ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইইউ ও সুইডেনের নতুন কৌশলপত্র

ভিশন ’২১ বাস্তবায়নে এবার দাতাগোষ্ঠী এগিয়ে এলো

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪

ভিশন ’২১ বাস্তবায়নে এবার দাতাগোষ্ঠী এগিয়ে এলো

তৌহিদুর রহমান ॥ বর্তমান সরকারের ‘ভিশন-২১’ কর্মসূচী সফল করার লক্ষ্যে এবার দাতাগোষ্ঠী এগিয়ে আসছে। রূপকল্প ’২১ অনুযায়ী তারাও বাংলাদেশে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। ভিশন-২১ কর্মসূচী সফলের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার থেকে যেসব খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে, বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী ও বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রগুলো সে সব খাতকে প্রাধান্য দিয়েই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। সরকারের ভিশন-২১ অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যেই সাত বছর মেয়াদী কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। সেখানে শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, কর্মসংস্থান ইত্যাদি বিষয়ে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ঢাকায় নবনিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াডোন বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের জন্য সাত বছর মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সরকারের জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে মিল রেখেই আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা অনুসারে উন্নয়নে সরকার ও ইইউ একযোগে কাজ করবে বলেও তিনি জানান। সূত্র জানায়, বাংলাদেশে আগামী সাত বছর মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২০১৪ থেকে ’২০ সাল পর্যন্ত বার্ষিক বহুমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সংস্থাটি। তারা বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি খাতে সহায়তায় অগ্রাধিকার দেবে। এ ছাড়া জীবিকা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রাকৃতিক সম্পদ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি, খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান, দক্ষতা উন্নয়ন ও কারিগরি প্রশিক্ষণ ইত্যাদিতে সহায়তা দেবে বলে তারা জানিয়েছেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা, যুবক ও প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষরতা ইত্যাদি কর্মসূচীতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহায়তা করবে। অর্থ সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের চারটি বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচন পদ্ধতির উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার বাস্তবায়ন। এদিকে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়নসহযোগী সুইডেনও সাত বছর মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে ২০১৪ থেকে ’২০ বছর পর্যন্ত সুইডিশ সরকারও একটি কৌশলপত্র তৈরি করেছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে প্রধানত চারটি খাতে সহযোগিতা দেবে সুইডেন। এসব খাতের মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য বিমোচন, গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবেলা ও স্বাস্থ্য উন্নয়ন। এসব খাত উন্নয়নে আগামী সাত বছরে বাংলাদেশে ২৩ কোটি মার্কিন ব্যয় করবে সুইডেন। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিদেশী দাতা গোষ্ঠী। বর্তমান সরকার যে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সেটাকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তাঁরা। বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকার যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তার মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে বলেও মনে করে বিদেশী দাতাগোষ্ঠী। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সরকারের নেয়া উন্নয়ন পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বলেছে, বিএনপি-জামায়াত জোটসহ মৌলবাদী গোষ্ঠীর সহিংসতার মধ্যেও সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা হচ্ছে। এই সহিংসতার মধ্য দিয়েও কোটি মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে পারায় সরকারের প্রশংসা করছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। ২০০৮ সালের শেষ দিকে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ভিশন-২১ তুলে ধরে বলা হয়, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশকে জনগণ যেভাবে দেখতে চায়- সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভিশন-২১ শিরোনামে ২৩ দফা কর্মসূচী প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে পঁাঁচটি বিষয়কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয় আওয়ামী লীগ। সেগুলো হলো- দারিদ্র্য বিমোচন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সার্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা ও বিদ্যুত ও জ্বালানি সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন, ‘আমরা ভিশন টোয়েন্টি টোয়েন্টি ওয়ান বাস্তবায়ন করবই। বাংলাদেশ হবে একটি মধ্য আয়ের দেশ।’ তবে বিদেশী দাতারাও মনে করেন, বর্তমান সরকারের অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে যে অর্জন করেছে, সেই অর্জন ধরে রাখতে পারলে ভিশন ’২১ অনুযায়ী বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে। এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজেনা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম অংশীদার এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র সকল ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ যে অচিরেই একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে তাই নয়, বাংলাদেশই হবে পরবর্তী এশিয়ান টাইগার এবং দেশটির জনগণই এটি সম্ভব করে তুলবে।
×