহ দলের নেতাদের আন্দোলনের ডাকে এখন সাধারণ নেতাকর্মীরা সাড়া দিচ্ছে না। প্রসঙ্গত, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে এ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এ জন্য বিএনপির নেতৃত্বে সারাদেশে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক সংগ্রাম কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু নির্বাচনের একমাস আগে থেকেই কেন্দ্রীয় নেতারা একে একে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা হতাশ হন। তারপরও তৃণমূল নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় আন্দোলন চালিয়ে যান। কিন্তু নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর বিভিন্নভাবে চরম বেকায়দায় পড়ে বিএনপি। আবার নতুন উদ্যমে আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ নেতাকর্মীরা সাড়া না দেয়ায় সামনে এগিয়ে যেতে পারছে না বিএনপির হাইকমান্ড। বিএনপির ১১ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনও এখন প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। অছাত্র, আদুভাই, খুনী ও মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন করা হলেও পদবঞ্চিত নেতাদের হুমকিতে এ সংগঠন কাজ করতে পারছে না। সরকারবিরোধী আন্দোলন দূরে থাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশই করতে পারছে না ছাত্রদল। যুবদল, শ্রমিকদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহিলাদলসহ অন্য অঙ্গসহযোগী সংগঠনও নিজেদের কোন্দলে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ কারণে এসব সংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনের নাম শুনলেই দ্রুত নিরাপদ স্থানে চলে যায়। বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের আন্দোলন কর্মসূচী চলাকালে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের দূরত্ব অনেক বেড়ে গেছে। তৃণমূল নেতারা এখন কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি চরম ক্ষুব্ধ। তারা মনে করছে, আন্দোলন চলাকালে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে গেছেন। আর তৃণমূল নেতারা মাঠের আন্দোলনে সক্রিয় থাকায় জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন। আন্দোলনে জড়িত অনেক নেতাকর্মী এখনও রাতে বাড়িতে ঘুমাতে পারেন না। তাই এখন আবার নতুন করে আন্দোলনের নামে সিনিয়র নেতারা যতই গলা ফাটাক না কেন বুঝেশুনেই তৃণমূল নেতারা পা বাড়াবে। আগে দেখবে কেন্দ্রীয় নেতারা কি আন্দোলন করতে পারেন তার পর তৃণমূল নেতারা তাদের সিদ্ধান্ত নেবে। তার আগে আন্দোলনের ব্যাপারে কারও আবেদনেই সাড়া দেবে না সাধারণ নেতাকর্মীরা।
×