ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজ্জাক-নাসিরদের সুযোগ পাওয়ার লড়াই

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪

রাজ্জাক-নাসিরদের সুযোগ পাওয়ার লড়াই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বছরের পুরোটাই শুধু পরাজয়ের ব্যর্থতায় কেটেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের। হারের পর হার থেকে বেরিয়ে আসার জন্য অনেকভাবেই প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। অবশেষে সেই দুঃসহ সময় থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ সফরকারী জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সর্বশেষ সিরিজে। বিশ্বকাপের আগে শেষ সিরিজ। আর সেখানেই নিজেদের জন্য অনুপ্রেরণা পেয়ে গেল বাংলাদেশ দল। বেশ কয়েকজন তরুণের আগমন আর নেতৃত্বে পরিবর্তন এনে অবশেষে জয় নামের সোনার হরিণটার দেখা পাওয়া গেছে। এবার বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময়। সবকিছু ঠিক থাকলে মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বেই এবার ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ মঞ্চে লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ দল। সপ্তাহ খানেক আগেই ৩০ সদস্যের প্রাথমিক দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সর্বশেষ সিরিজে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে যারা ওয়ানডে খেলেছেন নিশ্চিতভাবেই বিশ্বকাপ দলে ঠাঁই পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন তাঁরা। তবে বেশ কয়েকজন উদীয়মান তারকা এবং অভিজ্ঞ ক্রিকেটার নানা কারণে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ খেলতে পারেননি। তাই চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে প্রাথমিক দলে থাকাদের নৈপুণ্যকে বিশেষভাবেই মূল্যায়ন করা হবে। জানুয়ারির প্রথম দিকেই বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করতে হবে। এ কারণে প্রাথমিক দলে থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যেও যেন এক অঘোষিত লড়াই চলছে প্রিমিয়ার লীগে। যদিও অনেক ক্রিকেটারই আর সে লড়াইয়ে থাকবেন না সুপার লীগ পর্ব শুরু হলে। কারণ বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের দল ব্যর্থ হবে সুপার লীগ খেলতে। প্রাথমিক স্কোয়াডে থাকাদের মধ্যে অধিনায়ক মাশরাফি, সহকারী অধিনায়ক এবং দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, জিম্বাবুইয়ে সিরিজে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখানো সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম, দারুণ ধারাবাহিক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, অভিষেক সিরিজেই হ্যাটট্রিকের চমক দেখানো তাইজুল ইসলামসহ অনেকেরই বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ঠাঁই পাওয়া একেবারেই নিশ্চিত হয়ে গেছে। তবে লড়াইটা বাকিদের মধ্যে। কয়েকটি ক্যাটাগোরিতে ভাগ করে এর বিশ্লেষণ করলে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ঠাঁই পাওয়ার লড়াইয়ে কারা এগিয়ে আছেন তা কিছুটা পরিষ্কার হয়ে উঠবে। অলরাউন্ডার, স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান, স্পেশালিস্ট স্পিনার ও স্পেশালিস্ট পেসার হিসেবে ৩০ সদস্যের প্রাথমিক দলে বেশ কয়েকজন করে ক্রিকেটারকে রেখেছেন জাতীয় নির্বাচকরা। অলরাউন্ডার ক্যাটাগোরিতে সাকিব-মাহমুদুল্লাহ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকছেন সেটা নিশ্চিত। এছাড়াও এ ক্যাটাগোরিতে আছেন সৌম্য, সাব্বির, নাসির, শুভাগত, নাঈম ও জিয়া। এর মধ্যে বিশেষ বিবেচনায় থাকবেন সৌম্য ও সাব্বির সর্বশেষ জিম্বাবুইয়ে সিরিজে খেলার কারণে। সাব্বির লেটঅর্ডারে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি স্পিনার হিসেবেও ভূমিকা রাখতে পারেন। আগ্রাসী মনোভাবের ব্যাটিংও করে দেখিয়েছেন তিনি। আর সৌম্যের জন্য ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে টপঅর্ডারে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি পেস বোলিংও করতে পারেন যা আছে জিয়ার মধ্যেও। শুভাগত, নাসির ও নাঈম প্রত্যেকেই মিডলঅর্ডারে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি স্পিন বোলিংও করে থাকেন। