ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লিয়ন-ঘূর্ণিতে ধরাশায়ী ভারত

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪

লিয়ন-ঘূর্ণিতে ধরাশায়ী ভারত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ হিউজেসের জন্য জিততে চেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের আগে অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক, টানা দুই ইনিংসে সেঞ্চুরির পর সেটি বলেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নারও। জয়ের জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করার প্রত্যয় ছিল অসিদের মনে। মাঠেও তারই স্বাক্ষর রাখলেন ক্লার্ক। জয় ছাড়া আর কিছু আসেনি বলেই পঞ্চম দিন সকালে আর ব্যাটিং করেনি তারা, দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করেছে আগের দিনের ২৯০/৫Ñতেই। ভারতকে ছুড়ে দিয়েছে ৩৬৪ রানের চ্যালেঞ্জ। সারাদিনে ৯০ ওভার সামনে রেখে সাড়ে তিন শ’র আশপাশে ছেড়ে দেয়াটা অসিদের বিশাল বুকের পাটারই পরিচায়ক! ফল হারলেও জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে ভারত। থেমেছে ৪৮ রান দূরে। ৮৭.১ ওভারে অলআউট হয়েছে ৩১৫ রানে। বুক চিতিয়ে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেয়া অধিনায়ক কোহলি বলেছেন, এক মুহূর্তের জন্যেও ড্রর কথা ভাবেননি তিনি। ব্যাটিংয়ের ধরন দেখেও সেটি মানতে হয়। তবে ওয়ার্নার-কোহলি নন, ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে পার্থক্য গড়ে দিয়ে নায়ক নাথান লিয়ন। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়ার পর কাল দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ৭ ভারতীয় ব্যাটসম্যানের প্রাণ বধ করেন অসি অফস্পিনার! নায়ক যেই হোন, প্রত্যয়ী অসিরা ঠিকই জয় উপহার দিলেন অকালপ্রয়াত হিউজসকে। দুই সপ্তাহ আগে শন এ্যাবোটের বাউন্সারে যিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নেন মাত্র ২৫ বছর বয়সে। এক সপ্তাহের কান্নাভেজা চোখ মুখে মাঠে নামেন ক্লার্করা। হিউজেসের-শোককে শক্তিতে পরিণত করে দারুণ জয় তুলে নিল অস্ট্রেলিয়া। চার টেস্টের সিরিজে এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে। ওয়ার্নারের ১৪৫, ক্লার্কের ১২৮ ও স্টিভেন স্মিথের অপরাজিত ১৬২ রানের ম্যারাথন তিন ইনিংসে ভর করে ৭ উইকেটে ৫১৭ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে বিরাট কোহলির ১১৫, চেতেশ্বর পুজারার ৭৩, অজিঙ্কা রাহানোর ৬২ ও মুরলি বিজয়ের ৫৩ রানে ভর করে ৪৪৪ রানে অলআউট হয় ভারত। ৭৩ রানে এগিয়ে থেকে ৫ উইকেটে ২৯০ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা, লিড ৩৬৩। ওয়ার্নার ১০২ ও স্মিথ করেন ৫২* রান। জবাবে শনিবার শেষদিনে অস্ট্রেলিয়ার ৩৬৪ রানের চ্যালেঞ্জ প্রায় হাতের নাগালে এনে ফেলেছিল সফরকারীরা। রান তাড়া করতে নেমে খুব দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পর বিরাট কোহলি আর মুরলি বিজয়ের অসামন্য এক জুটিতেই খেলাটা জমিয়ে তোলে ভারত। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দু’জন মিলে ৫০ ওভারেই বোর্ডে ১৮৫ রান যোগ করে অসিদের কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে দেন। কিন্তু সেই চাপ জয় করে এ্যাডিলেডে শেষ হাসি অস্ট্রেলিয়ার। বলা ভাল লায়নের, তার অফস্পিন-বিষেই নীল সফরকারী ভারতীয়রা। মাত্র ১ রানের জন্য নার্ভাস নাইনটিজের শিকার বিজয় ৯৯, শেষ মুহূর্তে ১৪১ রান করা অধিনায়ক কোহলির সাজঘরে ফেরা ক্লার্কদের জয়ের পথ তৈরি করে দেয়। ৮৭.১ ওভারে ৩১৫ রানে অলআউট ভারত। ভারতের প্রথম ও টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে অধিনায়কত্বের অভিষেকে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরির অনন্য নজির স্থাপন করেও দলকে হার থেকে বাঁচাতে পারেননি তিনি। এরপরও দিনের শেষ ১৫ ওভার ঠেকিয়ে দিয়ে ম্যাচ ড্র করা অসম্ভব ছিল না। বিশেষ করে যখন উইকেট ছিলেন বহুদিন পর ফেরা উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ঋদ্ধিমান সাহা ও অভিষিক্ত অলরাউন্ডার করন শর্মা। কিন্তু তারা যে ড্রর জন্য খেলেননি, সেটি তো পরিষ্কার করেছেন অধিনায়ক নিজেই। ম্যাচশেষে কোহলি বলেছেন, ‘আগের দিন রাতেই আমরা ঠিক করেছিলাম, ড্র নয় জয়ের জন্য খেলব নইলে প্রতিপক্ষ বোলাররা চেপে বসবে। ম্যাচ হারলেও ভাল লাগছে, যে সবাই জয়ের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আমি খুশি।’ তিনি ও বিজয় আর ৪০টি রান যোগ করতে পারলে ফল অন্যরকম হতো বলেও মন্তব্য করেন ক্রেজি কোহলি। নেতৃত্বে অভিষেকে ম্যাচে কোহলির ২৫৬ রান (১১৫+১৪১) টেস্ট ক্রিকেটের নতুন রেকর্ড, আগে যেটি ছিল নিউজিল্যান্ডের গ্রাহাম ডাউলিংয়েরÑ ২৪৪ রান (২৩৯+৫), ১৯৬৮ সালে, ক্রাইস্টচার্চে এই ভারতেরই বিপক্ষে! কেবল তাই নয়, ৫৩ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোন ভারতীয ব্যাটসম্যানের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি এটি। ব্রিসবেনে দ্বিতীয় টেস্ট বুধবার থেকে।
×