ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ড. শফিউল হত্যাকাণ্ড

তদন্তে গতি নেই, রাবি শিক্ষকদের কর্মবিরতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪

তদন্তে গতি নেই, রাবি শিক্ষকদের কর্মবিরতি

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ও রাবি সংবাদদাতা ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল ইসলাম হত্যাকা-ের ২৮ দিন পরেও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের তদন্তে ধীরগতির অভিযোগ এনে শনিবার ক্যাম্পাসে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দু’ঘণ্টা কর্মবিরতি কর্মসূচী পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এদিকে অধ্যাপক শফিউল হত্যার নেপথ্যে সন্দেহভাজন নাসরিন আখতার রেশমাকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। তবে পুলিশের ধারণা, তাকে গ্রেফতার করা গেলে এ হত্যাকা-ের রহস্য উন্মোচিত হবে, চিহ্নিত হবে খুনীরা। রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রণব কুমার পা-ে বলেন, ড. শফিউল ইসলাম একদল সন্ত্রাসীর হাতে নৃশংসভাবে খুন হওয়ার চার সপ্তাহ পরেও পুলিশ এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। হত্যাকারী সন্দেহে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, পুলিশ তাদের ব্যাপারেও মুখ খুলছে না। তিনি আরও বলেন, একজন শিক্ষকের হত্যা মামলার তদন্তে পুলিশের এই ধীরগতি কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তাই এর প্রতিবাদে আমরা ক্লাস বর্জন কর্মসূচী পালন করতে বাধ্য হয়েছি। এরপরেও যদি শফিউল হত্যাকা-ে বিচারের কোন অগ্রগতি না হয়, আগামীতে আরও কঠিন কর্মসূচী পালন করবে শিক্ষক সমিতি। এখনও ধরা পড়েনি রেশমা, উজ্জল ॥ রাবি শিক্ষক অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল ইসলাম হত্যাকা-ের প্রায় এক মাসেও প্রকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে পুলিশ যেমন সঠিক তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারেনি, তেমনি হত্যার দায় স্বীকার নিয়েও তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল। ড. শফিউল হত্যার নেপথ্যে সন্দেহভাজন অন্যতম নাসরিন আখতার রেশমাকেও খুঁজে পায়নি পুলিশ। পুলিশ, র‌্যাব বা গোয়েন্দা সংস্থার কেউ জানে না রেশমা এখন কোথায়? অথচ পুলিশের ধারণা, তাকে পাওয়া গেলে ড. শফিউল হত্যাকা-ের রহস্য উন্মোচিত হবে, চিহ্নিত হবে খুনীরা। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী উজ্জল কাটাখালী আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্বাস আলীর ভাই মানিককে ভাড়া করে। মানিক ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা মিলে অধ্যাপক শফিউলকে হত্যা করে- এমন তথ্য প্রায় নিশ্চিত। এরপর থেকেই উজ্জল ও রেশমা গা-ঢাকা দিয়েছে। তবে এ হত্যার সঙ্গে ডাশমারি এলাকার জামায়াত-শিবিরের অস্ত্রধারী ক্যাডার জামাইবাবুও জড়িত বলে গ্রেফতার হওয়া আসামিরা জানিয়েছে। এখন সেও পলাতক রয়েছে। অফিস সূত্রে জানা যায়, রেশমা হিসাব শাখায় সহায়ক কর্মচারী, সাধারণ কর্মচারী এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারীদের বেতন বিল তৈরি করতেন। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম। হিসাব শাখার পরিচালক আশরাফ-উল-হুদা বলেন, ড. শফিউল নিহত হওয়ার পর যেদিন থেকে রেশমার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সেদিন থেকেই তিনি অফিসে আসেন না। ড. শফিউলের সঙ্গে তার কোন ধরনের যোগাযোগ ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ড. শফিউল বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষকের সঙ্গে অফিসিয়ালি তার কোন যোগাযোগ থাকার কথা নয়। রেশমার দায়িত্বের সীমা শিক্ষকদের পর্যন্ত নয়। ফলে একজন শিক্ষকের সঙ্গে ঝামেলা হওয়ার সুযোগ থাকার কথা নয়। যদি রেশমার সঙ্গে অফিসিয়ালি কোন সম্পর্ক না থাকে তাহলে ড. শফিউলের সঙ্গে কেন দ্বন্দ্ব হবে? রেশমার সঙ্গে ড. শফিউলের কি পারিবারিক সম্পর্ক ছিল, জানতে চাইলে এ বিষয়ে রেশমার চাচা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার রাব্বেল হোসেন বলেন, সে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নিয়ন্ত্রণে আছে। আর ড. শফিউলের সঙ্গে আমাদের ও তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কোন পারিবারিক সম্পর্ক নেই। উল্লেখ্য, গত ১৫ নবেম্বর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় নিজ বাসার সামনে অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। বিকেল পাঁচটার দিকে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় রাবির রেজিস্ট্রার এন্তাজুল এম হক বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে নগরীর মতিহার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও ছুটিতে থাকায় তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর অনুপস্থিতিতে থানার চার্জ অফিসার আব্দুল মুমিন সরকার দাবি করেন, ড. শফিউল হত্যা মামলার তদন্ত ঠিক পথেই চলছে। মামলাটি চাঞ্চল্যকর হওয়ায় এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া সম্ভব হয়নি। বরং এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার স্বার্থে তদন্তে আরও সময়ের প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
×