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে দ্রুতগতির উইকেট ও পেস সহায়ক পরিবেশ থাকায় সৌম্য, জিয়ারা অগ্রাধিকারই পাবেন। নাসির বাজে ফর্মের কারণে দলের বাইরে ছিটকে গেলেও এখন প্রিমিয়ার লীগে তাঁর নৈপুণ্য ও অভিজ্ঞতার কারণে নির্বাচকদের বিবেচনায় আসতে পারেন। চলতি লীগ সে কারণে হয়ে গেছে ক্রিকেটারদের জন্য বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ঠাঁই পাওয়ার লড়াই। এবার লীগে নাসির আবাহনীর হয়ে দুটি হাফসেঞ্চুরিসহ ৪৪.৬৬ গড়ে করেছেন ২৬৮ রান ও ১১ উইকেট শিকার করেছেন। সৌম্য জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে অভিষেক ম্যাচেই করেছেন ২০ রান এবং চলতি লীগে ৩৬.১১ গড়ে ১টি শতকসহ করেছেন ৩২৫ রান ও ৩ উইকেট নিয়েছেন। সাব্বির অভিষেক সিরিজেই চমক দেখিয়েছেন ঝড়ো একটি ইনিংস খেলে। আর চলতি লীগে ৪৫ গড়ে ৫ ম্যাচেই করেছেন ২২৫ রান, নিয়েছেন মাত্র ১ উইকেট। তাঁর দল কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমি সুপার লীগ প্রায় নিশ্চিত করে ফেলার কারণে সুযোগ থাকছে নিজেকে আরও প্রমাণ করার। নাসিরেরও সে কারণে সুযোগটা আছে। নাঈম বেশ ফর্মেই আছেন। তিনি ৫ ফিফটিসহ ৬৭.৩৩ গড়ে ৪০৪ রান করে সর্বাধিক রান করার তালিকায় দুইয়ে। এছাড়া বল হাতেও ১৩ উইকেট নিয়ে ৫৯ ওয়ানডে খেলা নাঈম নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে ফেলেছেন। বেশ ফর্মে থেকে ৩৬ গড়ে ২১৬ রান ও ১১ উইকেট নিয়েছেন আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করা শুভাগতও। ১৩ ওয়ানডে খেলা জিয়া ১১ উইকেট নিলেও ব্যাট হাতে একেবারেই নিষ্প্রভ থেকে করেছেন মাত্র ৭৯ রান। তাই তাঁর জন্য সৌম, সাব্বির, নাসিরদের সঙ্গে লড়াইয়ে থাকাটা কঠিনই হবে। পেসারদের মধ্যে মাশরাফির সঙ্গী হিসেবে তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলাম, আলআমিন হোসেনদের অন্যতম ভাবা হলেও আবুল হাসান রাজু ও মোহাম্মদ শহীদ লড়াইয়ে আছেন। এর মধ্যে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে তাসকিন ও শহীদ ছাড়া বাকিরা খেলেছেন। তবে চলতি লীগে ইনজুরি থেকে ফেরা তাসকিন ৫ ম্যাচে ৯টি, শহীদ ৯ ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়ে ভালভাবেই লড়াইয়ে আছেন। আর রাজু জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে দুই ওয়ানডেতে প্রভাব ফেলতে পারেননি এবং ৭ ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে কিছুটা পিছিয়েই আছেন। অভিষেক ম্যাচেই ভারতের বিরুদ্ধে ৫ উইকেট শিকার করা তাসকিন অবশ্য কিছুটা এগিয়েই থাকবেন। স্পিনারদের মধ্যে তাইজুলের সঙ্গী হওয়ার ক্ষেত্রে ইলিয়াস, আরাফাত, জুবায়ের ও অভিজ্ঞ রাজ্জাক আছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বাধিক উইকেটের মালিক রাজ্জাক ফিটনেস ও ইনজুরি সমস্যা কাটিয়ে চলতি লীগে এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচে ১৫, ইলিয়াস ১০ ম্যাচে ১৯, জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে তিন ওয়ানডেতে ১০ উইকেট নেয়া আরাফাত ৭ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়েছেন। আর একমাত্র লেগস্পিনার হওয়ায় এগিয়ে আছেন তরুণ জুবায়ের। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে দুই ওয়ানডেতে ৪ উইকেটও নিয়েছেন তিনি। ব্যাটিংয়ে শামসুর রহমান-ইমরুল কায়েস, মার্শাল আইয়ুব, মুমিনুল হক, এনামুল হক বিজয়, লিটন দাস ও মোহাম্মদ মিঠুনদের মধ্যে লড়াই হবে। ইমরুল ক্যারিবীয় সফর এবং জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ওয়ানডে খেলে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে চলতি লীগে ইমরুল ৩ ম্যাচে ১২০, মার্শাল ৯ ম্যাচে মাত্র ১৮৯ রান করলেও শামসুর ১০ ম্যাচে ৩৯২ রান করে অনেক এগিয়ে। আর এনামুল জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে দারুণ এক সিরিজ শেষ করেছেন। মিঠুন ও লিটন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তেমন সুযোগই পাননি। তবে চলতি লীগে ১০ ম্যাচে ৫৬.৮০ গড়ে ১ শতক ও ৫ অর্ধশতকসহ ৫৬৮ রান করে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক হিসেবে নিজের প্রতি নজর কেড়েছেন সবার। মিঠুন সেদিক থেকে বেশ পিছিয়ে ৯ ম্যাচে ৩৩৭ রান করে।
×